Mahfuzur Rahman Manik
পোকেমন আলোড়ন
আগস্ট 14, 2016

pokemon-go-demo-londonআনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, প-য়ে পাগলামি প-য়ে পোকেমন। কিন্তু পোকেমন নিয়ে মাতামাতি একে 'পাগলামি' ছাড়িয়ে সিরিয়াসের চেয়েও বড় বিষয়ে পরিণত করেছে। পোকেমন নিয়ে হেন ঘটনা নেই, যা ঘটেনি। পোকেমন মানুষ হত্যা করেছে। পোকেমন প্রাণ বাঁচিয়েছে। পোকেমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এটা দিয়ে পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছে। দেশে দেশে এটি নিষিদ্ধ হচ্ছে। একজন শিক্ষকতা ছেড়ে পোকেমন খেলোয়াড় হয়েছেন। এর জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে নানা সতর্কতাও জারি হয়েছে।
যদিও আদতে এটি একটি খেলা। মোবাইলের গেম খেলা। পূর্ণ নাম পোকেমন গো। তবে এটি আর দশটি খেলার মতো নয়। মোবাইলে এটি খেলার সঙ্গে সঙ্গে পোকেমন ধরার জন্য বাইরে যেতে হয়। গেমটিতে ভালো করার কৌশল হলো ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় যেতে হবে আর হাঁটার সময় আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে, কখনও কখনও একটু অপেক্ষা করার পর একটি এলাকায় নতুন পোকেমন তৈরি হয়। এটি ধরতে গেমারকে এমনকি দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হতে পারে। পোকেমনের শুরুটা দুই দশক আগে হলেও নতুনভাবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আসে যুক্তরাষ্ট্রে। এর পর ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে চালু হয়।
পোকেমন গো আসার পর থেকেই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। প্রথম সপ্তাহেই এটি যে কোনো অ্যাপের চেয়ে বেশি ডাউনলোড হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকেও ব্যাপক সফলতার মুখ দেখে গেমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বাজারে উন্মুক্ত করার পাঁচ দিনের মধ্যে নিনটেন্ডোর বাজারদর ৯০০ কোটি ডলার বেড়ে যায়। সিএনএন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্সরটাওয়ার সূত্র বলছে, পোকেমনে ফেসবুক, টুইটারের চেয়ে বেশি সময় মানুষ ব্যয় করছে।
পোকেমন গো আসার পর থেকেই এ-সংক্রান্ত নানা সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। এটি কেবল মানুষের মধ্যেই তোলপাড় সৃষ্টি করেনি, রাষ্ট্রের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাশিয়ার খবর তো রীতিমত টাসকি খাওয়ার মতো। বুধবার গার্ডিয়ান লিখেছে, হোয়াই ইজ রাশিয়া সো ডিস্ট্রাস্টফুল অব পোকেমন গো? পোকেমন গো নিয়ে রাশিয়ার সন্দিগ্ধ হওয়ার প্রথম কারণ এটি পশ্চিমাদের তৈরি। রাশিয়ানরা অভিযোগ করছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পোকেমনের ব্যাপারে আগ্রহী। তারা রাশিয়ায় পোকেমন জিম স্থাপন করেছে। টকশোতে রাশিয়ার এক মনস্তত্ত্ববিদ বলেছেন, রাশিয়ার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণকে বন্ধ্যা করার জন্য পোকেমন গো পশ্চিমা উদ্যোগ। সেখানকার অনেক রাজনীতিবিদই খেলাটি রাশিয়ায় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, পোকেমন খেলার সময় খেলোয়াড়দের ফোনের মাধ্যমে সেনসিটিভ ডাটা অন্যরা পেয়ে যাবে। রাশিয়ায় যখন এ অবস্থা তখন প্রথম দেশ হিসেবে ইরান গত সপ্তাহেই পোকেমন খেলা নিষিদ্ধ করেছে।
অবসর কাটানোর জন্য পোকেমন নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে অনেকের প্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শাহরুখ খানের মতো তারকারাও কি অবসরে পোকেমন খেলেন? নইলে যে তিনি শুক্রবারই টুইট করেছেন, দ্য ব্রাইটার সাইড ইজ হোয়াইল ওয়েটিং কট সাম রিয়েলি নাইস পোকেমনস। আসলে কিং খানকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে হেনস্তা করা হয় তখন অপেক্ষমাণ সময়ে পোকেমন ধরার কথা টুইট করেছেন। কে জানে তিনি আসলেই ধরেছেন কি-না। কারণ ভারতে এখনও অফিসিয়ালি পোকেমন আসেনি। আসার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ তো আরও পরে। তার পরও অনেকেই আসার জন্য অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে পোকেমনবিডি নামে ফেসবুকে অনেকে পেইজ খুলেছেন।
পোকেমন ধরতে না পারলেও তার উত্তেজনা হয়তো আমরা ধরতে পেরেছি।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।