Mahfuzur Rahman Manik
জন্মদিনের শুভেচ্ছা!
জানুয়ারি 11, 2016

flower-birthdayখ্যাতিমান কিংবা নিকটজন ছাড়া অন্যদের জন্মদিনের খবর মানুষ সাধারণত রাখে না। সংবাদমাধ্যমসহ নানাভাবে তাদের জন্মতারিখ জানা সম্ভব। এর বাইরে অন্যদের জন্মদিনের বিষয়টি জানা ততটা সহজ নয়। অবশ্য এখনকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেটা সহজ করেছে। বিশেষত ফেসবুকের কল্যাণে এখন সহজেই একজন আরেকজনের জন্মতারিখ জেনে নিতে পারছেন। সে সূত্র ধরেই লেখাটির অবতারণা। নতুন বছরের ১১তম দিন চলছে। এ বছরের শুরুর দিন এবং গত বছরের শেষ দিনে যারা ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন তাদের হয়তো অনেকেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে, আপনার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্ধুর জন্মদিন ছিল এ দুটি দিনে। হয়তো ফেসবুকে লেখা আপনার জন্মদিনটিও এ দু'দিনের একদিনেই পড়েছে। দেখা গেছে, এ দু'দিনের মধ্যে বছরের প্রথম দিনেই বেশিসংখ্যক মানুষের জন্মদিন। বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে প্রথম দিনে অস্বাভাবিক সংখ্যক মানুষের জন্মদিন হওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে_ জন্মদিন কতটা সঠিক। এ প্রশ্নের ভিত্তিও আছে। কারণ আমাদের অনেকেরই জন্মতারিখ একাধিক। যদিও ধরাধামে প্রত্যেকের একটি নির্দিষ্ট দিনেই জন্ম হয়েছে। তারপরও নানাভাবে একাধিক জন্মতারিখ হয়ে যায়। এর অন্যতম প্রধান কারণ শিক্ষা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় ভর্তি হতে প্রয়োজন অনুসারে প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বয়স কমায়-বাড়ায়। অভিজ্ঞতা বলছে, পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো এ রকম করে। এসএসসি পরীক্ষা দিতে নূ্যনতম ১৪ বছর হতে হয়। সে আলোকে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বয়স কয়েক দিন আগে-পরে নির্ধারণ করে দেয়। দেখা যায়, অনেককেই জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ধরে দেওয়া হয়। এসএসসি পরীক্ষা সাধারণত ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের মধ্যে হয় বলে ১৪ বছরের হিসাবে বছরের প্রথম দিন বা শেষ দিন ধরে হিসাব করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এ প্রবণতা কমে এসেছে। এখন জন্মনিবন্ধন হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তা অনুসরণ করে। একই সঙ্গে অভিভাবকরাও এখন বেশ সচেতন। সন্তান জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিভিন্ন জায়গায় লিখে রাখেন। এমনকি অনেকে বছর বছর জন্মদিনও পালন করেন। আগে তা কম দেখা যেত। অনেকে হয়তো সন্তানদের জন্মতারিখ কোনো ডায়েরিতে লিখেছেন কিন্তু পরে তা হারিয়ে ফেলেছেন। তারও আগে অনেকে বাংলা তারিখ লিখতেন। সেটা ইংরেজি হিসাব অনুযায়ী অন্য রকম হতো। এভাবে অনেকের বয়স ২-৩টিও হয়ে আছে। যদিও সব ছাপিয়ে সার্টিফিকেটের বয়সই প্রধান হয়ে ওঠে। এভাবে বিখ্যাত অনেকের সঠিক জন্মতারিখ নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। অবশ্য এ বিভ্রান্তি হয়তো ইচ্ছা করেই করা। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা অভিভাবকও শিক্ষার্থীর ভালোর কথা চিন্তা করেই শিক্ষার্থীর বয়স কমিয়ে দেন। কখনও কখনও এ রকম 'মহৎ' উদ্দেশ্যেই অনেকের বয়স বাড়ানো হয়েছে। যদিও জন্মতারিখ দু'তিনটা হওয়া ব্যক্তির কাছে ভালো বিষয় নাও হতে পারে। আসলে এ বিভ্রান্তি পীড়াদায়ক বটে। কেউ প্রকৃতপক্ষে জন্মগ্রহণ করল একদিন, অথচ সবাই জানল আরেক দিন। কেউ সেদিন শুভেচ্ছা জানালেও তা বিব্রতকর বটে। এটা অবশ্য ঠিক, এ সমস্যা যতটা না শহরে, তার চেয়ে বেশি গ্রামে। এটাও ঠিক, অনেকেই তার প্রকৃত জন্মতারিখ জানেন। সে অনুযায়ীই তার শিক্ষাসহ সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এর বাইরে যারা একাধিক জন্মতারিখ নিয়ে আছেন তাতে ব্যক্তি কীবা করতে পারেন! যদিও এ বিভ্রান্তি ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। দেশের সর্বত্র অভিভাবক সচেতন হলে শিগগিরই তা কাটবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এভাবে একদিন হয়তো ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরও বছরের প্রথম দিনে বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর ক্লান্তি কমবে!

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।