Mahfuzur Rahman Manik
প্রত্যেকে আমরা মাটির তরে

Desertification-poster2015মানুষসহ পৃথিবীর সব সৃষ্টির জন্ম ও বেঁচে থাকায় মাটির ভূমিকা অনুধাবনযোগ্য। মাটির তৈরি আমরা যে মাটির ওপর বসবাস করি, চলাফেরা করি এবং মাটিতে উৎপন্ন জিনিস খেয়ে বেঁচে আছি সে মাটির ভালো থাকাটা আমাদের স্বার্থেই অপরিহার্য। আজকের বিশ্ব মরুময়তা প্রতিরোধ দিবসে জাতিসংঘ ঠিক এ বিষয়টিকে সামনে রেখে স্লোগান করেছে_ 'নো সাচ থিং এজ অ্যা ফ্রি লাঞ্চ- ইনভেস্ট ইন হেলদি সয়েলস'। আমরা এভাবে বলতে পারি, খাদ্য আসে মাটি থেকে- মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় বিনিয়োগ করুন। আমরা যা খাই তা তো আসলে ফ্রি আসে না। তাই খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য হলেও মাটি ভালো রাখার কথা বলা হচ্ছে। যদিও আমাদের দ্বারাই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিনিয়ত মাটি ক্ষয় হচ্ছে। নানাভাবে উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি। জাতিসংঘ বলছে, পৃথিবীর ২৬০ কোটি মানুষ সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল, অথচ কৃষিতে ব্যবহৃত জমির ৫২ শতাংশের মাটিই কোনো না কোনোভাবে ক্ষয়ের শিকার। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ।
তাই মাটির স্বাস্থ্যে বিনিয়োগের কথা আসছে। অথচ আমাদের মাটি পাওয়াই দুষ্কর! আবাসন, নগরায়ন ও শিল্পাঞ্চল দ্রুত ক্রমশ বাড়ছে। হিসাব বলছে, গত এক দশকে আগের তুলনায় পাঁচ গুণ হারে ফসলি জমি কমছে। অন্যদিকে নানা কারণে অনেক কৃষিজমিও অনুর্বর হয়ে যাচ্ছে। আর যখন মানুষের আবাসন বাড়ছে স্বাভাবিকভাবেই কমছে গাছপালা। অধিক পরিমাণে গাছপালা কাটা, গণহারে বৃক্ষ নিধন মাটির মারাত্মক ক্ষতির কারণ। একই সঙ্গে অনাবৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় সময় পানির অভাবে দেখা দিচ্ছে মরুময়তা। আর এ জন্যই দিবসটি বলছে, জমির ব্যবহারের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যেখানে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ ও টেকসই জমি ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করার কথা বলছে। জাতিসংঘ অবশ্য মরুময়তা প্রতিরোধে ২০০৭ সালে দশ বছর মেয়াদি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে।
আন্তর্জাতিকভাবে যত পরিকল্পনাই নেওয়া হোক ব্যক্তিগতভাবে তার বাস্তবায়ন না করলে তা পরিকল্পনায়ই থেকে যাবে। বিশেষ করে প্রত্যেকে পরিবেশের প্রতি সচেতন হয়ে প্রত্যেকটি কাজ পরিবেশসম্মতভাবে করলে তা যেমন ব্যক্তির লাভ, তেমনি পরিবেশেরই লাভ। মানুষ যখনই পরিবেশের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে তখনই পরিবেশ তার প্রতিশোধ নেয়। সিডর, আইলাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী আমরা। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়। এমনকি নেপালের মতো ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হওয়াও হয়তো অসম্ভব নয়।
INDIA-NORTHEAST-WEATHERমরুময়তা ঠেকাতে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়। যদিও আদতে গাছ আপনারই উপকার করবে। গাছের ফল যেমন আপনি প্রজন্মান্তরে খেতে পারেন। মানুষ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারে। পরিবেশের এ রকম প্রত্যেকটি কাজই ব্যক্তিগত, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি বিশ্ববাসীর জন্য উপকারে কাজে লাগে।
আর এবারের প্রতিপাদ্য যে মাটি নিয়ে তার যত্ন নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই প্রয়োজন। দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব যথার্থই বলেছেন_ আমাদের জীবন ও সভ্যতা ভূমির ওপর নির্ভরশীল। আমাদের খাদ্য অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানির স্বার্থে আসুন আমরা মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগ করি।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।