Mahfuzur Rahman Manik
ইয়াসিনের আলো
হারিকেনের আলো আর তুষ দিয়ে বাচ্চা ফুটান ইয়াসিন মিয়া

প্রাকৃতিক উপায়ে মুরগি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। সেখান থেকেই হয়তো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর যন্ত্র ইনকিউবেটরের আবিষ্কার। ব্যবসার জন্য একসঙ্গে অধিক পরিমাণে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরের বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ। কিন্তু যেখানে বিদ্যুৎ নেই কিংবা যাদের যন্ত্রটির কেনার সামর্থ্য নেই, তারা এটি ব্যবহার করতে পারছে না। তাদের এ অসুবিধা দূর করার তরিকা শিখিয়েছেন ইয়াসিন।
বিদ্যুতের চোখ ধাঁধানো আলো নয়, হারিকেনের টিমটিম আলোয় স্বপ্ন ধরা দিয়েছে ইয়াসিনের। দরিদ্রতার অন্ধকার থেকে স্বাবলম্বিতার আলোর সন্ধান পেয়েছেন তিনি। নেত্রকোনার মদনপুরের ইয়াসিন ১৪ মে সমকালের লোকালয়ে এসেছেন, 'হারিকেনের আলোয় ফুটছে হাঁসের বাচ্চা' শিরোনামে। প্রতিবেদনটি বলছে, হারিকেনের আলো ও তুষের মাধ্যমে তিনি হাঁসের বাচ্চা ফোটান। এ পদ্ধতিতে তিনি প্রতিদিন ৩-৪ হাজার হাঁসের বাচ্চা ফোটাচ্ছেন। এ বাচ্চা তার জেলা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারদের কাছে সরবরাহ করেন। এভাবে ইয়াসিন মিয়া কেবল নিজেই স্বাবলম্বী হননি, তার কাছ থেকে শিখে অনেকেই হারিকেনের আলোয় বাচ্ছা ফুটিয়ে দারিদ্র্য জয় করেছেন। এমনকি তার কাছ থেকে শিখছে প্রতিবেশী দেশও। ভারতের মেঘালয় ও নেপালে তিনি অতিথি হয়ে ৪-৫শ' হাঁস-খামারিকে এ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

আমরা বুঝতে পারি, অনেকদিন ধরেই ইয়াসিন মিয়া এ আলোর সন্ধান পেয়েছেন। হয়তো সংবাদমাধ্যমে তিনি সেভাবে আসেননি। এটি কেবল তার দারিদ্র্যজয় নয় বরং সমাজের দরিদ্রজয়ের আন্দোলন। গ্রামের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তার সীমাবদ্ধতা, সামর্থ্য ও পরিবেশ অনুযায়ী তিনি যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা অনন্য। ইনকিউবেটরের গ্রাম্য ও স্থানীয় সংস্করণ বলা যায়, ইয়াসিন মিয়ার হারিকেনের আলো আর তুষ দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর পদ্ধতি।
অনলাইনে খুঁজতে গিয়ে, হারিকেনের তাপ দিয়ে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর আরেকটি খবর পাওয়া গেল একটি জাতীয় দৈনিকে- সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায়। কয়েক বছর ধরে উৎপাদিত হচ্ছে হাঁসের ডিম, তারা এর নাম দিয়েছে হারিকেন হ্যাচারি। সেখানে ডিম সংগ্রহের পর সেগুলো পানিতে পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। এর পর বাছাই করা ডিম মাটি বা ইটের তৈরি পাকা ঘরের মধ্যে বাঁশের মাচায় সারিবদ্ধভাবে রেখে তোশক বা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। মাচার নিচে হারিকেন বসিয়ে পরিমাণমতো তাপ দেওয়া হয়। ২৫ দিন পর ডিমগুলো ফুটতে শুরু করলে কাপড়ের আবরণ তুলে নেওয়া হয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। প্রতিটি একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়। সে হ্যাচারি ও ইয়াসিন মিয়ার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের সংখ্যা একেবারে কম নয়। ছোট হলেও এসব উদ্ভাবন দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। এগুলো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও সহায়ক। যেমনটা এ ক্ষেত্রেও হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মতে, ইয়াসিন মিয়াকে অনুসরণ করে সে গ্রামে বর্তমানে ১৩০টি পরিবার এ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
দেশে চাহিদার তুলনায় হাঁসের বাচ্চার উৎপাদন কম। এ ক্ষেত্রে ইয়াসিন মিয়াদের উদ্ভাবন কাজে লাগবে নিঃসন্দেহে।

 

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।