Mahfuzur Rahman Manik
অন্ধকারের অপেক্ষা!
আগস্ট 20, 2014

India-Toiletমানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে সরাসরি টয়লেটের কথা নেই। তবে বেঁচে থাকার জন্য টয়লেটও যে আবশ্যক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরাসরি বলা না হলেও মানুষের বাসস্থানের মধ্যে বিষয়টা চলে আসে। আবার খাদ্য গ্রহণের সঙ্গেও রয়েছে এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। সুস্থ প্রত্যেককেই দিনে অন্তত একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়। তাই মানুষ থাকার জায়গার সঙ্গে শৌচকার্য সম্পাদনের বিষয়টিরও ব্যবস্থা করেন। এর বিপরীত চিত্র এখন ব্যতিক্রম। টয়লেট নেই, খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কর্ম সারেন_ এ রকমটা অনেকে কল্পনাও করতে পারেন না। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে অবশ্য টয়লেট সমস্যা এখনও প্রকট। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট,২০১৪) বিবিসির একটি প্রতিবেদনেও বিষয়টি এসেছে। 'ইন্ডিয়া ব্রাইডস লিভ হাজব্যান্ডস হোমস ফর ল্যাক অব টয়লেটস' শিরোনামই তা স্পষ্ট করছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের ছয়জন নতুন বিবাহিত স্ত্রী টয়লেট না থাকার কারণে স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেছেন। তারা বলছেন, টয়লেট নির্মাণ করলেই কেবল স্বামীর বাড়ি ফিরবেন। যাদের প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের জন্য খোলা মাঠে যেতে হয়। নতুন বউ হিসেবে তো বটে, এমনিতেই নারীদের জন্য বাইরে তা সম্পাদনে দুর্ভোগের কথা বলাই বাহুল্য। যেখানে বিবিসির আরেকটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ভারতের এক গ্রামের নারীরা ভোর ও সন্ধ্যায় দু'বার মাঠে বের হয়ে টয়লেটের কাজ সারেন। ওই গ্রামের তিনশ' পরিবারের মধ্যে মাত্র ৩০টির নিজস্ব টয়লেট রয়েছে। গোটা ভারতের মধ্যে অর্ধেকেরই টয়লেট ব্যবস্থা নেই_ এ তথ্য কেবল বিবিসির মঙ্গলবারের প্রতিবেদনই বলছে না বরং নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বলেছেন। বলার বিষয় হলো, অমর্ত্য সেনের বক্তব্যে যেমন ভারতের কথা রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের চিত্রও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি গত বছর 'এন আনসার্টেইন গ্গ্নোরি :ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কন্ট্রাডিকশন' বইয়ের সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনেক দুর্বল দেশ। তারপরও বাংলাদেশের মাত্র ৮ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই, যেখানে ভারতে এ হার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।Stylish-Toilet-Room-Design-Ideas
ভারতের এ সমস্যায় স্ত্রীরা যে কেবল স্বামীর বাড়ি ছাড়ছেন তা-ই নয়, এর চেয়ে বড় সমস্যার বিষয়ও অনেকের জানা। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশেই বাইরে প্রাকৃতিক কাজ সারতে যাওয়ার সময় দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। টয়লেট সমস্যার সমাধান না হলে এ রকম আরও সংকটের উদ্ভব হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনেকে বলছেন, ভারত মোবাইলের দেশ, টয়লেটের নয়। উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, একশ' ২২ কোটি জনসংখ্যার ভারতে মোবাইল ব্যবহারকারী ৯০ কোটির ওপরে। অবশ্য স্বস্তির বিষয় হলো, ভারতের টয়লেট সমস্যার বিষয়টি নতুন সরকার তাদের অগ্রাধিকারে রেখেছে। নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রতিক বক্তব্যেও বিষয়টি এনেছেন। তার সরকার ওয়াদা করেছে, সরকারের প্রথম ১০০ দিনে ৫০ লাখ নতুন টয়লেট স্থাপন করবে। সকলের প্রত্যাশাও তা-ই।
আমাদের দেশের কথা ভুললেও চলবে না। এখনও গ্রামে কিংবা শহরের বস্তিতে যারা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করেন না, তাদের দ্রুত এ ব্যবস্থা দরকার। এই একুশ শতকেও ভারতের নারীরা অন্ধকার খোঁজেন; প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনের জন্য ভোর আর সন্ধ্যার আঁধারের জন্য অপেক্ষা করেন। এ যে ভীষণ লজ্জার। আমরা জানি না, এখনও আমাদের গ্রামের কোনো নারীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হয় কিনা। এ থেকে যত দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায় ততই মঙ্গল; আঁধার নয়, আমরা যে আলো চাই।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।