সাক্ষাৎকার: ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ব্র্যাকের চেয়ারম্যান এবং পিপিআরসির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সার্ক পভার্টি কমিশনের সদস্য এবং বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইউএসএইড, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরামর্শক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হোসেন জিল্লুর রহমান পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে। ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।
সমকাল: ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমরা দেখলাম। বিগত বছরের দিকে তাকিয়ে যদি বলেন, নতুন বছরটা আমাদের জন্য কতটা সম্ভাবনার?
হোসেন জিল্লুর রহমান: ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণে যে পট পরিবর্তন হয়েছে, সে কারণে আমাদের সম্ভাবনার জায়গা বিস্তৃত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কাজ শুরু করেছে। সেই কাজ কোন দিকে এগোবে– নতুন বছরে আমরা সেটাই দেখব। যে আকাঙ্ক্ষায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে যে সরকার গঠিত হলো, অর্থাৎ বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন, সক্ষম ও জবাবদিহির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে নতুন বছরের মূল বিষয় সরকারের কাজের ফল দেখা। এখানে প্রত্যেক অংশীজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থাৎ অর্থনীতি যারা চালান, বিশেষ করে ব্যক্তি খাত, অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল, ছাত্রশক্তি ও নাগরিক সমাজ। অংশীজন যারা এই পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় যুক্ত হয়েছেন, নতুন বছরে প্রত্যেকের জন্য আলাদা চ্যালেঞ্জ আছে, আবার সম্মিলিত চ্যালেঞ্জও আছে।
সমকাল: বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হলো। তাহলে ২০২৫-এর
চ্যালেঞ্জ কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: এই যে সম্মিলিতভাবে বৈষম্যহীন সমাজের প্রত্যাশা করেছিল, ২০২৫-এর চ্যালেঞ্জ হবে সেই আকাঙ্ক্ষাকে সুনির্দিষ্ট রূপ দেওয়া। আমরা দেখছি, অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। সেখানে কীভাবে গতি আনা যায়; সংস্কারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে কী প্রস্তাব আসবে; কীভাবে তা বাস্তবায়ন হবে; এখন কতটা হবে, পরে হবে কতটা।
সমকাল: নির্বাচনের বিষয়ও সামনে আছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান: জবাবদিহিমূলক সমাজ তৈরির অন্যতম স্তম্ভ নির্বাচন। নতুন বছরে নির্বাচনের দিকে আমরা কতটা এগোতে পারব এবং এগোনোর পথে জাতির ঐকমত্য কতটা প্রতিষ্ঠিত হবে, তাও দেখার বিষয়।
সমকাল: নতুন বছর এলেও পুরোনো চ্যালেঞ্জ নিশ্চয় থাকছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগের কারণ। বাজার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আপনি গত সরকারের সময় বলেছিলেন, লৌহ ত্রিভুজ গেড়ে বসেছে। সেখানে কি পরিবর্তন আসেনি?
হোসেন জিল্লুর রহমান: লৌহ ত্রিভুজে রাজনৈতিক যে অংশ ছিল, সেটা ভেঙেছে। কিন্তু ভাঙার পরপরই তার স্বয়ংক্রিয় বিকাশ হচ্ছে না। তারপর পুনর্নির্মাণের একটি বিষয় আছে। সেটা হয়নি। ‘অলিগার্ক’-এর ক্ষমতা বাজারে এখনও রয়ে গেছে। আমলাতন্ত্র যেভাবে স্থবিরতা তৈরির যন্ত্র হিসেবে কাজ করে, তা এখনও আছে।
সমকাল: আমলাতন্ত্রসহ ব্যবস্থাগত এই পরিবর্তনের জন্যই সরকার অনেক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: সংস্কার কমিশন গঠন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। কিন্তু এর গঠন প্রক্রিয়ায় কেতাবি ধরনের কিছু বিষয় আছে। আবার সংস্কার কমিশন করা হলো, ঠিক আছে; সেগুলোর প্রস্তাব নিয়ে জোরালোভাবে এগোতে হবে। সেখানে রাজনৈতিক ইচ্ছার নড়বড়ে অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। কিছু জায়গায় কিন্তু সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আগেই পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। যেমন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদেরও ইতোমধ্যে নিযুক্ত করা হয়েছে। হয়তো এই নিয়োগ দেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু সংস্কারের যেসব প্রস্তাবনা আসবে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা হবে। যেমন জনপ্রশাসন সংস্কার করতে গিয়ে কিছু বিষয় সামনে আসার পরই দেখা গেল প্রশাসনে অস্থিরতা। হয়তো ভালো প্রস্তাব, কিন্তু অস্থিরতার কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হলো না। সে জন্য এই অস্থিরতাকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে যে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও দৃঢ় মনোবল দরকার, তা কতটা আছে– এটিও দেখার বিষয়।
