Mahfuzur Rahman Manik
রূপান্তরিত ইন্ডিপেনডেন্ট
মার্চ 29, 2016
Independent-uk
ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের সর্বশেষ প্রকাশিত ছাপা পত্রিকা

পাঠকের দরজায় ব্রিটেনের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের সর্বশেষ ছাপা সংস্করণ হাজির হয় শনিবার। ৩০ বছরের এ দৈনিকটির অবশ্য মৃত্যু হয়নি, তার স্বত্বাধিকারীর ভাষায়, রূপান্তর ঘটেছে; প্রিন্ট থেকে অনলাইনে এসেছে। ২০০৮ সাল থেকে এর অনলাইন সংস্করণ চালু হওয়ার পর থেকে দুটি মাধ্যমেই এটি প্রকাশিত হয়ে আসছে। এখন ছাপা সংস্করণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেবল অনলাইনেই পাওয়া যাবে পত্রিকাটি। ১৯৮৬ সালে ৭ অক্টোবর ব্রডশিট কাগজে প্রথম ছাপা সংস্করণ প্রকাশ হয় দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। যার ডাকনাম ইন্ডি। ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফের তিন সাংবাদিক চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রকাশ করে ইন্ডি। অল্প সময়ে এটি বেশ ভালোই জনপ্রিয়তা পায়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রচারসংখ্যা ব্যাপক হ্রাস পায়। উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, ২০১৫ সালের জুন মাসে ইন্ডির সার্কুলেশন ৫৮ হাজারের নিচে নেমে আসে। অথচ ১৯৯০ সালে তা ছিল চার লাখ।
ছাপা সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা অনেক দিনের। ইন্টারনেটের ব্যাপকতায় শঙ্কাও বাড়ছে। যখন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ব্যাপকতা বাড়ছে; যখন ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক খবরটি পেয়ে যাচ্ছে; যখন একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক খবর ও ছবি টিভি চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে; যখন সংবাদের বিকল্প উৎস হিসেবে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দাঁড়িয়ে গেছে এবং জনপ্রিয় হয়েছে, তখন একই খবর পাওয়ার জন্য পাঠক পরদিন বাসি সংবাদ কিনতে কতটা আগ্রহী হবেন? শঙ্কা হয়তো সে প্রশ্ন থেকেই। অবশ্য কারণগুলো আরও স্পষ্ট_ যখন সংবাদপত্রগুলো অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করছে। পাঠক সহজে ইন্টারনেটে প্রবেশ করে একই সঙ্গে সব পত্রিকা বলা চলে বিনামূল্যে পড়তে পারছে, তখন তার পত্রিকা কেনার প্রয়োজন পড়ছে না। উন্নত বিশ্বে ইন্টারনেটের প্রসার ব্যাপক হয়েছে, ফলে সেখানে ছাপা পত্রিকার সার্কুলেশন সংখ্যাও সেভাবে কমেছে। এমনকি ইতিমধ্যে অনেক পত্রিকা বন্ধও হয়ে গেছে।

এই সময়ে অবশ্য আমাদের বোধ হয় কিছুটা হলেও স্বস্তির কারণ রয়েছে। প্রতিবেশী ভারত যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সেখানে সংবাদপত্রের গ্রাহক কমছে না বরং বাড়ছে। এমনকি চীনের চিত্রও নাকি একই রকম। ভারতে দিন দিন সাক্ষরতার হার বাড়ছে, পাঠক সংখ্যাও বাড়ছে। পাঠক বাড়লে সংবাদপত্রেরও লাভ। পড়তে পারা মানুষ পত্রিকা কিনবে। পত্রিকার সার্কুলেশন বাড়বে। বাংলাদেশের চিত্রও ভিন্ন নয়। আমাদেরও সাক্ষর মানুষ বাড়ছে। পত্রিকারও সামগ্রিক জনপ্রিয়তা বাড়ছে। হয়তো কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা বাড়ছে, আবার কোনোটার কমছে। কিন্তু সার্বিকভাবে দেশে সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা ঠিকই রয়েছে। যদিও প্রযুক্তির কারণে পাঠাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। তার পরও মানুষ পত্রিকা পড়ছে। হাতে পত্রিকা নিয়ে পড়ার যে আমেজ তা অনলাইনে পাওয়া যায় না।

রূপান্তরিত ডিজিটাল মিডিয়া
রূপান্তরিত ডিজিটাল মিডিয়া

অবশ্য ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা এখানেও থেকে যাচ্ছে। ফলে আমরা ইন্ডির মালিকের মতোই বলতে পারি পত্রিকার রূপান্তর ঘটছে। সে রূপান্তরেরই উদাহরণ পত্রিকাটি। এর আগেও যখন ছাপা সংবাদপত্র বন্ধ হয়েছে, তখন এটি অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরং সংবাদপত্রের রূপান্তর। দেশেও কি রূপান্তরের প্রস্তুতি আমরা দেখছি না? যখন দেখা যাচ্ছে প্রায় সব সংবাদপত্র অনলাইন সংস্করণে জোর দিচ্ছে, অনলাইন সংস্করণেও পাঠক তৈরি করছে, তখন তা বলাই যায়।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।