Mahfuzur Rahman Manik
ভালো মানুষের উদাহরণ
অক্টোবর 4, 2015
মানুষ নানাভাবে অনুপ্রাণিত হয়। মাঝে মাঝে এমন কিছুও অনুপ্রেরণার বিষয় হিসেবে হাজির হয় যে বিষয়ে ব্যাক্তি নিজেও হয়তো জানে না। একজনের সঙ্গে আরেকজনের যে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেটাও একটা অনুপ্রেরণার উৎস।
আমার নগণ্য যে লেখালেখি তার সূচনার বিশেষ ঘটনা থাকলেও বলার মত না। তবে তা ধরে রাখার কারণ বোধহয় এটাই ছিলো যে সংবাদপত্র লেখাগুলো ছাপতো। একইসঙ্গে এটাও কারণ যে, আমার মতো তখন অনেকেই লিখতো। তাদের ধারাবাহিকতাও আমার জন্য একরকম ঈর্ষার কারণ ছিলো। ভাবতাম তারা পারলে আমি কেন পারব না। তাদেরই অন্যতম সোহেল নওরোজ।
তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র স্বাভাবিকভাবেই লেখালেখি। আর ঘনিষ্ঠতার কারণও এর বাইরে নয়। তারপর সেটা লেখালেখির গণ্ডি ছাড়িয়ে অনেক দূর বিস্তৃত হয়েছে। কতদূর? তা নিরূপণ করা অসম্ভব। এটি পরিমাপের নির্ধারিত পাল্লা নেই। সেটা হৃদয় ও মনের ব্যাপার।সরাসরি সম্বোধনে তাকে যদিও স্যার ডাকি। মেইলে, মেসেজে স্যারই লিখি। কিন্তু বাস্তবে তা স্যারের ফ্রেমে বাঁধা নেই। এত সহজ সম্পর্ক অথচ গুরুগম্ভীর সম্ভাষণ কেন জানি না। তবে আমার কাছে যেটা মাঝে মাঝে মনে হয়, কাউকে ভাই বললে একটা শব্দ ধরে বলতে হয়। সেখানে সোহেল নওরোজের কাছে এসে যেন তা হয় না। যেমন, সোহেল ভাই বললে আমার কাছে কেমন যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আবার নওরোজ ভাইও মিলে না। একসঙ্গে সোহেল নওরোজ ভাই বললে সম্বোধনে আড়ষ্টতার ব্যাপার থাকে। এজন্য বোধ হয় স্যারই ভালো। এর বাইরে অবশ্য সবার কাছে সোহেল নওরোজই বলি। হয়তো নাম ধরেই বলি। আসলে এটা অন্যের বোঝার জন্য সহজ। কারণ দুইটা শব্দ মিলেই একজন অনন্য সোহেল নওরোজ। বিখ্যাত মানুষের নাম যেমন পুরোটা সবাই বলে- হুমায়ূন আহমেদ বা অমুক।

তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের কিছুটা পরেই দেখা। তাও পাঁচ বছর হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ আমার শেষ হওয়ার পথে। কোনো এক সন্ধ্যায় আমাদের ক্যাম্পাসের নিকটেই নীলক্ষেতে প্রথম সাক্ষাৎ। তারপর থেকেই বেশি ঘনিষ্ঠতা। লেখোলেখি চলছে উভয়েরই। ফাইনাল ইয়ারে তখন বাংলা একাডেমী তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের জন্য আমি ফরম তুললাম। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমার এক বছরের সিনিয়র সোহেল নওরোজের ফরমও আমিই তুললাম। যদিও আমাদের সঙ্গে সে ব্যাচে তাকে শেষ পর্যন্ত পাইনি। কিন্তু পরের এক ব্যাচে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ময়মনসিংহের পাট চুকিয়ে একেবারে ঢাকা এসে। তখন আমার হলে আসতেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আমার রুমমেটদের কাছেও তিনি বিশেষ পরিচিত। কারণ ঢাকায় আসার পর তার প্রথম চাকরির ট্রিট থেকে আমার রুমমেটরাও বাদ যায়নি।
সোহেল নওরোজ কেবল লেখালেখিই করেননি। ক্যারিয়ারেও শাইন করেছেন। সফল মানুষের উদাহরণ দিতে অনেকেই তাকেই টানেন। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক, বিসিএস উভয়টিই জয় করেছেন। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক তারপর বিসিএস সমবায়। এখন আপাতত থিতু হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরশীপ নিয়ে। আমার কাছে অবশ্য ব্যক্তি সোহেল নওরোজই বেশি দামি মনে হয়। তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ। মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, উদারতা, আন্তরিকতা বলে বোঝানো যাবে না। তার প্রমাণ রয়েছে তাঁর কর্মে তেমনি লেখায়।
এবছরের একুশের বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশ হয়। গল্পগ্রন্থ। বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘মেঘবালকের চিঠি’। মেঘবালক হয়ে মেঘপিয়নের মারফতে তিনি চিঠি লিখেন। সেগুলোই নাকি তার লেখা। সংবাদপত্রের পাঠক মাত্রই সোহেল নওরোজ নামটি চেনার কথা। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন- তিনি এত বেশি লিখেন কীভাবে। বলি জানি না। আসলেই জানি না। তবে এটা জানি লেখালেখির প্রতি যে অনুরাগ, প্যাশন থাকতে হয় সেটা সোহেল নওরোজের আছে। এও জানি সোহেল নওরোজ একজন অসাধারণ মানুষ। কতটা অসাধারণ তার সঙ্গে না মিশলে কেউ বুঝবে না। অহংকার করার সকল গুণ থাকলেও নিরহংকারী মানুষটির আজ জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে এই ক্ষুদ্র লেখা আসলে কিছুই না। তারপরও শুভেচ্ছা জানানোর বৃথা চেষ্টা।
ভালো থাকবেন স্যার। দুনিয়াতে ভালো মানুষ যে আছে, আপনিই তার উদাহরণ।
ট্যাগঃ , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।