Mahfuzur Rahman Manik
পাহাড়ে ধূলিঝড়
মার্চ 31, 2016
Kathmandu
কাঠমান্ডুতে হঠাৎই ধূলিঝড়ের আবির্ভাব

ধূলিঝড়ের অভিজ্ঞতা অনেকের থাকার কথা নয়। নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুরের বাংলাদেশে মরু অঞ্চলের মতো ধূলিঝড় হয় না। প্রবাসে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যারা থাকেন, তাদের সে অভিজ্ঞতা হতে পারে। বই পড়ে কিংবা সংবাদমাধ্যমের কল্যাণেও অনেকে জানতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমেও যে কেউ দেখতে পারেন। প্রচণ্ড বেগের বাতাসে কীভাবে ধূলি ওড়ে; ঘূর্ণিঝড়ের মতো ধূলিঝড় কীভাবে দিনকে রাতের অন্ধকারে পরিণত করে; কীভাবে পথিক ধূলিঝড়ের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করেন; অপ্রতিরোধ্য ধূলিঝড়ে কীভাবে মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়। ধূলিঝড়ের খবর হিসেবে কাঠমান্ডু আমাদের সামনে এসেছে। প্রতিবেশী নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সোমবারের ধূলিঝড়ের প্রভাব ঢাকায় এসে পেঁৗছেনি হয়তো; কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে খবরটি গুরুত্ববহ। কাঠমান্ডুর পত্রিকা লিখেছে, সেদিন বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এ ঝড় ওঠে। ৪৫ মিনিটের ধূলিঝড়ে গোটা এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। মানুষ রাস্তার মাঝখানে যানবাহন থামিয়ে দেয়। হাজার হাজার গণপরিবহন রাস্তায় আটকা পড়ে। সেখানকার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বিমানের রানওয়ের ধুলা পরিষ্কার করার পর তা খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম দিক থেকে ওঠা এ ধূলিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮২ কিলোমিটার। ধূলিঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ার দৃশ্যও দেখা গেছে।
সাধারণত শুষ্ক বা আধা-শুষ্ক ও অনুর্বর অঞ্চলে ধূলিঝড় ওঠে। এ ঝড়ে বাতাসের প্রচণ্ড গতির সঙ্গে ধূলিকণা আলগা হয়ে উড়তে থাকে। এভাবে এক জায়গার মাটি আরেক জায়গায় গিয়ে পড়ে। বিশেষত উত্তর আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপে ধূলিঝড় বেশি দেখা যায়। তাছাড়া ইরান, পাকিস্তান, ভারত, চীনেও ধূলিঝড় হয়। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায়ই এর খবর পাওয়া যায়। মরুভূমিতে ধূলিঝড়ের প্রকোপ দেখা যায়। সাহারা মরুভূমি তার অন্যতম উদাহরণ। গত বছর প্রচণ্ড এক ঘূর্ণিঝড়ে ভারতের রাজস্থানে ১৭ জনের প্রাণহানির খবরও বড় ঘটনা। ধূলিঝড় হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝড়ের কারণে রেল, সড়ক ও আকাশপথে যান চলাচল ব্যাহত হয়। মানুষের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাইরে থাকলে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাতাসের ধূলিকণার উপস্থিতিতে এ সমস্যা হয়। ধূলিঝড়কবলিত এলাকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। একসঙ্গে শত শত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।
ধূলিঝড়ের সঙ্গে পরিচয় কম থাকলেও আমাদের কাছে ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ব্যাপক পরিচিত। এদের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমরা। বিভিন্ন সময়ে দেশের ওপর দিয়ে সিডর, আইলাসহ নানা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। প্রায় প্রতিবছরই বৈশাখে কালবৈশাখী দেখা যায়। এবারের বৈশাখ আসার বেশি দেরি নেই। ইতিমধ্যেই নগরীতে কয়েকবার শিলাবৃষ্টি হয়ে গেছে। চৈত্রের এই সময়ে যখন রোদের প্রকোপ, কৃষকের জমিতে যখন ফাটল ধরে, প্রকৃতি যখন হাহাকার করে, তখনই হাজির হয় বৈশাখ। বৈশাখে স্বাভাবিক বৃষ্টি জীবনে প্রাণচাঞ্চল্যতা আনে। কিন্তু যখনই তা কাল হয়ে দাঁড়ায়, কালবৈশাখী হয়ে হাজির হয়; দুর্ভোগ দেখা দেয়।
কাঠমান্ডুতে হঠাৎই এ ধূলিঝড়ের আবির্ভাব। সেখানকার মানুষের জন্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। আরবের সাইমুম আর আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার ধূলিঝড় যখন প্রতিবেশী কাঠমান্ডুতে হাজির, তখন ঢাকায়ও এর উপস্থিত হওয়াটা আশ্চর্যের ব্যাপার হবে না নিশ্চয়ই।

 

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।