Mahfuzur Rahman Manik
পূর্বাচলে ঢাবি ক্যাম্পাস : গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল!
নভেম্বর 2, 2022

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে জল্পনা-কল্পনা অনেক দিনের। অবশেষে ঢাকার অদূরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৫২ একর জমি ২০১৮ সালে বরাদ্দ পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু বুধবার সমকালে 'পূর্বাচলের জমি নিতে ঢাবির অপারগতা!' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওইদিনই অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপারগতা তথ্যটি অসত্য বলে প্রতিবাদ জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পূর্বাচলে বরাদ্দকৃত ৫১.৯৯ একর জমির চূড়ান্ত বরাদ্দ প্রাপ্তির লক্ষ্যে সানুগ্রহ অনুশাসন প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি আবেদন পাঠিয়েছেন।

প্রশ্ন হলো- তা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপারগতার বিষয়টি উঠছে কেন? এর উত্তরটি কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেই স্পষ্ট। যেটি সমকালের প্রতিবেদনেও এসেছে, পূর্বাচলে ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজউক জমির প্রাথমিক বরাদ্দ দিলেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জমিটি বুঝে পায়নি। প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য সরকারের সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। এ জমি পেতে কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ দরে মোট ৪৭০ কোটি টাকা রাজউককে দিতে হবে। এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে, অন্যদিকে সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ৫২ একর থেকে ১০ একর জমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নামে বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

তার মানে, দুটি বিষয় দাঁড়াল- একদিকে সরকারি অর্থ না পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। দ্বিতীয়ত, সরকারি তহবিল পেলেও অন্তত ১০ একর জায়গা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়টি পাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় 'অপারগ' কিনা সেটি এখানেই স্পষ্ট। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, পূর্বাচলের প্রস্তাবিত ওই জমিতে 'ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ক্যাম্পাস' তৈরির জন্য ধারণাপত্র তৈরি ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা কি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল নয় কি!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ওই জমি ক্রয়ের অর্থ সরকারের তহবিল থেকে দেওয়ার আবেদন করাটা যথার্থ নিঃসন্দেহে। কিন্তু এটা তো প্রাথমিক প্রক্রিয়া। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যখন আশ্বাস পাওয়া যাবে, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিকল্পনায় হাত দিতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও নিজস্ব তহবিল থাকার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ করত এবং এরপর যদি বলত, এ পরিমাণ তহবিল আমরা জোগান দিচ্ছি বাকিটা সরকার থেকে দিতে হবে, সেটাও যুক্তিগ্রাহ্য হতো এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস যে বিশ্ববিদ্যালয়টির সত্যিই প্রয়োজন তার প্রমাণ পাওয়া যেত।

আমরা জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জমিই বেহাত হয়ে আছে। ১৯২১ সালে প্রায় ৬০০ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ১৯২৭ সালে একটি সরকারি কমিশন ২৫৭ একর অনুমোদনের প্রস্তাব করে। যদিও শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পায় ২৫২ একর জমি। এ জমি যে অপ্রতুল তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাগত দাবির মুখে ১৯৫০ সালে বিচারপতি ফজলে আকবর কমিশনের রিপোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও ৬৩ একর জমি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের বদলে পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ক্রমাগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কমতে থাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় নিজের কেনা জমিও বেহাত হয়ে আছে। চেষ্টা করেও যখন সে জমি উদ্ধারে যখন বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যর্থ তখন উঠে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দাবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস যে প্রয়োজন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অন্তত তিন দশকের এ দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রস্তুতি কতটা। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করতে পারেনি? দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য কেনইবা সম্পূর্ণরূপে সরকারের ওপর নির্ভর করতে হবে? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় তহবিলের জোগান দেবেন। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ও তৎপরতা সে লক্ষ্যে হওয়া প্রয়োজন বৈকি।

সমকালে অনলাইনে প্রকাশ ২৮ অক্টোবর ২০২২

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।