Mahfuzur Rahman Manik
বিশ্ব উদ্বিগ্ন: বারাক ওবামা
এপ্রিল 2, 2016
পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ

পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার আজ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় হুমকি। সাত বছর আগেই আমি চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে জাতিসংঘের কাছে এই অস্ত্রের বিস্তার রোধ ও পারমাণবিকমুক্ত বিশ্বের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। আমার আগে রোনাল্ড রিগ্যানসহ ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান কয়েকজন প্রেসিডেন্টও এ স্বপ্ন দেখেছিলেন। রোনাল্ড রিগ্যান বলেছিলেন, 'আমরা চাই একদিন পৃথিবী থেকে পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হবে।'
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আমাদের চতুর্থ পারমাণবিক নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রাগের কর্মসূচি এগিয়ে নিতে আমি ৫০টিরও বেশি দেশের নেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। সন্ত্রাসীরা যাতে পারমাণবিক অস্ত্র হাতে না পায় এবং ব্যবহার করতে না পারে, সেটা আমাদের এজেন্ডা। আমরা আমাদের অবস্থা পর্যালোচনা করব। যেমন এক ডজনেরও বেশি দেশ ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়ামে সমৃদ্ধ হয়েছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘ নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবো। পারমাণবিক নিরাপত্তা জোরালো করতে আমরা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ক্রমশ শক্তিশালী করব।

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক আইএসআইএল বা আইএসআইএস জাতীয় সন্ত্রাসী সংগঠন যারা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে, তারা যাতে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্র না পায়, সে ব্যাপারে সন্ত্রাসের বিপরীতে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা একটি মিত্র বলয় গড়ে তুলব। সেখানে প্রচেষ্টাগুলোর পর্যালোচনা করব।
পারমাণবিক সন্ত্রাস নির্মূল করা ছাড়াও আমি প্রাগে যে লক্ষ্যের কথা বলেছি, সে ব্যাপারে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রথমত, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি। নিউ স্টার্ট চুক্তির শর্তানুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ২০১৮ সালের মধ্যে তাদের পারমাণবিক বিস্ফোরক কমিয়ে আনতে একটি নির্দিষ্ট ধারায় রয়েছে। ১৯৫০-এর দশকের পর এটিই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমাদের যে কোনো মিত্র দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও বিরোধীদের নিবারণে এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নিরাপদ ও কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্রাগার রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে আমি পারমাণবিক অস্ত্রের ভূমিকা কমিয়েছি। আমি নতুন পারমাণবিক বিস্ফোরক তৈরির উদ্যোগ বাদ দিয়েছি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে, ভবিষ্যতে এমন পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করেছি।
দ্বিতীয়ত, আমরা একটি বৈশ্বিক ক্ষেত্রে পারমাণবিক বিস্তার রোধের চুক্তি শক্তিশালী করেছি। বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সামর্থ্য হয়েছি, এ ক্ষেত্রে ইরানের কথা বলতেই হবে। প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক সমাধান অগ্রাহ্য করায় ইরানের ওপর অবরোধ আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে যারাই পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে ব্যর্থ হবে, তারাই আন্তর্জাতিক অবরোধের মুখে পড়বে। তবে ঐকান্তিক আলোচনার পর অবশেষে ইরান পারমাণবিক গবেষণা থেকে সরে আসতে রাজি হয়েছে। ফলে ইরান এ চুক্তির কারণে এখন আমাদের সতর্ক নজরদারিতে রয়েছে।
তৃতীয়ত, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আমরা একটি কাঠামো দাঁড় করাচ্ছি। সাত বছর আগে আমি আন্তর্জাতিক তেল সংরক্ষণাগার তৈরির ব্যাপারে যে বলেছি সেটি এখন কাজাখস্তানে তৈরি হচ্ছে।
আমাদের উন্নতি হচ্ছে; তথাপি আমি বলছি, কাজ এখনও শেষ হয়নি। চুক্তি ভঙ্গের কারণে রাশিয়াকে আমরা বারবার বলছি চুক্তির শর্তগুলো পুরোপুরি মেনে নিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একত্রে ৯০ শতাংশেরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। এখন আমাদের পরবর্তী মজুদ কমাতে আলোচনা করা উচিত।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

সাম্প্রতিক পারমাণবিক পরীক্ষা ও মিসাইল নিক্ষেপসহ উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত উস্কানি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল কর্তৃক পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপ হয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাজ করে যাবে।
প্রাগে আমি বলেছিলাম, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব হয়তো দ্রুত গড়া সম্ভব নয়। এমনকি আমাদের জীবদ্দশায়ও হয়তো নয়। তবে আমরা শুরু করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৈতিকতার দিক থেকে এ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার। তবে বৈশ্বিক বাস্তবতায়, আমাদের অবশ্যই পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।