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যেহেতু সীমাবদ্ধতা আছে, এ সময়ে যেসব সংস্কার প্রস্তাবনা দেওয়া হবে, সেগুলো বাস্তবায়নে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছার বিষয়ও আছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: হ্যাঁ। সেটা অবশ্যই। সংস্কার করতে গিয়ে অনেক সময় যে অনৈতিক চাপ তৈরি হয়, তা মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ। এই চাপ সাধারণত রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে আসে। অঙ্গ সংগঠনগুলো কি এখনও আগের মতো চলবে? যেমন স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করতে গিয়ে অঙ্গ সংগঠনগুলো বলবে, আমাদের লোকদের বসাতে হবে। সেটা তো হতে পারে না। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। অঙ্গ সংগঠনগুলোর চাপ উপেক্ষা করাও সংস্কারেরই অংশ। বিগত সময়ে যে প্রবণতা চলে আসছিল; অঙ্গ সংগঠনগুলোর চাপ গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত যে পরিণতি হয়েছে, সেখান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর শিক্ষা নিতে হবে।
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার যতটুকু সময় পায়, এর মধ্যেও কি পরিবর্তন আনতে পারে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে কিছু সংস্কার এখনই করে ফেলতে পারে। সে জন্য তাদের কমিশনের রিপোর্টের জন্যও অপেক্ষা করার দরকার নেই। ইতোমধ্যে সে উদাহরণও আমরা দেখেছি। যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের দুটি ভাগ ছিল। কিন্তু তারা সে দুটিকে একত্র করে ফেলেছে। জুডিশিয়ালেরও কিছু পদক্ষেপ তারা নিতে পেরেছে। ২০২৫-এ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি কাজ জরুরি। প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা জাতির সামনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো, তারা কমিশনের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে কিছু সংস্কার এখনই করতে পারে, তাতে জনমনে আস্থা তৈরি হবে। তৃতীয়ত, কেতাবি আলোচনা বাদ দিতে হবে।
সমকাল: কেতাবি আলোচনা বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমরা দেখছি, সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কিংবা নাগরিক সমাজের সঙ্গে অফিসিয়াল আলোচনা করা হচ্ছে। এ ধরনের কেতাবি আলোচনায় অনেক কিছুই উঠে আসে না। খোলামেলা আলোচনা না হলে সমস্যার গভীরে পৌঁছা যায় না। শুধু একপক্ষীয় আলোচনা করা ঠিক নয়। অর্থাৎ শুধু বলে গেলাম, তার কোনো প্রতিফলন নেই। এখানে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজেরও দায়িত্ব আছে।
সমকাল: রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব?
হোসেন জিল্লুর রহমান: রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হলো, তাদের চিন্তাধারা পরিষ্কার করা। যেটা বলছিলাম, অনৈতিক চাপ যেসব জায়গা থেকে আসে সেখানে সংস্কার করে তাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। সেগুলো জাতির সামনে দৃশ্যমান করা দরকার।
সমকাল: নাগরিক সমাজের দায়িত্ব কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: নাগরিক সমাজের দায়িত্ব হলো, জনপরিসরের আলোচনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা। নাগরিক সমাজ ক্ষমতার ভাগীদার হতে চাইছে না। তারা যে সজাগ আছে, সেটা বোঝানো। চব্বিশের আগস্টের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এত বড় গণঅভ্যুত্থান হলো, তার প্রতিফলন হচ্ছে কিনা। আমরা দেখছি, বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে বর্ষসেরা ঘোষণা করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেও একটি দায়িত্ব এসে যায়, সে জন্য নাগরিক সমাজের ভূমিকা স্পষ্ট করা তৃণমূল পর্যন্ত।
সমকাল: রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বের কথা বললেন। আমরা দেখেছি, ছাত্ররাও এক ধরনের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সেটা কীভাবে দেখছেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: রাজনৈতিক দল গঠন করার অধিকার সবারই আছে। এখানে দেখার বিষয়, তারা কীভাবে করছে, তাদের মধ্যে নতুনত্ব আছে কিনা। আমরা যদি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি এবং নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, তবে সেখানে জনতার বিচারে স্পষ্ট হবে কে কীভাবে কাজ করছে। এখানে সক্ষমতারও বিষয় আছে। ছাত্রদেরও সেই সক্ষমতা তৈরি করা, মানুষকে বোঝানো, তাদের সাংগঠনিক বিকাশ কীভাবে হচ্ছে। সেখানে তারা নতুনত্ব আনতে পারছে কিনা। একটা নৈতিক নতুন আলোচনা তারা সমাজের মধ্যে বিকাশ ঘটাতে পারল কিনা, তাও দেখার আছে।
