Mahfuzur Rahman Manik
গর্বের পরিচয় অটুট থাকুক
অক্টোবর 9, 2012

প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের পরিচয়ের সঙ্গে গর্বভরে আমরা বলি 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি'র দেশ। এখানে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলি। সবার মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন এখানে অটুট। রামুর ঘটনা আমাদের সে গর্বের পরিচয়ে একটা কলঙ্ক নিঃসন্দেহে। সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যে যেটা বোঝা যাচ্ছে; সামান্য একটা ফেসবুকে ছবি ট্যাগ করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এটা খুবই দুঃখজনক যে, ফেসবুকের একটা ট্যাগ করা ছবিকে নিয়ে বলা চলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েই ঘটনাটা ঘটল। যেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের ১১টি বৌদ্ধ মন্দির এবং ১৫টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় বাংলাদেশের ইমেজ কতটা ক্ষুণ্নম্ন হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে বোঝা কষ্টের নয়। কোরআনের অবমাননার অভিযোগে ঘটনা ঘটিয়ে থাকলেও তার এ রকম সহিংস প্রতিক্রিয়া কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।
রামুর ঘটনার দিন যত যাচ্ছে, এর নিগূঢ় রহস্য তত বেরিয়ে আসবেই। ঘটনার শুরু ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ১০টায়। ১০টায় ঘটনার সূত্রপাত হলেও বিক্ষোভকারীরা সমবেত হতেও সময় লাগার কথা এবং অনেকে বলেছেন, সহিংসতার আগে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। অথচ তা হয়নি। এখন সংবাদ মাধ্যম বলছে, এ ঘটনার জন্য প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাই অনেকাংশে দায়ী। বাস্তবতাও তাই বলছে। সহিংসতা ভোর ৪টা পর্যন্ত কীভাবে চলতে পারে! প্রশাসন তার সব বাহিনীকে ঠিকভাবে কাজে লাগায়নি অথবা লাগাতে পারেনি। অথচ তাদের দরকার ছিল আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে ফেসবুকের ছবিকে কেন্দ্র করে হলেও এর সঙ্গে আগে-পিছের বহু কারণ জড়িত থাকাটা স্বাভাবিক। প্রশাসনের ব্যর্থতা এ জন্যই খুব বেশি আসবে যে, রামু ও উখিয়ায় একটি অস্থিরতা চলছে_ এ রকম সংবাদ গোয়েন্দাদের কাছে ছিল। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুটা এখনও বলা চলে হট এবং ঘটনার দু'দিন আগে মিয়ানমারে দুটি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার খবরও রামুবাসীর জানা ছিল। এর চেয়ে বেশি জানা ছিল প্রশাসনের। রামুর ঘটনাকে নানা জন নানাভাবে ব্যাখ্যা করছেন। প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটি ঘটনা থাকে। পুরো বিষয়টাকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা দরকার। নেপথ্যে কোনো গোষ্ঠীর উস্কানি থাকলে সেটাও বের করা দরকার।
রামুর বৌদ্ধপল্লীতে তাণ্ডবের ঘটনার তিন দিন পর ৩ অক্টোবর সমকালের প্রথম পাতার ছবিটা একটা বেদনার। পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধ মন্দিরে এক ভিক্ষুর প্রার্থনার দৃশ্য অত্যন্ত লজ্জার। এ লজ্জা গোটা জাতির। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা কখনোই চাই না। রামুর ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের বের করে, নেপথ্যের কারণ তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয় বিশ্বদরবারে অটুট থাকে।

  • ছবি: সমকাল
ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।