Mahfuzur Rahman Manik
শিক্ষানীতির অগ্রগতি কত দূর?
জুলাই 9, 2011


নিউ এজের সাম্প্রতিক (৩ জুলাই) একটি প্রতিবেদন দিয়ে শুরু করা যাক। প্রতিবেদনটির শিরোনাম '২০১২ 2012 start of primary edn extension uncertain’Ñ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বর্ধিতকরণ অনিশ্চিত। শিক্ষানীতি ২০১০-এর বর্তমান অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি বলছে, ২০১২ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে পঞ্চম শ্রেণী থেকে বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার কথা থাকলেও তা অনিশ্চিত।
প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, গত ২৬ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদারকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষাকে পঞ্চম শ্রেণী থেকে কীভাবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করা যায়, এর বাস্তবায়ন কৌশল কী হবে, তা জানিয়ে কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন পেশ করার কথা বলা হয়। দু'মাসের জায়গায় এখন পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও কমিটি কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। কমিটির চেয়ারম্যানসহ অনেক সদস্য নিজেরাই বাস্তবায়ন বিষয়ে সন্দিহান।
শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নে একটি উপকমিটির চিত্র এটি। অন্য কমিটিগুলোর অবস্থাসহ সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে গত ৭ জুন প্রতিবেদন করে দৈনিক জনকণ্ঠ ও সংবাদ। উভয় পত্রিকার শিরোনাম প্রায় অভিন্ন। পত্রিকাগুলো বলছে, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ২৬ জানুয়ারি ২৪টি উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দু'তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি কমিটিও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
কারণ হিসেবে একটি বিষয়ই উঠে এসেছে_ 'আমলাতান্ত্রিক জটিলতা'। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে উপকমিটিগুলোর প্রায় প্রতিটির মূল দায়িত্বে আছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের আমলারা; যারা নিজেদের দাফতরিক কাজ, জনপ্রতিনিধিদের ডিও লেটার নিষ্পত্তিসহ নানা কাজ সামাল দিতেই ব্যস্ত। অনেক কমিটি শিক্ষানীতি নিয়ে এখনও একবারের জন্যও বসতে পারেনি।
এ শিক্ষানীতি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দু'বছরেরও বেশি সময় পার করে ফেলেছে। ২০০৯-এর ৪ এপ্রিল শিক্ষানীতি কমিটি গঠন, ২০০৯-এর ২ সেপ্টেম্বর কমিটির খসড়া শিক্ষানীতি প্রকাশ, ২০১০-এর ৩১ মে শিক্ষানীতি চূড়ান্তকরণ এবং মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়। শিক্ষানীতি ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় আর তা বাস্তবায়নে ২৬ জানুয়ারি ২০১১-তে ২৪টি উপকমিটি গঠন করা হয়। এভাবে শিক্ষানীতির প্রক্রিয়ায়ই দু'বছরের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। মূল বাস্তবায়নের কাজ তো বাকিই রয়ে গেছে।
শিক্ষানীতির দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতায়ও ভাটা পড়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের চার মাসেই ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে তড়িঘড়ি করে যে শিক্ষানীতি করল, সেটাই এখন নানা স্তরে কচ্ছপের গতিকেও হার মানাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষানীতির প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার প্রধান যে চ্যালেঞ্জ, তার অগ্রগতিও প্রশ্নবিদ্ধ। আবার এবারের বাজেটে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে, শিক্ষাক্ষেত্রে যে বাজেট দেওয়ার কথা ছিল, তাও সরকার দেয়নি। শিক্ষা ও প্রযুক্তি উভয় খাত মিলে বরাদ্দ দেওয়া হয় অন্যান্যবারের মতোই মোট বাজেটের ১২ দশমিক ৪ ভাগ মাত্র।
শিক্ষানীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, এর বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণে আমলাপ্রধান উপকমিটি গঠনের আবশ্যকতা কোথায়? এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, কিংবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের দ্বারা তা করানো যায়। সবচেয়ে ভালো হয়, বাংলাদেশে যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন বা শিক্ষা নিয়ে যারা একাডেমিক গবেষণা করেন তাদের দায়িত্ব দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এ ক্ষেত্রে যথার্থ প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের কাজে অবদান রাখতে পারে, অন্যদিকে যেহেতু তাদের এ বিষয়ে গবেষণা আছে, তারা দ্রুত সময়ে ভালো কাজ করে দিতে পারবে। এভাবে আমলানির্ভর কমিটি দিয়ে শিক্ষানীতির অগ্রগতি কতটা সম্ভব বলা মুশকিল।
অতীতের 'খসড়া রোগে আক্রান্ত' শিক্ষানীতিগুলো থেকে এবারের নীতিকে সবাই ভিন্ন চোখে দেখে আসছে। এ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নে ধীরগতিও তাই সবাইকে ব্যথিত করবে। অবশ্য শিক্ষাসচিব ঠিকই বলেছেন, শিক্ষানীতির কিছু কাজ শুরু হয়েছে, যেমন_ পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ইত্যাদি। এরপরও একটি আশঙ্কাই সবার মনে_ এ নীতি অতীতের শিক্ষানীতিগুলোর ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে না তো?

সমকাল ০৯-০৭-২০১১

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।