শান্ত জিনিসই বুঝি মানুষকে বেশি নাড়া দেয়; সমুদ্রতীরে পড়ে থাকা আইলান কুর্দির নিথর দেহ নাড়া দিয়েছিল বিশ্বকে। এখন নাড়া দিয়েছে নিস্তব্ধ ওমরান দাকনিশের ছবিটি। পাঁচ বছরের শিশু ওমরান একটি অ্যাম্বুলেন্সে বসে আছে। মাথা বেয়ে রক্ত পড়ছে। ধূলি-ধূসরিত গা। মুখের ওপর রক্ত জমাট বাঁধা। ওমরান নির্বিকার। কিন্তু তার ছবি সরব হয়ে ঘুরছে দেশে দেশে, অন্তর্জ্বালে নানা মানুষের টাইমলাইনে।
ওমরান যে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ার শিশু, ছবিই সে প্রমাণ দিচ্ছে। সেখানকার আলেপ্পো শহরে তাদের বাস। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিমান হামলায় তাদের বাসরত বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে ওমরানকে উদ্ধার করে বসানো হয় অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ারে। সে ঘটনায় ওমরানের প্রায় পুরো পরিবার আহত হয়। এমনকি আহত হওয়া ওমরানের বড় ভাই আলির মৃত্যু হয় শনিবার। আলিও শিশু, ওমরানের চেয়ে মাত্র পাঁচ বছরের বড়।
ওমরান শান্ত থাকলেও অশ্রু ঝরেছে চিকিৎসকের, কেঁদেছে সংবাদ উপস্থাপক, হতবাক হয়েছে বিশ্ব। ওমরানের শিশুসুলভ চপলতা নেই, রক্ত দেখেও ভাবান্তর নেই; হয়তো সে বুঝতে চেষ্টা করছে পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর। বাড়ি-সমুদ্র কোথায়ও তারা নিরাপদ নয়। নিরীহ শিশু পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার কাছে যে বড়ই অসহায়। তবে সে কেঁদেছিল হাসপাতালে তার মা-বাবাকে দেখে। নইলে এত শোক কেমনে সইবে ওমরান।
এটিই সিরিয়ার নিত্যচিত্র। সেখানে সংঘর্ষে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা গেছে। কেবল আলেপ্পোয়ই নাকি গত পাঁচ বছরে মারা গেছে সাড়ে চার হাজার শিশু। ওমরানের এ ভয়ঙ্কর ছবি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়, তখন মানুষ টুইট করছে, এটি কোনো ছবি কিংবা টেলিভিশনের শো নয়, এটিই সিরিয়ার মানুষের বাস্তবতা। কেউ বলছেন, এ ঘটনার পর আমরা মানুষ নই, যেখানে বিশ্ব মোড়লরা মৃত্যু নিয়ে খেলা করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন সরব, তখন বিবিসি প্রশ্ন করছে, ক্যান সোশ্যাল মিডিয়া সেভ সিরিয়া'স চিলড্রেন? সামাজিক মাধ্যম কি সিরিয়ার শিশুদের রক্ষা করতে পারবে? ওমরানের ছবি ধরেই বিবিসি বলছে, কেবল ওমরানই প্রথম নয়। বিবিসি সিরিয়ার আরও কয়েকজন শিশুকে নিয়ে আলোচনা করেছে। ঘিনা ওয়াদি অন্যতম। ১০ বছরের শিশু ঘিনা তার মায়ের জন্য ওষুধ আনতে বাইরে বের হয়ে গুলির শিকার হয়। সরকার প্রথমে তাকে চিকিৎসার জন্য শহরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় হয়। এরপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘের চাপে অবশেষে তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ওমরানের ঘটনায়ও যখন বিশ্ব মিডিয়া সরব, তখন রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলছে, জাতিসংঘের আহ্বানে তারা সিরিয়ায় সংঘাতপূর্ণ শহর আলেপ্পোতে অস্ত্রবিরতি করতে পারে।
মিডিয়া যা-ই হোক তার একটা শক্তি নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বছরের পর বছর সিরিয়ায় যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে, তা মেনে নেওয়ার নয়। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে সার্জন ডা. ডেভিড নট লিখেছেন, ওমরানের ছবি অবশ্যই সিরিয়া যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট হবে। আমরাও তা চাই। দিনের পর দিন এ বর্বরতা কেউই দেখতে চায় না। নিরীহ শিশুদের ওপর নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। ওমরানের নীরব ছবিও যে তা-ই বলছে।
Wow ! such a heart touching one !
Inspired, many thanks Wasim vai,