Mahfuzur Rahman Manik
ট্রাম্পের আইকিউ
অক্টোবর 12, 2017

ক্ষমতা গ্রহণের আগ থেকেই যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার আইকিউ বা বুদ্ধ্যঙ্ক নিয়ে অনেকের কৌতূহল থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এ নিয়ে অন্যের আগ্রহ যতটা না, তার চেয়ে ট্রাম্পের নিজের আগ্রহই বেশি দেখা যাচ্ছে। এখন ট্রাম্প নিজেই তার আইকিউর আলোচনা উস্কে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প গর্বভরে বলেন, তার আইকিউ তার প্রশাসনেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন থেকে বেশি। আইকিউ নিয়ে তার এ বড়ত্বের ঘোষণা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৩ সালে ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, তার আইকিউ বারাক ওবামা ও জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকেও বেশি। ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, তার আইকিউ আমেরিকান কমেডিয়ান জন স্টুয়ার্ট ও ব্রিটিশ বিজনেস ম্যাগনেট লর্ড সুগার থেকে বেশি।
গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনে 'ক্যান উই টেল ইফ ডোনাল্ড ট্রাম্প হ্যাজ অ্য হাই আইকিউ?' অর্থাৎ আমরা কি বলব ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চ আইকিউর অধিকারী? শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের আইকিউও আলোচনায় আসে। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাডিজের পরিচালক ড. বারবারা এ পেরি, ৪৪ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে একটি বিশেষ তালিকা থেকে ১৭ জনের নাম বলেন। যাদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও জিমি কার্টার রয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা আসতেই পেরি বলেন, তিনি টিলারসনকে চ্যালেঞ্জ করছেন, আসলে তিনি যদি তার আইকিউ স্কোর জানাতেন তাহলে আমরা বুঝতাম, সত্যিকারার্থেই তার আইকিউ কত উঁচু মানের। তাকে অপছন্দ করে অনেকেই বলেন, ট্রাম্প একটা গাধা কিংবা বোকা। সেটাও মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে ড. পেরির ভাষায়, ট্রাম্পের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, কান্ডজ্ঞান, দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতা নিল্ফম্নমানের। কিন্তু তার গণযোগাযোগ ও রাজনৈতিক দক্ষতা অসাধারণ। পেরি অবশ্য ট্রাম্পের ব্যবসায় দক্ষতার কথাও উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্পের আইকিউ যা-ই থাকুক তা নিয়ে প্রকাশ্যে আরেকজনের সঙ্গে তুলনার বিষয়টিকে অনেকেই হাস্যকর বলেছেন। তবে পেরি হয়তো ঠিকই ধরেছেন, রাজনৈতিক চালের দিক থেকে ট্রাম্পের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। টিলারসনকে ট্রাম্পের আইকিউ পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ তার বাইরে নয়। ট্রাম্পকে যখনই জুলাইয়ে পেন্টাগনের এক বৈঠক শেষে টিলারসনের তাকে 'বোকা' বলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, তখনই তিনি আইকিউর বিষয়টি অনেন, 'আমার মনে হয় এটা মিথ্যা সংবাদ। কিন্তু যদি তিনি (টিলারসন) এটা বলে থাকেন, তাহলে আইকিউ পরীক্ষার মাধ্যমেই আমাদের তুলনা হতে পারে। ওই পরীক্ষায় কে জিতবে, আমি তা আপনাদের বলতে পারি।'
বলা বাহুল্য, সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে টিলারসনের বিরোধের খবর সংবাদমাধ্যমে আসছিল। পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ ও সে সূত্রে টিলারসনের পদত্যাগের গুঞ্জনও আলোড়িত হচ্ছিল। ঠিক সে সময়ই টিলারসনের উদ্দেশে ট্রাম্পের আইকিউর এ চ্যালেঞ্জ। আইকিউ যখন ব্যক্তির বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচায়ক, তখন ট্রাম্প এ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হয়তো নিজেকেই রক্ষা করতে চাইছেন। বিশেষত যখন নিজের প্রশাসনেরই কেউ 'বোকা' বলে এবং জনসমক্ষে তা প্রকাশ হয়, তখন নিজেকে রক্ষার উপায় কী? রাজনৈতিক চাল হিসেবে কিংবা তাৎক্ষণিক জবাব হিসেবে বোদ্ধারা হয়তো ট্রাম্পের পক্ষেই কথা বলবেন। কিন্তু ঠিক আইকিউ পরীক্ষার কথা বলায় ট্রাম্পের আইকিউ নিয়েই যে প্রশ্ন উঠবে, তা হয়তো তিনি নিজেই অনুভব করছেন।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।