Mahfuzur Rahman Manik
ভাইরাল ভিডিও, সমান্তরাল পদক্ষেপ

SSC-examঢাকায় যখন 'অ্যাই এম জিপিএ ৫' ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভারতের বিহারে ততক্ষণে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশও হয়ে গেছে। ধরন হিসেবে ঘটনা দুটি হয়তো একই রকম। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল হয়েছে কয়েকদিন আগে। সে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনকারীকে টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকরা নানা প্রশ্ন করেন। তার উত্তরে 'লজ্জায়' পড়ার কথা লিখেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়- রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কী পড়ানো হয়। তার উত্তর ছিল, এতে রান্নাবান্না পড়ানো হয়। শিক্ষার্থী পরীক্ষায় মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৪৪ পেয়েছেন। অথচ এ পরীক্ষার্থী মোট নম্বর ৫০০ না বলে বলছেন ৬০০। পলিটিক্যাল সায়েন্সকে বলেছেন প্রডিগ্যাল সায়েন্স। এমনকি ওই পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ সংক্রান্ত ভিডিওটি সেখানকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। টনক নড়ে কর্তৃৃপক্ষের। বোর্ড সব বিভাগের শীর্ষ ১৪ জনকে আবার পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। বলা বাহুল্য বিহারের শিক্ষার মান ও নকলপ্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন অনেক দিনের। গত বছর সেখানে পরীক্ষা কেন্দ্রে জানালা দিয়ে উঠে নকল সরবরাহের এক ঐতিহাসিক ছবি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এবার আলোচিত মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা দু'জনই বিহারের ভগবানপুর বিশুন রায় কলেজের শিক্ষার্থী। কলেজটির বিরুদ্ধে গত বছরও ব্যাপক অভিযোগ ওঠে, এমনকি তখনকার শিক্ষামন্ত্রী সে সময় কলেজের ফল প্রকাশ বন্ধ রেখেছিলেন।
ঢাকার 'অ্যাই এম অ্যা জিপিএ ৫' শিরোনামের ভিডিও নিয়ে ক'দিন বিশেষত ফেসবুকে মাতামাতির পর এখন সবাই নীরব। ভিডিওটি অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে শেয়ার করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মতামত দিয়েছেন। অধিকাংশই বলা চলে শিক্ষা নিয়ে হতাশার কথা বলেছেন। কারণ তাতে দেখা গেছে, জিপিএ ৫ তথা সর্বোচ্চ ফলধারী হয়েও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, এসএসসির পূর্ণরূপ ইত্যাদি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবে দিতে পারেনি। ঢাকার এক বেসরকারি টেলিভিশনে তা প্রচারিত হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার মান নিয়ে অধিকাংশই প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ অবশ্য সাংবাদিকের ওপর ক্ষুব্ধও হয়েছেন। কেউ বলেছেন, এটা সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র নয়। কারও মতে, এসব প্রশ্ন কেবলই জ্ঞানমূলক। শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ে যা অসম্পূর্ণ বিষয়। আর উভয় ঘটনাকে অবশ্য অনেকে 'স্টিং অপারেশন' বলে অভিহিত করেছেন। এ অপারেশনের মাধ্যমে ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে অপরাধী করে তাকে ধরে ফেলা হয়। সাংবাদিকতা ও অন্য ক্ষেত্রেও এটি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তাছাড়া অনেক সময় টেলিভিশনের মাইক্রোফোন-ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক সাধারণ বিষয় ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটিও আলোচনায় এসেছে। এটা হয়তো অস্বীকার করা যাবে না, আমাদের শিক্ষার মান কমছে। কমছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মানও। এটাও ঠিক, জিপিএ ৫ পাওয়া সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না।
বিহার এবং ঢাকায়- উভয় ঘটনায় দেখাচ্ছে, এখন সহজেই সবকিছু মানুষের সামনে চলে আসছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের কারণে এটি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষত ফেসবুকের কারণে তা দেখা যাচ্ছে। এর পক্ষে যেমন মত রয়েছে, তেমনি বিপক্ষে রয়েছেন অনেকে। তবে বিহারের ঘটনায় সবচেয়ে বড় শিক্ষার বিষয় এটাই যে, সেখানকার কর্তৃপক্ষ খবর ও ভিডিও দেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। যখনই কোনো বিষয় কোনোভাবে কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে তখনি তার ব্যবস্থা গ্রহণ নিঃসন্দেহে কল্যাণকর। বিহারের শিক্ষা প্রশাসন তাতে কার্পণ্য করেনি। আমরা দেখতে চাই, কেবল জিপিএ ৫ বাড়ানো নয় বরং একই সঙ্গে শিক্ষার মান বাড়াতেও আমাদের প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিক।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।