Mahfuzur Rahman Manik
ভোগান্তির শহরে!
অক্টোবর 30, 2014

বাসমানুষের অনুভূতি বিচিত্র। কোনো কিছু পড়ে, দেখে, শুনে, বুঝে সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া হয়। দুঃখের বিষয়, পড়ে মানুষ কঁাঁদে, হাসির কিছু পড়ে হাসে আবার বিপদমুক্ত হওয়ার খবর পড়ে সে একটা নিঃশ্বাস নেয়। এসবের আচরণও তথৈবচ; দাগি অপরাধীর ঘটনা পড়ে, শুনে বা দেখে তাকে মারতে ইচ্ছা হয়; কেউ খুব ভালো কাজ করার কথা শুনলে তার মতো হওয়ার ইচ্ছা জাগে কিংবা হিংসা হয়; চোখের সামনে কেউ গাড়ির নিচে পড়তে গেলে তাকে টেনে ধরে বাঁচাতে চাই। এসবই কিন্তু অনুভূতির বিষয়। মানুষ যে মানুষ বোধহয় এই অনুভূতিও তার অন্যতম পরিচায়ক। যার অনুভূতি নেই তাকে হয়তো সবাই পাগলই বলবে।
অনুভূতির প্রতিক্রিয়া মানুষে মানুষে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে_ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ রকম কোনো খবর প্রধানমন্ত্রীর গোচরীভূত হলে, তিনি চাইলে রাষ্ট্রীয় খরচে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। অন্যদিকে যার ক্ষমতা নেই একই খবরে তার প্রতিক্রিয়া কেবল আফসোসেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে ক্ষমতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
কথায় কথায় আমরা যে প্রশাসনের কথা বলি, এই প্রশাসন তো আসলে যান্ত্রিক কোনো বিষয় নয়; মানুষই প্রশাসক। দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে প্রশাসন, যাদেরকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ক্ষমতা নিয়ে সেবা করার জন্য বসানো হয়। একেবারে বড় পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন আমাদের দেশের প্রশাসক, তেমনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসক। যারা সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের সব খবরাখবর রাখেন এবং প্রয়োজনে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধান করেন।
রাজধানী ঢাকায় আমরা যারা বাস করি সবাই জানি এর একটা প্রশাসন আছে। না, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দু'ভাগের দুটি প্রশাসন। যাদের দায়িত্ব হলো নগরে বসবাসরত মানুষের সেবা নিশ্চিত করা। বাস্তবে ঢাকার মানুষ কতটা সেবা পান তা বলাই বাহুল্য। সাধারণ গণপরিবহনের কথা বললে বিষয়টা সহজেই বোঝা যাবে। যদিও গণপরিবহনের পুরো বিষয়টা কেবল নগর প্রশাসনই দেখে না, সরকারের দায়িত্বও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে নাগরিকদের কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্টরাই জানেন। আপনার টাকা আছে, সিএনজি কিংবা রিকশায় যেতে পারেন। কিন্তু যথাসময়ে তা পাবেন সে নিশ্চয়তা নেই। পেলেও ভাড়া দূরত্ব অনুসারে হবে তা বলা যায় না। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা অন্যায্য ভাড়া দিয়েও যেতে বাধ্য হয়। মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের মানুষের ভোগান্তি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। গণপরিবহনই তাদের ভরসা। এই গণপরিবহন ঢাকায় কতটা অপর্যাপ্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অফিস আওয়ারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও যখন একটা বাসের দেখা মেলে না, দেখা মিললেও যখন দেখা যায় গেটে পর্যন্ত মানুষ ঝুলছে কিংবা আসার আগেই হুড়মুড়িয়ে ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রী উঠছে এবং তখন এ প্রতিযোগিতায় হেরে নিজেকে কতটা অসহায় মনে হয় তা বোঝানো যাবে না। ঢাকার চিরাচরিত ট্রাফিক জ্যামের কথা নতুন করে বলার কি আছে! রাজধানীতে থাকতে গিয়ে বাড়িভাড়া আর বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্যও পুরনো।
এসবই নয়, আরও যে কত অনিয়ম, দুর্ভোগ চলছে এই শহরে তা কারও অজানা থাকার নয়। তারপরও যেন দেখার কেউ নেই, কোনো অনুভূতি নেই, নেই প্রশাসনও। এরপরও দিব্যি চলছি আমরা। প্রায় দেড় কোটির সঙ্গে আরও যোগ হচ্ছে মানুষ। দীর্ঘ হচ্ছে দুর্ভোগের সারি। অনুভূতি হারিয়ে এই শহরও কি একদিন পাগল হয়ে যাবে? কে জানে!

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।