Mahfuzur Rahman Manik
থাই গুহার কিশোররা
জুলাই 8, 2018
কিশোরদের উদ্ধার অভিযান

থাইল্যান্ডের তো বটেই, গোটা বিশ্বেরও দৃষ্টি ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের থাম লুয়াং নামক থাই গুহার দিকে। যেখানে আটকে পড়েছে থাইল্যান্ডের ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। ২৩ জুন ফুটবল টিম খেলার পর তারা দেশটির চিয়াং রাই প্রদেশের ওই গুহায় প্রবেশ করে। গুহায় প্রবেশ করার পরই প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারা গুহায় আটকা পড়ে। এরপর তাদের উদ্ধারে শুরু হয় অভিযান। ৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর তাদের সন্ধান পায় উদ্ধারকারী ডুবুরিদের একটি দল। তারা এমন জায়গায় আটকা পড়ে, যেখান থেকে বের হতে ডুবুরির মতো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে আসতে হবে। অন্যথায় বন্যার পানি কমা পর্যন্ত কয়েক মাস তাদের সেখানে থাকতে হতে পারে। সমস্যা হলো বালকদের কেউ সাঁতার জানে না। আশার দিক হলো, গুহায় থাই নৌবাহিনীর টিম পৌঁছেছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, খাদ্য-পানীয় ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। এমনকি বালকদের সাঁতারও শেখাচ্ছে তারা। কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধারে ঝুঁকি নিতে চায় না। ফলে দেখেশুনেই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এর মধ্যেই বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো শুক্রবার খবর দিয়েছে, বালকদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা গেছেন এক ডুবুরি। সামান গুনান নামে থাই নেভির সাবেক এ সদস্য বালকদের উদ্ধারে স্বেচ্ছায় গুহায় গিয়েছিলেন। তিনি অক্সিজেন সরবরাহ করতেন। গুহা থেকে বের হওয়ার সময় অক্সিজেন সংকটে নিজেই প্রাণ হারান। অবশ্য কিশোরদের উদ্ধার অভিযানে এক হাজারেরও অধিক উদ্ধারকারী অংশ নেয়, যেখানে থাই নৌবাহিনীর বিশেষ ডুবুরি দল ছাড়াও ইংল্যান্ড, চীন, অস্ট্রেলিয়া, লাওসসহ কয়েকটি দেশের বিশেষজ্ঞ আছেন। আছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও।

গুহায় আটকে পড়ার কাহিনী কেবল এটাই প্রথম নয়। যুগে যুগে নানা সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা দেখছি, গুহায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে সংগঠনও কাজ করছে, তারই একটি 'কেভ রেসকিউ অর্গানাইজেশন', তেমনি আছে 'ব্রিটিশ কেভ রেসকিউ কাউন্সিল'। ২০১০ সালে চিলির খনিতে আটকাপড়া ৩৩ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। শ্রমিকরা দীর্ঘ ৬৯ দিন ভূমি থেকে ২ হাজার ৫০ ফুট নিচে আটকা ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমস ৩ জুলাই 'ফাইভ কেভ রেসকিউস দ্যাট ওয়ার্কড' তথা পাঁচটি সফল গুহা উদ্ধার অভিযান শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে জার্মানি, মেক্সিকো, আমেরিকায় এ রকম অভিযানের কথা আছে। এসব উদ্ধার অভিযানে ব্রিটিশদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। থাইল্যান্ডের এ ঘটনায়ও ইতিমধ্যে ব্রিটিশরা কিশোরদের উদ্ধার অভিযানে নেমেছে।

আমাদের দেশে উদ্ধার অভিযানে সাধারণত ফায়ার সার্ভিস কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফল। যদিও ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর শাহজাহানপুরের ৪ বছরের শিশু জিহাদ উদ্ধারের ঘটনা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক হয়েই থাকবে। বিকেলে খেলতে গিয়ে পানির পাম্পে পড়ে যায় শিশুটি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নানা চেষ্টা করেও খুঁজে পাননি। ২২ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যখন তারা কার্যক্রম স্থগিত করে, তারপর সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায় ২৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয় জিহাদকে। তবে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। সে ঘটনায় মানুষ বিক্ষোভ করে 'আমার ভাই জিহাদ মরল কেন' বলে স্লোগান দেয়।

থাইল্যান্ডের ঘটনায় সবার প্রার্থনা, ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ জীবিতই উদ্ধার হবেন। যদিও হুমকি খারাপ আবহওয়া। তাদের উদ্ধারে একজনের মৃত্যু বৃথা যেতে পারে না। উদ্ধার কাজে সরাসরি অংশ নেওয়া হাজারো মানুষের শ্রম আর আমাদের প্রত্যাশা সফল হবে, এটাই বিশ্বাস।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।