Mahfuzur Rahman Manik
অভিবাসী যখন বিশ্বগ্রামের সদস্য
ডিসেম্বর 18, 2016
অভিবাসী দিবসের পোস্টার
অভিবাসী দিবসের পোস্টার

উন্নত জীবন ও কর্মসংস্থানের আশায় মানুষ দুনিয়ার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অভিবাসী হিসেবে পাড়ি দেয়। শরণার্থী হিসেবেও অনেকে অন্যত্র যায়, নানা কারণে অন্য দেশে আশ্রয় চায় মানুষ। অভিবাসনের বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। মানুষ কখনও এক জায়গায় বসে থাকেনি। মানুষের পৃথিবী জয় এভাবেই হয়েছে। তবে আজ এমন সময়ে বিশ্ব আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন করছে, যখন প্রতিবেশী মিয়ানমারে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা, সাগরে ভাসছে তাদের নৌকা; যখন সিরিয়ায় চলছে যুদ্ধ, সেখানকার সাধারণ মানুষ আশ্রয় খুঁজছে; যখন আফ্রিকার লাখো মানুষ ইউরোপে কাজ খুঁজছে। আবার এটাও জানা আছে যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ এখন বিদেশে বাস করছেন। তারা প্রবাসে থেকে কষ্ট করে কাজ করে দেশের জন্য টাকা পাঠান।
শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করলেও, কাজ করছেন আসলে দেশের জন্য। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের উপকার হচ্ছে। এ জন্যই এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য করা হয়েছে, 'উন্নয়নের মহাসড়কে, অভিবাসীরা সবার আগে।' প্রবাসীরা বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠাচ্ছে। তাদের রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই এখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
অভিবাসীদের দ্বারা দেশ উপকৃত হচ্ছে। তাদের স্বার্থ দেখাও দেশেরই কাজ। নানা দেশে নানাভাবে শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। অনেকে বিদেশে কাজ করেও পারিশ্রমিক না নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে। এমন সমস্যায় প্রশাসন তাদের পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় অভিবাসন ও উন্নয়ন সংগঠন গ্গ্নোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) নবম সম্মেলন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথিদের অংশগ্রহণে অভিবাসী ও শরণার্থীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ঐকমত্য এবং এ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে সম্মেলনটি শেষ হয়।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ বরাবরই বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। সেখানে নিপীড়ন বন্ধ ও বাস্তুচ্যুত মানুষের আবাসনের জন্য জাতিসংঘ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। অভিবাসী দিবসে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আমাদের প্রত্যাশা। এ ছাড়াও বিশ্বের যেখানেই মানুষ জোর করে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, শরণার্থী হতে বাধ্য হচ্ছে সেখানেই বিশ্ব সম্প্রদায়ের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব তার বাণীতে সে কথাই বলেছেন, প্রত্যেক অভিবাসী-শরণার্থীই মানুষ। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই মানবিক অধিকার রয়েছে। সে অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।
বিশ্বায়নের এ সময়ে বিশ্বপরিবারের সদস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ। আজ কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে, কোথাও কেউ নির্যাতিত হলে সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও সে খবর পেয়ে যায়। ফলে বিশ্বের কোনো এক কোণের মাথা ব্যথা অন্যেরও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা স্বাভাবিক। সবার শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অভিবাসী-শরণার্থী আসবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রত্যেক অভিবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আমাদের প্রবাসীদের নিয়েও ভাবনা কমবে। মা-বোন-পরিবার-পরিজন ছাড়া যারা বিদেশে আছেন তাদের নিয়ে আপনজনের চিন্তা কমুক এটাই দিবসটির সার্থকতা।

 

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।