Mahfuzur Rahman Manik
শতাব্দীর প্রশ্ন ও মন্ত্রীর জবাব
মার্চ 15, 2016
Shatabdi-Bus-Obaidul-qader
স্কুলে যাওয়ার বাস পেলেন শতাব্দী

শতাব্দী জায়গামতোই প্রশ্নটি করেছিল। শনিবার শতাব্দীর সে প্রশ্ন সংবাদমাধ্যম ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রোববার সমকালসহ অন্যান্য সংবাদপত্রের মাধ্যমে তা অন্যদের কাছেও পেঁৗছে যাওয়ার কথা। 'মিনিস্টার, আই হ্যাভ এ কোয়েশ্চেন'-এর মাধ্যমে শতাব্দী কেবল তার প্রশ্নটিই তুলে ধরেনি বরং ভোগান্তির শিকার আরও অনেকের কথাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে তুলে ধরেছে।
ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শামসুন নাহার শতাব্দীর ক্ষোভ হয়তো অনেক দিনের; হয়তো এ দিনটির জন্যই সে অপেক্ষা করেছিল। শনিবার দুপুরে স্কুল শেষে শতাব্দী যখন বাস না পেয়ে হাঁটছিল তখনি মন্ত্রীর সঙ্গে তার আচমকা সাক্ষাৎ। মন্ত্রী তখন মিটার ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। শতাব্দী হয়তো ভেবেছিল এটাই মোক্ষম সুযোগ। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাই মন্ত্রীকে ইংরেজিতে জানাল, তারও একটা প্রশ্ন আছে।

স্কুল ড্রেস পরা থাকলেও মন্ত্রী তাকে ইংরেজিতেই জিজ্ঞেস করেন, সে সাংবাদিক কি-না, তার প্রশ্নটিই-বা কী। শতাব্দী ভড়কে যায়নি। সাহসিকতার সঙ্গেই তার শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে নিজের আর্জি জানায়। কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে শেওড়া বাসস্ট্যান্ড দিয়ে তাকে স্কুলে আসতে হয়। কিন্তু সকালে স্কুলে আসার সময় কিংবা স্কুল ছুটির পর বাসায় ফেরার সময় সে সহজে বাসে উঠতে পারে না। বাসগুলো 'মহিলা সিট নেই' বলে উঠতে দেয় না। তখন মন্ত্রী জানান, বিআরটিসির নারীদের আলাদা বাস আছে। এরপর থেকে স্কুলে আসার সময় সে বাস পাবে। মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেয় শতাব্দী। শনিবারের ঘটনা এখানেই শেষ। রোববার শতাব্দীর স্কুলের সময়ে ভোর ৬টায় ঠিকই বিআরটিসির বাস তার জন্য শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল, সে খবর ও ছবির ইতিমধ্যেই সবাই দেখেছেন। মন্ত্রী মহোদয় কথা রেখেছেন। তার চেয়ে বড় বিষয়, শতাব্দীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নিজের প্রয়োজনের কথা জানিয়েছে। অল্প সময়ে তা বাস্তবায়নও হয়ে গেছে, সেটা নিঃসন্দেহে ভালো উদাহরণ।
আসলে ঢাকা শহরে চলতে-ফিরতে প্রতিনিয়ত নাগরিকদের পরিবহন সমস্যায় পড়তে হয়। প্রয়োজনের সময় পরিবহন পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও ওঠা যায় না, ঝুঁকি নিয়ে ওঠা- এগুলোই বাস্তবতা। তারপর যানজট তো আছেই। তাছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে ভোগান্তি আরও বেশি। শতাব্দীর মতো স্কুলে যাওয়ার জন্য, কাজের জন্য তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয়। সাধারণ বাসগুলোতে তাদের ওঠার মতো পরিবেশ নেই। অনেক বাসে নারীদের জন্য যে সিট রাখা হয় তা একদিকে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, অন্যদিকে সেগুলো ইঞ্জিনের কাছে; স্বাভাবিকভাবে সেগুলোতে বসাও কষ্টকর। সমাধান হিসেবে নামে রাজধানীতে নারীদের আলাদা বিআরটিসির বাস রয়েছে, কাজে তার দেখা মেলে না বললেই চলে। বিশেষ করে স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য ২০১১ সালে চালু হয়েছিল স্কুল বাস সার্ভিস। প্রাথমিকভাবে আজিমপুর থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত সে বাস সার্ভিস চালু হয়। আশা করা হয়েছিল ধীরে ধীরে অন্য রুটেও স্কুলবাস চালু হবে। কিন্তু মাত্র তিন মাস স্কুলবাস সার্ভিস ঠিকমতো চলেছিল। অন্য রুটে সে বাস সার্ভিস চালু করা দূরে থাক, নানা অব্যবস্থাপনায় ধীরে ধীরে ওই রুটের বাসও বন্ধ হয়ে যায়।
এখন আবার ভাবছি আমরা। রোববারই এক অনুষ্ঠানে বিত্তবানদের স্কুল বাস সার্ভিসে অনুদান দিতে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী মহোদয়ও বলেছেন, শতাব্দীদের জন্য আরও বাস বাড়াবেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের ভাবনা ইতিবাচক। আমরা এ সমস্যার কার্যকর সমাধান চাই। শতাব্দীর কারণেই অন্তত বিষয়টি সামনে এসেছে। তার সাহসিকতা ও উদ্যম সাধুবাদযোগ্য। সাবাস শতাব্দী।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।