Mahfuzur Rahman Manik
পায়ে কলম, মনে জোর
নভেম্বর 12, 2015

writing-legবিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর বিচিত্র অদম্য শিক্ষার্থীর কথা সংবাদমাধ্যমে আসে। যারা শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারও হাত নেই, পরীক্ষা দিচ্ছেন মুখ দিয়ে; কারও হাত অচল, লিখছেন পা দিয়ে। মনের জোরে তারা হাতের বাধা দূর করেছেন। যদিও মুখ দিয়ে কিংবা পা দিয়ে লেখা কঠিন কাজ। তার ওপর দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা দেওয়া আরও দুঃসাধ্য। এর জন্য নিঃসন্দেহে অনেক দিনের অনুশীলনের প্রয়োজন। অথচ শিক্ষার জন্য এ কঠিন কাজ তারা অনায়াস সাধ্য করেছেন। এমনকি স্বাভাবিক হাত দিয়ে যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের এ সংগ্রাম সবার জন্য অনুপ্রেরণার।
সারাদেশে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলছে। একাধিক সংবাদমাধ্যম শেরপুরের সুরাইয়ার কথা বলেছে। যার দুই হাত অচল; কলম ধরার ক্ষমতা নেই। ঘাড় খানিকটা বাঁকা; সোজা করার সামর্থ্য নেই। সুরাইয়া বিশেষ টেবিলে বসে পা দিয়েই জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এর আগে এভাবে পরীক্ষা দিয়েই সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। একইভাবে মানিকগঞ্জের রুবেল ও পটুয়াখালীর বেলালের খবরও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তারা উভয়ে যথাক্রমে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের কারও হাত নেই। পা দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এ রকম প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও অনেকে যে পা দিয়ে, মুখ দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে সে খবর বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখে আসছি।
তাদের এই সংগ্রামের কারণ একটাই, তারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চায়। ভালো মানুষ হতে চায়। তারা জানে, ভালো মানুষ হতে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষিত হলে শারীরিক বাধা তাদের আটকাতে পারবে না। এটা তো স্পষ্টই বলা যায়, আজ যারা হাতের কঠিন বাধা মনের শক্তি দিয়ে জয় করেছে, কোনো বাধাই তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ আটকাতে পারবে? একই সঙ্গে এটাও বলার বিষয় যে, আজ মানুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা তৈরি হয়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। শিক্ষার গুরুত্ব তারাও বুঝছেন। এখানে প্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা নয়, দরিদ্রতা কোনো উপলক্ষ নয়। একই সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে অনেকে এগিয়ে আসছেন। পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করছেন কিংবা অন্তত শিক্ষায় উৎসাহিত করছেন।
তারপরও অদম্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহই এখানে প্রধান। হাত না থাকলেও কিংবা অচল হলেও বিকল্প ব্যবস্থা তারা করেছে। শরীরের মুখ বা পায়ের মতো অন্যান্য অঙ্গ ব্যবহার করে লেখার কাজ সেরেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুশীলন করেছে। এমনকি অনেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছে।
আমরা জানি না এ রকম সংগ্রামীর সংখ্যা আমাদের সমাজে কত। সবার কথা হয়তো সংবাদমাধ্যমে আসে না। এদের হয়তো অনেকের পারিবারিক অবস্থাও ভালো নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, তাদের যে বিশেষ টেবিল তা অন্যের সহায়তায় বানিয়েছে। এদের সহযোগিতা সবারই কাম্য। এমনিতেই তারা একটা বাধার সম্মুখীন। এ অবস্থায় তারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেলে উদ্যম হারিয়ে ফেলতে পারে। তা যেন না হয় সে প্রত্যাশাই কাম্য। আর তারা যে আমাদের জ্বলন্ত প্রেরণা সে কথা বলাই বাহুল্য।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।