
বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হলেও কার্যত প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ থেমে নেই। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এ ব্যাগ বিশ্বে অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। কোনো কোনো দেশের বিশেষ শহর ও সুপার মার্কেটে নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। ৮ জুন ইংল্যান্ডের দ্য গার্ডিয়ানের পরিবেশ বিভাগের অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। শিরোনাম- প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যান : হোয়াট আর দ্য অল্টারনেটিভস অর্থাৎ প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ, তাহলে বিকল্প কী? ৫৫ সেকেন্ডের এ ভিডিও বলছে, ১ জুলাই থেকে অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ সুপার মার্কেটে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরি, কুইন্সল্যান্ড, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি (এসিটি) ও অস্ট্রেলীয় দ্বীপ তাসমানিয়ায় একক প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হচ্ছে ওই দিন থেকেই। এ অবস্থায় কয়েকটি বিকল্প ব্যাগের কথা এসেছে ভিডিওতে। সেগুলো হলো, রিইউজেবল বা পুনরায় ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যাগ, প্লাস্টিক মিক্স ব্যাগ, চিলের ব্যাগ, রিইউজেবল ক্যানভাস ব্যাগ। চিলের ব্যাগ একধরনের কাপড়ের ব্যাগ আর ক্যানভাস ব্যাগ তুলা দিয়ে তৈরি। তবে এগুলোর দাম অনেক। সেখানে এক ডলার তথা বাংলাদেশি ৮৪ টাকায় ৫টি রিইউজেবল প্লাস্টিক ব্যাগ পাওয়া যায়। প্লাস্টিক মিক্স ব্যাগের গড় দাম এক ডলার। চিলের ব্যাগ ও ক্যানভাস ব্যাগের দাম যথাক্রমে আড়াই ও তিন ডলার।
ওদের বিকল্প ব্যাগের তালিকায় পাটের ব্যাগ আছে কিনা সে কৌতূহল থেকেই আসলে আগ্রহ নিয়ে ভিডিওটি দেখা। কিন্তু পাটের ব্যাগ নেই। হয়তো না থাকাটাই স্বাভাবিক। যেখানে আমরা নিজেরাই পাটের ব্যাগ ব্যবহার করছি না, সেখানে ওদের ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। বাস্তবে তা ঘটতেও পারত। বিশ্বব্যাপী এখন প্লাস্টিকের বিকল্প খুঁজছে সবাই। এ অবস্থায় আমরা সে রকম পাটের ব্যাগ তৈরি করতে পারলে, এখানে তা জনপ্রিয় হলে ওদের বিকল্পের তালিকায় থাকা অস্বাভাবিক ছিল না।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পলিথিনের বিকল্প পাটের তৈরি 'সোনালি' ব্যাগের খবর আমরা দেখেছি। বলা হয়েছে, এ ব্যাগ হবে অবিকল বাজারে প্রচলিত পলিথিনের মতোই। এটি টেকসই, হালকা এবং দ্রুত পচনশীল। ব্যবহারের পর ফেলে দিলে মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। পুড়িয়ে ফেললে ছাই-ভস্মে পরিণত হবে। নতুন ধরনের এই ব্যাগের পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ খান এর উদ্ভাবক। গত ডিসেম্বরে এ ব্যাগ উৎপাদনের কথা ছিল, অবশেষে এ বছরের এপ্রিলে তা উৎপাদনের খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। প্রাথমিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে দৈনিক তিন টন। সরকারিভাবে এ ব্যাগ উৎপাদন হলেও বাণিজ্যিকভাবে যে এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা বলা যায়। জানা গেছে, স্বল্প পরিমাণে সোনালি ব্যাগ উৎপাদিত হওয়ায় এর বিপণন এখনও সীমিত। প্রতি ব্যাগের দাম তিন থেকে চার টাকা। অধিক পরিমাণ উৎপাদিত হলে দাম প্রতিটি ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে।
বলা বাহুল্য, এ সোনালি ব্যাগ আমদানির জন্য ইতিমধ্যে আলোচ্য অস্ট্রেলিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমনকি জাপান, আরব আমিরাতেরও আগ্রহ রয়েছে। পূর্ণোদমে চালু হলে আরও অনেক দেশও তার সুফল নিতে চাইবে। ফলে এ ব্যাগের ব্যাপারে সরকার ভালোভাবে চিন্তা করুক। পলিথিন ব্যাগ যথার্থভাবে মোকাবেলা করতে হলেও এ রকম ব্যাগ প্রয়োজন।
এ বছরের পরিবেশ দিবসে বিশ্ব যখন প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ; আমরা যখন সোচ্চার পলিথিনের বিরুদ্ধে; একই সঙ্গে পাটের বহুমুখী ব্যবহার যখন আবশ্যক, তখন আর বসে থাকা কেন। পাটের ব্যাগ দিয়েই আমাদের বিশ্বজয় করার সুযোগ যে এখনি!