সমকাল: নতুন বছরে অর্থনীতির কথায় যদি আসি, বাংলাদেশ কি মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে, যার জন্য আপনি অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: অবশ্যই। আমাদের পরিসংখ্যানে যে ঘাপলা ছিল, সেটা তো বেরিয়ে এসেছে। আমাদের অগ্রগতি হয়েছে বটে। কিন্তু বাঁক বদল করার মতো উন্নতি কতটা হয়েছে? তার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হলো, এখনও আমরা প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে চিহ্নিত করি পোশাকশিল্প ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সকে। দুটোরই ‘সেলিং পয়েন্ট’ হচ্ছে সস্তা শ্রম। আমরা সস্তা শ্রমের অর্থনৈতিক একটা অবস্থার মধ্যে আটকে আছি। সেখান থেকে উৎপাদনশীল শ্রমে উত্তরণ ঘটাতে পারছি না। তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশে রাখা যাচ্ছে না। কারণ এখানে আকর্ষণ নেই। আবার ৪০ শতাংশ তেমন কিছুই করছে না। ফলে মধ্যম আয়ের ফাঁদ উতরানো সহজ নয়। তবে এখান থেকে বের হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও আছে।
সমকাল: যেমন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: দৃশ্যমান কিছু দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে বটে, আমাদের ব্যবসার অন্যতম বাধা হলো সময়ক্ষেপণ। হয়রানির বাস্তবতা এখনও শেষ হয়নি।
সমকাল: বেকারত্বও উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান: এখন বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে আমাদের নজর বেশি গেছে। তার সংগত কারণও আছে। সামষ্টিক অর্থনীতি নাজুক ছিল, সেটা মেরামত করবে, ঠিক আছে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা যদি না ঘোরানো হয়, তবে বেকারত্বের মতো সংকট বাড়বে। এখন রিজার্ভে টান পড়ছে না, কারণ আমদানি হচ্ছে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না হওয়ার কারণে আমদানি হচ্ছে না। অর্থনৈতিক স্থবিরতাও বড় সমস্যা।
সমকাল: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমাদের নতুন প্রবৃদ্ধির চালকগুলো খুঁজতে হবে। যেমন কৃষি একটা। প্রবৃদ্ধির চালক হওয়ার জন্য কৃষির বিশাল সম্ভাবনা আছে। নির্বাচন কবে হবে, সে আলোচনার পাশাপাশি নতুন প্রবৃদ্ধির চালক খুঁজলে সেটা অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। আইটি সেক্টর নতুন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এ সেক্টরে বড় কিছু আমরা দেখাতে পারিনি যে এর বাজার ১০-২০ বিলিয়ন হয়ে গেছে। ২০২৫ সালে এমন খাত খুঁজতে গেলে ব্যবসায়ী মহল, অর্থনীতির ব্যক্তি খাতে যারা যুক্ত, তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কোথায় নীতি সহায়তা দিতে হবে, তাও দেখা দরকার।
সমকাল: মূল্যস্ফীতি যেভাবে বাড়ছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও সেভাবে বাড়ানো উচিত নয় কি?
হোসেন জিল্লুর রহমান: সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ– টিসিবির লাইন দেখলেই বুঝতে পারি। সামাজিক নিরাপত্তায় জোরালো আলোচনা দরকার। সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার পরিসর কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা দেখা দরকার।
সমকাল: বৈদেশিক বিনিয়োগেও এক ধরনের স্থবিরতা স্পষ্ট…।
হোসেন জিল্লুর রহমান: বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার জন্য বিদেশিরা দেখবে এখানে জমি আছে কিনা, সহজে ইউটিলিটি পাচ্ছি কিনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস তথা সহজে ব্যবসা করার সূচক কেমন। সে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। এমনকি দেশি বিনিয়োগও হচ্ছে না। এক ধরনের ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ বা অপেক্ষা করার মতো অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এই বাস্তবতা কীভাবে কাটানো যায়, সেখানেও মনোযোগী হতে হবে।
সমকাল: ২০২৫ সালে সরকারের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, নির্বাচন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: কেবল নির্বাচনই অগ্রাধিকার নয়। এখন সংস্কার অগ্রাধিকার; অর্থনীতিকে সচল করা অগ্রাধিকার; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তৃত করা অগ্রাধিকার; মানবাধিকার ও মর্যাদার জায়গা নিশ্চিত করা অগ্রাধিকার এবং ক্ষমতার দম্ভ যেন ফিরে না আসে, সেটাও অগ্রাধিকার। কোনোটা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তবে লং লিস্ট বানিয়ে ভজঘট পাকিয়ে ফেললাম, তাও হবে না। আমাদের অগ্রাধিকারগুলো স্ট্র্যাটেজিক্যালি চিন্তা করতে হবে। কৌশলগত চিন্তার একটা সক্ষমতা দেখাতে হবে।
সমকাল: আপনার সর্বশেষ বার্তা কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের ব্যাপক কৌতূহল, আস্থা ও শুভকামনা আছে। তার ফল আমরা ঘরে তুলতে পারছি কিনা, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্য ইকোনমিস্ট যে বাংলাদেশকে বর্ষসেরা করল, সেটাও তার প্রমাণ। বিশ্ববাসী ভাবছে, বাংলাদেশ এত করছে তাকে সহায়তা করা দরকার। কিন্তু এটা বলে তারা পকেট উজাড় করে দেবে না। এর পরের কাজ আমাদের। সে কাজ করতে হবে। তাদের আস্থা তৈরির কাজটা আরও জোরালো করা যায় কিনা, সেটা ভাবতে হবে।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হোসেন জিল্লুর রহমান: সমকালকেও ধন্যবাদ।