আদর্শ বাহন হিসেবে সাইকেলের জুড়ি নেই। দুই চাকার বাহনটি যেমন পরিবেশসম্মত, তেমনি সুস্থতার জন্যও এটি চালানোর পরামর্শ দেন অনেকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাহন হিসেবে তো বটেই, এর বাইরে নানা কাজে সাইকেল ব্যবহার করেন মানুষ। সাইকেলে র্যালি কিংবা শোভাযাত্রা দেখা যায় অহরহ। এতে চড়ে বিশ্বভ্রমণের রেকর্ডও অনেক আগের আর সাইকেল রেস তো আছেই। অতি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সাইকেলে চড়ে বিজয় উদযাপনের দৃশ্যও দেখা গেছে। তবে সাইকেলের ব্যতিক্রম ব্যবহারের খবর দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনামই বিষয়টি বলছে, 'ভাঙন ও বালি তোলা রুখতে সাইকেল বাহিনী'। এটি অভিনবই বটে নদী রক্ষায় সাইকেল বাহিনী!
পত্রিকাটির ভাষ্যমতে, সাইকেল বাহিনী গঠনের কথা জানিয়েছেন কলকাতার সেচমন্ত্রী। যারা সেখানকার নদীর পাড়, বাঁধের ভাঙন আর গঙ্গা থেকে বেআইনিভাবে বালু তোলার বিষয়ে প্রতিনিয়ত নজরদারি করবেন। কলকাতার সেচ দফতর ৬৪০ জন কর্মী নিয়ে এ বাহিনী তৈরি করবে। আগামী মাস থেকেই তারা রাজ্যের ১০ হাজার ৪২০ কিলোমিটারজুড়ে নদী বাঁধ ও অন্যান্য ছোট ছোট বাঁধ ঘুরে নদী ভাঙন, নদীর পাড়ে অবৈধ নির্মাণ ও বালু তোলার বিষয়ে নজরদারি করবে। দিন শেষে এ সাইকেল বাহিনী রেকর্ড বুকে রিপোর্ট লিখে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ত্বরিত ব্যবস্থা নেবে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এতদিন নদীভাঙন, নদীর পাড়ে বেআইনি নির্মাণ ও বালু উত্তোলনের ঘটনা প্রতিনিয়ত চললেও তারা সময়মতো খবর পেতেন না। এ বাহিনীর মাধ্যমে খবর পেতে তাদের আর দেরি হবে না। অবশ্য যদি সাইকেল বাহিনী চালু হয় তার সুফল কেবল এই খবর দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সত্যিকারার্থেই নদী রক্ষায় এটি হবে একটি কার্যকর উদ্যোগ। সাইকেল বাহিনী প্রতিদিন নজরদারি চালালে বালুদস্যু, নদী দখলদাররা অপরাধ করতে সাহস পাওয়ার কথা নয়।
নদীভাঙন-দখল-দূষণ, নদী থেকে বালু উত্তোলন আমাদের প্রতিদিনকার বিষয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো সংবাদমাধ্যমে পাঠক এসবের খবর পেয়ে থাকবেন। এখন নদীর বেশিরভাগ খবরই দুঃখের খবর। সংবাদমাধ্যমে হয়তো সব খবর আসে না। তারপরও আমাদের অনুমান করতে কষ্ট হয় না প্রতিনিয়ত আমরা কীভাবে নদীর ওপর অত্যাচার করে চলেছি। ফলস্বরূপ দিন দিন আমাদের নদীগুলো মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে।
কলকাতার সাইকেল বাহিনী আমাদের জন্য বড় খবরই বটে। যদিও আমাদের কর্তৃপক্ষ বলা চলে নির্বিকার। নদীভাঙন-দখল কিংবা বালু উত্তোলনের খবর প্রতিনিয়ত তাদের গোচরীভূত হলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়ার মতো নয়। এখানকার বালুদস্যুরা, দখলদাররা প্রভাবশালী। তাদের অন্যায়ে প্রতিবাদকারী শাহেদ কায়েসদের ওপর হামলা করেও অপরাধীরা নির্বিঘ্ন থাকতে পারে। প্রশাসনের নাকের ডগায় থেকেও কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহায়তায়ই তারা এসব অপকর্ম করে। আর সে প্রশাসন থেকে এ রকম সাইকেল বাহিনী গঠনের প্রত্যাশা অমূলকই হবে।
তারপরও আমরা আশাবাদী হতে চাই। কারণ আমাদের বাঁচার জন্যই নদী বাঁচাতে হবে। এটা যেমন প্রশাসনকে বুঝতে হবে, তেমনি বুঝতে হবে সবাইকে। এজন্য প্রতিবেশী কলকাতার উদ্যোগ আমাদের জন্য আশাজাগানিয়া বটে। এ রকম উদ্যোগ না নিক অন্তত নদী রক্ষায় কর্তৃপক্ষ আরেকটু উদ্যোগী হবেন_ এ প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
- সমকালে প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩
- ছবি- বিভিন্ন ওয়েবসাইট