Mahfuzur Rahman Manik
ইরানে বিক্ষোভের নেপথ্যে
জানুয়ারী 5, 2018

মূল : আহমাদ সাদরি

ইরানে চলমান বিক্ষোভের সূচনা ২০০৯ সালে, তেহরানের মধ্যবিত্তরা ছিল এর নেতৃত্বে। এখন সেখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে নিম্নবিত্ত ও প্রাদেশিক শহরের দরিদ্র প্রতিবেশী বেকাররা। সংকট গভীর হয়েছে ইরানে স্বৈরাচারী শাসনের ফলে। সেখানে সংস্কার আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে; কারণ, সাংবিধানিকভাবে সর্বোচ্চ নেতা সর্বাধিক ক্ষমতার অধিকারী। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও সংসদের সে ক্ষমতা নেই। ফলে প্রশাসনিক পদ্ধতি অস্বচ্ছই থাকছে। এসব বিষয় জনগণের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তবে ২০০৯ সালের বিক্ষোভ একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দক্ষ নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের দ্রুতই গ্রেফতার, নির্যাতন ও আটক করা হয়। রাস্তার আন্দোলন নির্দয়ভাবে দমন করা হয়।

আহমেদিনেজাদের দ্বিতীয় মেয়াদ প্রথম মেয়াদ থেকেও খারাপ ছিল। জাতিসংঘের অবরোধের ফলে অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে মানুষ হাসান রুহানিকে মধ্যপন্থি হিসেবে নির্বাচিত করে। তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মৌলিক কোনো সংস্কার বা উদারীকরণ হয়নি।
প্রথম মেয়াদে হাসান রুহানি মুদ্রাস্ম্ফীতি রোধ করেছিলেন। বেকারত্বও অনেকাংশে কমে আসে। ইতিমধ্যে ইরানের চিরবৈরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়। কিন্তু তার দ্বিতীয় মেয়াদ কাঙ্ক্ষিতভাবে শুরু হয়নি।
প্রথমত, রুহানি ডানপন্থিদের চাপে একটি রক্ষণশীল মন্ত্রিসভা গঠন করেন। হতাশ হয়ে আমরা যেন খাতামির দ্বিতীয় মেয়াদ দেখছিলাম। বিষয়টি আরও খারাপ হয়, যখন ট্রাম্পের আমেরিকা পরমাণু চুক্তির শর্ত ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে। ফলে একটি আশার আলো অঙ্কুরেই বিনাশ হলো।
হতাশার চূড়ান্ত মাত্রা দেখা গেল, যখন বড় বড় দুর্নীতি সামনে এলো। এরপর ডানপন্থিদের চাপে প্রেসিডেন্ট রুহানি পেট্রোলের ওপর কড়া কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিলেন। ফলে মানুষের ক্রোধ আরও বাড়তে থাকে এবং সেটি বিক্ষোভে রূপান্তরিত হয়। তবে মজার বিষয় হলো, বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে এক ডিমের দাম নিয়ে। বিক্ষোভকারীদের মূল অভিযোগ হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। ডিমের দাম এক সপ্তাহেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিক্ষোভ প্রথম ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে শুরু হয়। এরপর রাজধানী তেহরান, কেরমানশাহসহ বিভিন্ন শহরে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে তেহরানে বিক্ষোভের মাত্রা কিছুটা কম।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব ও চলমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ইত্যাদিই বলা চলে চলমান বিক্ষোভের আপাত কারণ। হঠাৎ এ আন্দোলনে ইন্ধন জোগানোর জন্য যদিও বহির্শত্রু, যেমন সৌদি-ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হচ্ছে। শাসনবিরোধী এসব আন্দোলন নতুন নয়। অবশ্য এ আন্দোলনের তাৎপর্য অবশ্যই রয়েছে।
যতদিন না ইরান এর সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়ের ক্ষমতা সংস্কার করছে, যতদিন না সেখানে গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে, ততদিন ইরানে এ রকম আন্দোলন, অসন্তোষ থাকবেই। সেটি ইরানে স্থায়ীভাবেই দেখা যাবে।
হ্যাঁ, একজন প্রজাহিতৈষী ভালো শাসকের নেতৃত্বেই এসব কার্যকর হতে পারে। ইরান ও তার সব দিকের প্রতিবেশীর জন্য ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ লর্ড অ্যকটনের কথা যথার্থ। তিনি বলেছেন, 'ক্ষমতা দুর্নীতিপ্রবণ করে, পরম ক্ষমতা চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে। মহৎ মানুষ প্রায় সবসময়ই খারাপ।'

ট্যাগঃ ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।