Mahfuzur Rahman Manik
অভিবাসীদের আচরণ গেলানো!
জানুয়ারী 23, 2016
finland-migrants
গত বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে। ফিনল্যান্ডে গেছে ৩২ হাজারেরও বেশি

শিক্ষা মানে আচরণের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। শিক্ষিত ব্যক্তি মার্জিত ও বাঞ্ছিত আচরণের অধিকারী। কোথায় কী করতে হবে, বলতে হবে, কীভাবে চলতে হবে, ব্যক্তি সে কাণ্ডজ্ঞান শিক্ষার বদৌলতে অর্জন করেন। তারপরও কথা থাকে। মানুষ যে সমাজে বাস করে সেখানকার আচরণ এক রকম; অন্য দেশের আচরণ-মূল্যবোধ আবার আরেক রকম। আরেক সমাজে গেলে সে অনুযায়ী তাকে চলতে হয়। এখানে অনেকের ভুল হওয়া স্বাভাবিক। ফিনল্যান্ড হয়তো এ জন্যই অভিবাসীদের 'আচরণ' শেখাচ্ছে। শুক্রবার বিবিসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত 'টিচিং মাইগ্র্যান্টস হাউ টু বিহেভ' প্রতিবেদন সে কথাই বলছে।
মানুষ নানা কারণে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা, এক দেশ থেকে আরেক দেশ, এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে যায়। গতিশীল মানুষ যেমন ভ্রমণপ্রিয় তেমনি নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভে আগ্রহী। কাজের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য খোঁজেন অনেকে। ঘুরে বেড়ান দেশে-বিদেশে। কাজ, পড়াশোনা, ভ্রমণ ইত্যাদির বাইরেও মানুষ বাধ্য হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে অন্য দেশে যান। শরণার্থী ও অভিবাসী সমস্যা তাই বিশ্বের অন্যতম সমস্যা। বিশেষত যুদ্ধ, সংঘাত ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার নাগরিকরা শরণার্থী হচ্ছে। তারা নৌকায় সাগর পাড়ি দিচ্ছে। বিভিন্ন ঝুঁঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে। ফিনল্যান্ডে গেছে ৩২ হাজারেরও বেশি। কিন্তু তারা গোল বাধাচ্ছে। তাই এখন ফিনল্যান্ডের সরকার রিসিপশন সেন্টার খুলে অভিবাসীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়; আচরণ শিক্ষা। সেখানে নাকি সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধ বিশেষ করে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু এ অভিযোগ করা কতটা যথার্থ_ অভিবাসীদের কারণেই অপরাধ বাড়ছে? জার্মানির কোলনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতনের ঘটনায় অনেকেই অভিবাসীদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। এটা হয়তো ঠিক, এদের কেউ কেউ অপরাধ করতে পারে। তাই বলে অপরাধের জন্য অভিবাসীরাই দায়ী_ তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। যত দোষ সব অভিবাসীর_ এ প্রবণতা ভয়ঙ্কর।
তারপরও অপরাধের ক্ষেত্রে অন্য দেশ থেকে আগতরা সাবধান থাকবেন, তা প্রত্যাশিত। বিশেষ করে ইউরোপের খোলামেলা সমাজে নারীর প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত, তা সবারই জানা দরকার। বিবিসির প্রতিবেদনে ফিনল্যান্ডের এ রকম এক অভিবাসী শিখন কেন্দ্রের কথা এসেছে। সেখানে তারা আসলে নারীর প্রতি আচরণই প্রধানত শেখাচ্ছেন। শিক্ষক জোহান্না শিক্ষার্থীদের বলছেন, 'এখানে নারী-পুরুষ সবাই সমান। আপনি কোনো নারীর সঙ্গে হয়তো ডিসকোতে যেতে পারবেন। এমনকি মনে রাখবেন, সে যদি ছোট স্কার্ট পরিহিত হয়, আপনার সঙ্গে খুব আন্তরিকভাবে নাচেও অংশ নেয়। তার মানে এই নয়, সে আপনাকে বিছানায় চাইছে।'
প্রত্যেক দেশ এভাবে চাইলে অভিবাসীদের সমাজের মৌলিক বিষয়গুলো শিখনে শিক্ষার ব্যবস্থা করতেই পারেন। তা ভালো ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে। এমনকি শরণার্থী ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনে যারা যে দেশে যান তাদেরকে যাওয়ার আগেই নিজ দেশ থেকে সে ধারণা দেওয়া যেতে পারে। বলা বাহুল্য, আমাদেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিদেশে থাকেন। সরকারের হিসাবে প্রবাসীর সংখ্যা ৯০ লাখ। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশে অপরাধ করলে তা দেশেরই বদনাম। ফলে বিষয়টায় আমাদেরও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
তবে এটা ঠিক, সর্বজনীন মূল্যবোধ দুনিয়ার সর্বত্র একই রকম। সত্যিকার শিক্ষিত হলে তার জন্য আলাদা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। তারপরও ফিনল্যান্ডের দৃষ্টান্ত অনুকরণীয়। বলা তো যায় না...।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।