চারপাশের অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে কোনো সংবাদ বা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহূত হয় মাইক। বাংলায় ব্যবহূত এ মাইক ইংরেজিতে লাউড-স্পিকার কিংবা সাউন্ড বক্সও হতে পারে। প্রচার-প্রচারণা, জরুরি নাগরিক বিজ্ঞপ্তি, মসজিদের আজান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহূত হয় মাইক। উচ্চস্বরের এ মাইকের মুখ যেদিকে থাকে, সাধারণত সেদিকে ভলিউম অনুযায়ী অনেক দূর পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছায়। এ যন্ত্রটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পরস্পরের উদ্দেশে বিশেষ প্রচারে ব্যবহূত হয়, যার ইতিহাসও দীর্ঘ। সোমবার নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, বিবিসিসহ বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংবাদমাধ্যমের অনলাইনে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়। বিবিসি লিখেছে, সাউথ কোরিয়া টার্নস অফ লাউড স্পিকার ব্রডকাস্টস ইনটু নর্থ। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে প্রচারিত লাউড-স্পিকার দক্ষিণ কোরিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, এ খবরের সঙ্গে লাউড-স্পিকারের যে ছবি দেওয়া আছে সেটি আর কিছু নয়, কতগুলো মাইক।
দুই কোরিয়ার এ মাইকযুদ্ধ বিশ্বে 'লাউড-স্পিকার প্রপাগান্ডা' নামে পরিচিত। ১৯৬৩ সাল থেকে চালু হওয়া এ মাইকযুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়া প্রচার করে সংবাদ, পপ মিউজিক, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও উত্তর কোরীয় শাসনের সমালোচনা। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া এসব প্রচারে বেশি আক্রমণাত্মক। তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সমালোচনা ছাড়াও পিয়ংইয়ংয়ের মিসাইল পরীক্ষার খরচ এবং সেখানকার উচ্চবিত্তের বিলাসী জীবনচিত্রও প্রচার করে।
উত্তর কোরিয়া এখন প্রচার বন্ধ রাখছে। কারণ শুক্রবার দুই কোরিয়ার নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে এক ঐতিহাসিক আলোচনা রয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় পর ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো বৈঠক করবেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। তাদের আলোচনা হবে দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী পানমুনজম গ্রামে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও দুই কোরিয়ার সম্পর্কোন্নয়নের ওপর এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে উত্তর কোরীয় নেতা কিম চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আর এ দুই নেতার আলোচনার পর মে মাসে কিমের সঙ্গে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক।
আলোচনার বিষয় যা-ই হোক কিংবা তারা কতটা ঐকমত্যে পৌঁছবেন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে এ আলোচনার আগেই উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ামুখী মাইক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিশ্চয় ইতিবাচক। এ পদক্ষেপের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সিদ্ধান্ত কী হবে, অর্থাৎ তারাও উত্তর কোরিয়ামুখী 'লাউড স্পিকার প্রপাগান্ডা' বন্ধ করবেন কি-না, তা দেখার বিষয়।
মাইকযুদ্ধ অভিনবই বটে। একে পারস্পরিক ঝগড়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। দুই পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়ালে পরস্পরকে যেমন নানা বাক্যবাণে ঘায়েল করেন, এটা তেমনই বলা যায়। যদিও এসব 'কাজিয়া' বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, কিন্তু এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, বছরের পর বছর দুই কোরিয়ার মধ্যে মাইকযুদ্ধ চলে আসছে। বলা প্রয়োজন, এর আগেও কয়েকবার এ সম্প্রচার বন্ধ করা হলেও তা স্থায়ী হয়নি। এবার দুই দেশের আলোচনার পরই হয়তো বোঝা যাবে কতদিন সম্প্রচার বন্ধ থাকবে। তবে আমরা চাই এটি স্থায়ী হোক। বিশ্বশান্তি নিশ্চয়ই সবার প্রত্যাশা।