মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সংবাদপত্র সরকারের পারফরম্যান্সের বিষয়ে যেসব জরিপ পরিচালনা করেছে তার প্রায় সব ক'টিতে 'সেরা' স্বীকৃতি পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশেষভাবে নন্দিত হয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান নুরুল ইসলাম নাহিদ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ এক বিরল অর্জন। শিক্ষাঙ্গনের বাইরেও বৃহত্তর সমাজে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্য। বিনয়ী ও নিরহঙ্কারী হিসেবে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন। এ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি বাসা বেঁধে আছে বিভিন্ন পর্যায়ে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তিনি সেটা দূর করতে পেরেছেন, এ দাবি বোধ করি তিনিও করেন না। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি সৎ ও নিষ্কলঙ্ক থাকায় সচেষ্ট, এমন স্বীকৃতি দিতে তার চরম প্রতিপক্ষও দ্বিধা করবে না।
২০০৯ সালে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পেয়েই নুরুল ইসলাম নাহিদ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরির কাজে হাত দেন। এর উদ্যোগের ফলেই আমরা পেয়েছি 'জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০'। এ শিক্ষানীতির অনেক কিছুই কার্যকর হয়েছে এবং ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ এখন জাতীয় উৎসব। শিক্ষা বছরের শুরুর দিন শিক্ষার্থীরা ঝকঝকে নতুন বই হাতে পেয়েছে পাঁচ বছর ধরে। ২০১০ থেকে ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে প্রায় ৯২ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। এ কর্মযজ্ঞের পেছনের মানুষটি নুরুল ইসলাম নাহিদ। তারই সময়ে কারিকুলামের আধুনিকায়নও দেখেছি। নতুন শিক্ষানীতির আলোকে বাস্তবধর্মী বই সিলেবাসে সংযোজন হয়েছে। মুখস্থ বিদ্যা পরিহার করতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেমন নোট-গাইডকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে একই সঙ্গে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালাও আমরা দেখেছি। শিক্ষামন্ত্রীর এই সময়ে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, একই সঙ্গে সারাদেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে অবহেলিত শিক্ষকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
আমাদের শিক্ষার নানা সমস্যা, শিক্ষার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন মান নিয়ে। শিক্ষার প্রসার যতটা ঘটছে, মান ততটা বাড়ছে না। এর মধ্যেও শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও নুরুল ইসলাম নাহিদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা সবাই দেখেছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য তার প্রচেষ্টা অনস্বীকার্য।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন ফাঁসসহ কিছু বিষয় নিয়ে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট মহলে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আমরা আশা করব, এ গুরুতর সমস্যা থেকে উত্তরণের উপযুক্ত পথ তিনি খুঁজে পাবেন। এর পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে তাতে সন্দেহ নেই। তাদের মোকাবেলায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এ ক্ষেত্রে তিনি উদোগী হয়েছেন। এতে সাফল্য না এলে শিক্ষাক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের অর্জন ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে।
১৯৪৫ সালের ৫ জুলাই সিলেটের বিয়ানীবাজারে জন্মগ্রহণকারী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখে চলেছেন, তা দীর্ঘতর হোক। পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল হচ্ছে ঠিকই, তবে গুণগত মানের বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিশুদের এনরোলমেন্ট বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়নি ঝরে পড়ার হার। একই সঙ্গে বয়স্কদের মধ্যে নিরক্ষরের সংখ্যা এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়েই। এসব বিষয় সমাধানে তিনি মনোযোগী হবেন, এটাই প্রত্যাশা। তার পথচলা মসৃণ হোক, জন্মদিনে কাম্য। শুভ জন্মদিন, নুরুল ইসলাম নাহিদ।