Mahfuzur Rahman Manik
স্মৃতিচিহ্নে ফেসবুক
জুলাই 1, 2015

remembranceজীবনের সব অনিশ্চয়তার মধ্যে সবচেয়ে নিশ্চিত বিষয় মৃত্যু। মৃত্যু ছাড়াও মানুষ নানাভাবে হারিয়ে যেতে পারে। কেউ হারিয়ে গেলেও কিছু স্মৃতিচিহ্ন রেখে যায়। যেটা তার প্রমাণ বহন করে যে তিনি একদিন ছিলেন। সন্তান-সন্ততি রেখে কেউ মারা গেলে তারাই বড় স্মৃতিচিহ্ন। আরও নানা বিষয়ও তার স্মৃতিচিহ্ন হতে পারে। বড় কেউ মারা গেলে তার বাসভবন, থাকার জায়গা অন্যদের কাছে স্মারক হয়ে ওঠে। যেমন কুমিল্লায় নজরুলের স্মৃতিচিহ্ন কিংবা কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচিহ্ন ইত্যাদি। সাধারণ কিছু কারও কাছে স্মৃতির বিষয় হয়ে থাকতে পারে। কারও রেখে যাওয়া ডায়েরি, লেখা, ছবি, বক্তৃতা কিংবা ব্যবহার্য জিনিসপত্র ইত্যাদিও ব্যক্তির স্মৃতি বহন করে। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে ফেসবুক।
সাম্প্রতিক সময়ে কেউ মারা গেলে সংবাদমাধ্যমে খবরের সঙ্গে তার শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাসও জানানো হয়। গত মে মাসে সিলেটে খুন হওয়া ব্লগার অনন্ত দাশের স্ট্যাটাস সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়। আলোচনায় আসে গত বছর সেন্টমার্টিনে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাবি্বর হাসানের 'নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাওয়া'র স্ট্যাটাসটি। এ রকম নানাজনের শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস খবর হিসেবে এসেছে। সর্বশেষ সোমবার বঙ্গোপসাগরে প্রশিক্ষণ চলাকালে বিমানবাহিনীর এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হারিয়ে যাওয়া পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ রুম্মনের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখেছি আমরা। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এ লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছে। মঙ্গলবারই সমকাল প্রথম পাতায় বিমান বিধ্বস্তের খবরের সঙ্গে তার শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাসের খবরও দিয়েছে। যেখানে তিন দিন আগে ফেসবুকে একটি হাদিস পোস্ট করেন তিনি এবং তার আগের স্ট্যাটাস ছিল এক শিক্ষকের মৃত্যুর স্মৃতিচারণমূলক।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস হিসেবে যা-ই পোস্ট করা হোক, তা যে মরে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মানুষটির অন্যতম স্মৃতিচিহ্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষ ফেসবুকে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তার অবস্থা মানে 'স্ট্যাটাস' শেয়ার করে ফেসবুকের অন্য বন্ধুদের কাছে তুলে ধরেন। ফেসবুকে সক্রিয় এ মানুষটি যখন মারা যাবেন তখন অন্যদের কাছে তার জীবিত সময়ের কর্মকাণ্ড স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কাজ করাটাই স্বাভাবিক। এটা বরং অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা সহজ। এমনকি ফেসবুকও এ সুবিধা রাখছে। ফেসবুক হেল্প সেন্টারে 'মৃত্যুর পর আমার অ্যাকাউন্ট কী হবে' লিখে সার্চ দিয়ে জানা যাচ্ছে, মৃত্যুর পর ব্যক্তির বন্ধু বা পরিবারের সদস্য অ্যাকাউন্টটি 'স্মারক' হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। প্রোফাইলে নামের পরে 'রিমেম্বারিং' শব্দটা লেখা থাকবে। সেখানে বন্ধুরা ব্যক্তির স্মরণে ছবি বা পোস্ট দিতে পারবে। আর মৃত ব্যক্তির পোস্টকৃত সবকিছুও দেখা যাবে। তবে চাইলে সেটা একেবারে বন্ধও করে দেওয়া যাবে।
facebook-status-updatesফেসবুক যে পর্যায়ে গেছে সেখানে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিষয়টি হয়তো অমূলক নয়। যদিও এটা ঠিক, অনেকেই এখনও ফেসবুক ব্যবহার করেন না। তবে বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই যে ফেসবুকে ঝুঁকছে তা অস্বীকার করা যাবে না। ফেসবুক টাইমলাইন যখন ব্যক্তির ডায়েরি ও ক্যালেন্ডারের মতো ব্যবহার হচ্ছে, সব তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ছবি যখন ফেসবুকে সংরক্ষিত হচ্ছে, তখন স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে যেন এটাই জীবন্তমাধ্যম। এমনকি এটা কেবল তার হারিয়ে যাওয়া কিংবা মৃত্যুর পরের বিষয়ই নয়; কেউ বুড়ো হয়ে গেলে সেসব দেখে নিজেও তার স্মৃতিচারণ করতে পারবে। আর অন্যদের জন্য তো স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে থাকছেই।

ট্যাগঃ , , , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।