Mahfuzur Rahman Manik
মেঘ ভয়!
জুলাই 25, 2013

Gouranadi-open-schooling

‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’ এটা প্রবাদের কথা। বাস্তবও বটে। তবে তা অন্তত লাখেরাজ কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নয়। ২১ জুলাই প্রকাশিত সমকালের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম বলছে, ‘আকাশে মেঘ দেখলেই ছুটির ঘণ্টা বাজে’। বরিশালের গৌরনদীর এ বিদ্যালয়টির মেঘ দেখে ভয় না করার কোনো উপায় নেই। কারণ সূর্য হাসার আগেই বৃষ্টি তাদের ভিজিয়ে দেবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ তাদের পড়ার বই-ই যদি ভিজে যায়, তবে মেঘকে ভয় না করার উপায় আছে?
পরিত্যক্ত এ বিদ্যালয়ের ক্লাস হয় একেবারে খোলা আকাশের নিচে। ৬ মাস আগে বিদ্যালয় ভবনের ছাদ ও বিমের অংশবিশেষ ধসে পড়ায় বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও চলমান বর্ষা সামনে রেখে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ছুটির ঘণ্টাই মেঘের ভরসা।
প্রতিবেদনটি অবশ্য কেবল গৌরনদীর এ বিদ্যালয়ের কথাই বলেনি, একই সঙ্গে বলছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের ১১টি বিদ্যালয়ের কথাও। যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এসবের কোনোটির ভাগ্য গৌরনদীর বিদ্যালয়টির মতো, কোনোটিতে হয়তো মেঘ দেখলেই ছুটির ঘণ্টা বাজাতে হয় না। কিন্তু মূল ভবনের বাইরে অন্যত্র গাদাগাদি করে অনেক ক্লাস একসঙ্গে করার ভোগান্তি আছে। যদিও সবাই জানেন, কেবল অলোচিত গৌরনদী কিংবা নান্দাইলের বিদ্যালয় নয়, মোটামুটি দেশের অনেক জায়গার চিত্রও তাই।
এ চিত্রগুলো প্রায়শ সংবাদমাধ্যমে আসে। এগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে মৌসুম অনুযায়ী কেবল সংবাদের ধরনে পরিবর্তন হয়। বর্ষার প্রতিবেদনগুলো মেঘের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই ‘মেঘ দেখলেই বিদ্যালয় ছুটি’ কিংবা ‘মেঘ দেখলেই বাজে ছুটির ঘণ্টা’। আর অন্য মৌসুমে তা ‘খোলা আকাশের নিচে পাঠদান’ কিংবা ‘বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত :পাঠদান বন্ধের উপক্রম’।
শ্রাবণের এ সময়ে বৃষ্টি আমাদের অনিবার্য অনুষঙ্গ হওয়ার কথা। জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা অন্য কোনো কারণে হয়তো আগের মতো আকাশে মেঘ দেখা যায় না, বৃষ্টি হয় না। তা না হলেও বৃষ্টির ভয় কিন্তু থাকেই। আর যদি কোনোদিন কাসের সময় বৃষ্টি নেমেই যায়, তখন খোলা আকাশের নিচের বিদ্যালয়গুলোর অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করা যাক। এসব বিদ্যালয়ে ছোট ছোট শিশু পড়াশোনা করে। বৃষ্টিতে তাদের অসুস্থ হওয়ার যেমন আশঙ্কা আছে, একই সঙ্গে বই-খাতা ভিজে গেলে বাড়িতে পড়াশোনার ব্যাঘাতও ঘটে। ফলে তাদের স্বার্থে মেঘ দেখে শিকদের ছুটির ঘণ্টা না বাজিয়ে আর কী উপায় থাকতে পারে!
বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নষ্ট হচ্ছে বলা এখানে পরিহাসই হবে। পুরনো এ বিষয়টিতে, আগের কথা বলা ছাড়া নতুন করে তেমন বলার কিছু নেই। গ্রামীণ জনপদে এখনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিশু শিক্ষার একমাত্র ভরসা। শিশু উপযোগী বিদ্যালয় ভবন-ক্লাসরুম তাদের না জুটুক, অন্তত নিরাপদ কক্ষে ক্লাস করার অধিকার রয়েছে। সারাদেশে পরিত্যক্ত, ঝুঁকিপূর্ণ ও আধা-ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিদ্যালয়গুলোর বর্তমান ভবনের সক্ষমতা বিচার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও নেওয়া দরকার। আর জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হবে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে।
না হয় এভাবে মেঘের ভয় কতদিন?

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।