Mahfuzur Rahman Manik
পারিবারিক শিক্ষা ও বন্ধন
familyকাজে গেলে মেয়েটি অপেক্ষা করে কখন আসবে বাবা, ছেলের ভাবনায়ও বাবা, স্ত্রীও হয়তো প্রিয় স্বামীর পথপানে চেয়ে থাকেন। বাবাকে নিয়ে এই উৎকণ্ঠা কেবল পরিবারেই সম্ভব। ছেলে পড়তে যাবে, মা যতক্ষণ চোখ যায় তাকিয়ে থাকেন। ছেলে অদৃশ্য হয়ে গেলে হয়তো শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন। বাবা এগিয়ে দিয়ে আসেন। যানবাহনে উঠিয়ে দেন। খেয়ে না খেয়ে রোজগারের টাকা ছেলের হাতে তুলে দেন। ছেলে পড়তে যায়, বাবা বারবার পেছনে তাকান। এটাই তো পরিবারের দৃশ্য। মেয়ে বড় হয়েছে। পছন্দমতো পাত্র খুঁজে পাত্রস্থ করবেন, তারপরও মায়ের বিলাপ, বাবার কান্না, ভাইবোনের অশ্রু। এমন আদর, সোহাগ, মমতা, ভালোবাসা কেবল পরিবারেই সম্ভব। সন্তানের অসুস্থতায় বাবা-মা উৎকণ্ঠায় থাকেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে সন্তানকে বাঁচাতে চান। এই যে রক্তের, হৃদয়ের বন্ধন তা একমাত্র পরিবারই দিয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার এই সম্পর্ক প্রতিদিন প্রতিক্ষণের। একদিনের পরিবার দিবসে তাতে কিছু আসে যায় না। তার পরও জাতিসংঘ ঘোষিত আজকের আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নই বোধ হয় যথার্থ।

অবশ্য পরিবার যে কেবল পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততিদের কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে তা নয়। বরং সমাজের অংশ হিসেবে আত্মীয়-স্বজন ও বৃহত্তর প্রতিবেশী নিয়েও পরিবার হয়। পরিবারের সদস্য প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে সম্পর্কিত, প্রত্যেকে নানাভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বাবাই সাধারণত এখানকার পরিবারের প্রধান ব্যক্তি। সন্তানের সার্বিক ও আর্থিক দিক বাবা দেখেন। তবে মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা বলা চলে মা-ই করেন। সন্তানকে সুশিক্ষিত, সুন্দরভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব মা-বাবা উভয়েরই। যে সন্তান পারিবারিকভাবে ভালো শিক্ষা পাবে তার দ্বারা অন্যায়, অসামাজিক কাজ হওয়া অসম্ভব। যে ছেলে পরিবারের, মায়ের কাজে সাহায্য করবে সে ছেলের দ্বারা রাস্তাঘাটে ইভ টিজিংয়ের মতো কাজ হতে পারে না। পরিবারই প্রত্যেককে একটা ভালো দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে।
আজকে সামাজিক নানা অনাচারের মূলে দেখলে হয়তো আমরা পরিবারকেই দেখব। যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ-বিবাদ রয়েছে, সেখানে তার প্রভাব সন্তানদের ওপর পড়াই স্বাভাবিক। পরিবার থেকে সন্তানরা যেমন শিষ্টাচার শিখবে, তেমনি শৃঙ্খলাও শিখবে। ছেলেমেয়েরা অনেক সময় মা-বাবার কথা শোনে না, সেখানেও পরস্পরের সম্পর্ক মূল্যায়ন করা দরকার। বলাবাহুল্য, সবক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম রয়েছে।
family-photoজাতিসংঘ অবশ্য এ বছর দিবসটিতে স্বাস্থ্যকর জীবন ও টেকসই ভবিষ্যতের কথা বলছে। তাই এবারের প্রতিপাদ্য- 'ফ্যামিলিজ, হেলদি লাইভস অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফিউচার'। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি গৃহীত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব এ বছর দিবসটি উপলক্ষে তার বাণীতে সহিংসতাসহ বর্তমান বিশ্বের নানা সমস্যার কথা বলেছেন। যেগুলো সমাধানে তিনি পরিবারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। একই সঙ্গে পরিবেশসহ নানা বিষয়ও পরিবারের সঙ্গে জড়িত। আমাদের টেকসই উন্নয়নের জন্য পারিবারিক সচেতনতাও জরুরি। তাই সুন্দর পৃথিবী গড়তে পরিবারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
পরিবার যখন সমাজেরই অংশ তখন প্রত্যেকটি পরিবার সচেতন হলে, পারিবারিকভাবে সুন্দর পরিবেশে সবাই গড়ে উঠলে ভালো সমাজ উপহার দেওয়া অসম্ভব নয়। আমাদের প্রতিটি পরিবার ভালো পরিবার হিসেবে গড়ে উঠুক, প্রত্যেকের বন্ধন সুদৃঢ় হোক। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তা নিশ্চয়ই কাজে দেবে।

 

ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।