Mahfuzur Rahman Manik
প্রভাব-বলয়
জানুয়ারী 31, 2019

দার্শনিক ও লেখক রুশো বলেছেন, মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মায়; কিন্তু সর্বত্র সে শৃঙ্খলিত। এ শৃঙ্খল কত প্রকার ও কী কী তা জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রত্যেকে টের পায়। শিশু থাকতেই এটা ধরা যাবে না, ওটা করা যাবে না, ওর সঙ্গে মেশা যাবে না ইত্যাদি নানা বাধা। মানুষ যত বড় হয় তার শৃঙ্খলও বাড়ে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা শৃঙ্খল। বিশেষ করে জীবনের সিদ্ধান্তগুলো কেউ চাইলেই এককভাবে নিতে পারে না। সেখানে অন্যের প্রভাব থাকবেই। আপনি চাইছেন এ স্কুলে পড়তে আর অভিভাবকের পছন্দ অন্য স্কুল। আপনি পড়তে চান ইঞ্জিনিয়ারিং; বাসা থেকে বলছে, ডাক্তারি পড়তে হবে। এভাবেই আমরা সবাই জড়িয়ে পড়ি এক শৃঙ্খলে। যে শৃঙ্খল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাঙার নয়।

একজন রাষ্ট্রনায়কও কি একক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? তার চারপাশে যারা থাকেন, তারা তার মতকে প্রভাবিত করতে পারে। আবার দেশের মানুষও সিদ্ধান্তে প্রভাবক ভূমিকা পালন করতে পারে। দলের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান তো একক সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন না; কারণ অন্যের কথা তাকে শুনতে হয়। পরিবারের কর্তার সিদ্ধান্তে প্রভাব থাকে কর্ত্রীর, সন্তান-সন্ততির। আপনার জীবন-সংসার ভালো লাগছে না, সব ছেড়ে একদিকে পালিয়ে যেতে চান। কিন্তু তা এতটা সহজ নয়। প্রিয় মানুষগুলোর কথা আপনি কয়েকবার ভাববেন।

বলা বাহুল্য, প্রভাব-বলয় পরিবার, সমাজ, দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তৃত। মার্কিন প্রভাব, রাশিয়ান প্রভাব, চীনা প্রভাব, ভারতের প্রভাব-বলয়ের কথা আমরা জানি। একসময়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা দুই মেরুর বিশ্বে এখন বহু মেরুর প্রভাব। তবে বিশ্বায়নের এ যুগে মানুষের জীবনে ইন্টারনেট-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব অনেক। এখানে ফেসবুক প্রসঙ্গ আসবে। অনেকের কাছে ফেসবুক যেন দ্বিতীয় জীবন। যেখানে ঢুঁ না মারলে ভাত হজম হয় না। ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর দিক থেকে ঢাকার অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৭০ ভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারী ফেসবুকে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় দেয়। ফেসবুকের প্রভাব যেমন সমাজে পড়ছে, তেমনি পড়ছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও।

আসলে মানবজীবন, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ কিছুই প্রভাব-বলয়-শৃঙ্খলের ঊর্ধ্বে নয়। এ প্রভাবের সব খারাপ নয় আবার সব একচেটিয়া ভালোও নয়। বন্ধুর প্রভাবে বন্ধু যেমন ভালো হতে পারে, তেমনি বিপথেও যেতে পারে। মা-বাবা সর্বদাই সন্তানের ভালো চান বলেই নানা বাধা-নিষেধ আরোপ করেন। সেখানে অধিকাংশই সন্তানের ভালো হয় হয়তো; তবে দুয়েকটা হিতে বিপরীতও হতে পারে। ফেসবুক অনেকের সময় নিচ্ছে ঠিকই আবার অনেককেই তারকা বানিয়েছে। অনেকেই ভালো কাজে এটি ব্যবহার করছেন। পারিবারিক বন্ধনের কারণে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির দিকে তাকিয়েই মানুষকে জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়। এ প্রভাবক শক্তি সামাজিক শৃঙ্খলার জন্যও প্রয়োজন। তারপরও কোনো ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জন ভালো নয়। তা বোধ হয় বোঝা দরকার।

তবে হ্যাঁ প্রত্যেকেরই ব্যক্তিত্ব আছে, ভালো-মন্দ লাগার ব্যাপার আছে, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আছে- সেখানে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে কিংবা সে ব্যাপারে যতটা ছাড় দেওয়া যায়, তা চারপাশের মানুষগুলোই নিশ্চিত করবেন। এমন যেন না হয়, একজনের প্রভাবে আরেকজন ব্যক্তিত্বহীন হবেন। আরেকজন কী বলবে, কী মন্তব্য করবে, তা ভেবে আপনি প্রিয় কাজটি করতে পারলেন না, পছন্দের বিষয়-ছবি-স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিতে পারলেন না- সে আপনারই ব্যর্থতা। পাছে লোকে কত কথাই বলবে, তারা কেন আপনার কাজের প্রভাবক হবে? আপনার কাজ আপনি চালিয়ে যান।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119