পিপার স্প্রের পরিচয় অনেকে অনেকভাবে পেয়েছেন। তবে কেউ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন বলে মনে হয় না। এটি যখন দমনের হাতিয়ার; অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নামলে যখন এর সম্মুখীন হতে হয়; আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে যখন এটি মোক্ষম অস্ত্র; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শেষ ভরসা এই পিপার স্প্রে; তখন এর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক। গোল মরিচ বা এ রকম মসলাজাতীয় পদার্থের গুঁড়া মিশ্রিত তরলের নিক্ষেপ বা পিপার স্প্রে বন্ধের দাবিও অনেকের। এটি বন্ধে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার ঘটনা আমরা দেখেছি। এমনকি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে এক আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া পিপার স্প্রের কারণে শিক্ষক মারা যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অথচ বুধবার সে পিপার স্প্রে-ই কি-না উপহার হিসেবে দেওয়ার খবর দিয়েছে বিবিসি।
উপহার হিসেবে প্রত্যেকে তার প্রিয় জিনিস দেন, কিংবা যাকে তা দেবেন তার পছন্দও এখানে বিবেচনার বিষয়; প্রয়োজনও এখানে ব্যাপার হতে পারে। এখানে হয়তো তা-ই ঘটেছে। ৮ মার্চ মঙ্গলবারের নারী দিবসে 'ভয়ঙ্কর' এই পিপার স্প্রে উপহার দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে।
সেখানকার ফনটেভিভো শহরের মেয়র নারীদের এটি উপহার দেওয়ার মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছেন। দিনটিতে নারীদের ফুল না দিয়ে কেন এ অস্বাভাবিক উপহার? মেয়র টমাসো ফিয়াজা বলছেন, 'ফুল নিশ্চয়ই সৌন্দর্যের প্রতীক, তবে নারী এখনও পিছিয়ে এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে আমরা তাদের আত্মরক্ষার জন্য সহায়তা করতে চাইছি।' তিনি যোগ করছেন, 'এই সাধারণ কিন্তু কার্যকর অস্ত্র নারীদের অপরাধী থেকে নিরাপত্তা দেবে।' তবে মেয়র ফিয়াজার প্রত্যাশা, 'নারীদের কখনোই এটি যেন ব্যবহার করতে না হয়।'
খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, নারীর নিরাপত্তায় এই পিপার স্প্রের আলোচনা আগে থেকেই চলে আসছে। ২০১৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে 'দ্য ডিফেন্ডার'। মূলত এটি স্মার্টফোনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া পিপার স্প্রে। তবে এর উপকারিতা নাকি আরও বেশি। যেখানে একটি বোতামে চাপ দিলে একদিকে যেমন মরিচের গুঁড়া বের হবে, তেমনি অল্প সময়ে গোপন ক্যামেরায় উঠে যাবে আক্রমণকারীর ছবি। আর থানায়ও পেঁৗছে যাবে এ ঘটনা। এ খবরের পর একই বছরের সেপ্টেম্বরে নারীঘটিত অপরাধ ঠেকাতে ভারতে কলকাতার পুলিশ ১২ দফা আচরণবিধি প্রকাশ করে। যার অন্যতম হলো, পিপার স্প্রে সঙ্গে রাখা। কলকাতায় অবশ্য পুলিশের ১২ দফা নিয়ে বিতর্ক হলেও তাদের পিপার স্প্রের চিন্তাটি যে যথার্থ ছিল তা বলাই যায়। তবে এরপর দেখা গেল কোনো কোনো ফ্যাশন ম্যাগাজিন-অনলাইন পোর্টাল নারীদের পিপার স্প্রে তৈরি করার পদ্ধতিও তালিম দিয়েছে। বলা বাহুল্য, পুরুষও যে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় পিপার স্প্রে ব্যবহার করে সে উদাহরণও রয়েছে। ভারতেরই লোকসভায় ২০১৪ সালের প্রথম দিকে এক সংসদ সদস্য অন্য সদস্যের উদ্দেশে পিপার স্প্রে ছুড়েছেন। সে এমপি রাজাগোপালেরও দাবি 'আত্মরক্ষায়' তিনি পিপার স্প্রে করেছেন। অবশ্য ঘটনাটি নেতিবাচক। যাকে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছিল, 'পার্লামেন্টে মরিচের গুঁড়া ভারতের গণতন্ত্রকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে।'
এটা হয়তো সবাই জানেন, 'ভয়ঙ্কর' এই পিপার স্প্রে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে নারীর নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব নয়। তারপরও অন্যতম উপায় হিসেবে এটি ভালো আইডিয়া বটে। তবে এর ব্যবহার তখনই করতে হবে, যখন কেউ নারীর দিকে অপরাধীর হাত দেবে। আমরা তো চাই, নারীর দিকে কেউ অপরাধীর 'হাত' কেন 'চোখ'ও দেবে না। পিপার স্প্রে উপহারদাতা ইতালির মেয়র ফিয়াজার মতো সবারই প্রত্যাশা, নারীদের কখনোই যেন পিপার স্প্রে ব্যবহার করতে না হয়।