ওয়াল স্ট্রীট দখলের আন্দোলন আমেরিকার নির্দেশনাকে পরিবর্তন করে দিবে কিনা সে সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে। ওয়াল স্ট্রীট থেকে সে প্রতিবাদ চরম আকার ধারণ করে সাধারণভাবে এখনও সকল ধনি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং প-িত শ্রেণীকে একত্রিত করেছে, যারা সত্যিকারার্থেই সবচেয়ে সম্পদশালি অংশের হয়ে কাজ করছে।
আর এই প্রতিবাদ আপনার সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হাজির করছেÑ অতি মাত্রায় চরমপন্থীরা আমেরিকার মূল্যবোধের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যাদেরকে এফডিআর (ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট) বলছেন, “ইকোনমিক লয়্যালিস্ট” , এরা জুকুটি পার্কে (নিউইয়র্ক এর লিবার্টি প্লাজা পার্ক) অবস্থান কারি নয়।
প্রথম দেখার বিষয় হলো, আন্দোলন যখন দানা বাঁধছিলো রিপাবলিকানরা তখন কিভাবে তার সহজভাবে প্রশমনের একটা চিত্র অংকন করেছিলেন, যাদের অনেকেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসংঘর্ষে হাজার হাজার পুলিশকে সম্পৃক্ত করা হয়Ñ তবে কেউ এটাকে দাঙ্গা বলতে পারবেনা। আর এটাকে ২০০৯ এর গ্রীষ্মকালে টি পার্টির ঘটনায় পুলিশের আচরণের সঙ্গে সহজেই মেলানো সম্ভব।
তথাপি সংসদের অধিকাংশের নেতা এরিক ক্যান্টর এটাকে দেখছেন ‘উছৃংখল জনতার আন্দোলন’ এবং “আমেরিকানদের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের যুদ্ধ” হিসেবে। জিওপির (রিপাবলিকান পার্টি) প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থীরা বিষয়টা নিয়ে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন, মিট রোমনি প্রতিবাদকারিদের বেতন-ভাতার দাবি হিসেবে এটাকে দেখছেন “শ্রেণী সংগ্রাম” হিসেবে, যেখানে হোয়াইল হারম্যান কেইন তাদেরকে বলছে “আমেরিকা বিরোধী”. তবে আমার প্রিয় সিনেটর র্যান্ড পল এর ভাবনার বিষয়গুলো অন্যরকম, তিনি মনে করছেন প্রতিবাদকারিরা প্রথমেই আইপ্যাডটাই (রচধফ) দখল করবে, কারণ তারা মনে করছে আসলে ধনি শ্রেণীরা এসব বিষয় ধারণ করে না।
নিউ ইয়র্কের মেয়র এবং অর্থনীতি-শিল্প সা¤্রাজ্যের অন্যতম মহারথি মাইকেল ব্লুমবার্গ অবশ্য এসব বিষয়ে যথেষ্ট উদার, কিন্তু তিনিও প্রতিবাদকারিদের দায়ি করে বক্তব্য দিচ্ছেন “ এই সিটিতে কাজ করছে এরকম মানুষের চাকরি নিয়ে টানাটানি” তার এ বক্তব্য আসলে আন্দোলনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে যায়না।
আমরা সিএনবিসি প্রধানের কথা শুনতে পারি, আন্দোলনকারিদের বিষয়ে তিনি বলছেন“তাদের খাম-খেয়ালিপনার পতাকাকে একটু উড়তে দাও” আর তারা আসলে “লেনিনের কাতারের লোক।”
সম্পদশলি আমেরিকানরা যেখানে শেয়ার মার্কেটের খেলার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়, অন্যকেউ এ খেলার বিষয় উত্থাপন করলেই এটা তাদের জন্য ‘হিস্টরিয়া’ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর এটাই সকল ঘটনা পরম্পরা অনুধাবন করার অনেক বড় একটা বিষয়।
স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছর একটি বিরাট সংখ্যক শিল্পপতি প্রেসিডেন্ট ওবামার সমালোচনায় আদাজল খেয়ে নেমেছিলো। তারা ওবামাকে তথাকথিত ভলকার আইন প্রনয়ণের জন্য প্রায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ বলেও সমালোচনা করেছিলো, যেটা আসলে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ লেন-দেন এ ব্যাংক কর্তৃক মুলধন না দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটা গ্যারান্টি। এর কারণ ছিলো আসলে তাদের অনেকেই যারা অবিশ্বাস্য রকমের কম ট্যাক্স দেয় তার ফাঁক ফোকর বন্ধ করাÑ যাই হোক, ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপের চেয়ারম্যান স্টিফেন সোয়ার্জম্যান এটাকে হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তখন তাদের পচারণাটা ছিলো এলিজাবেথ ওয়ারেন এর বিরুদ্ধে, যিনি ছিলেন অর্থনৈতিক বিষয়াদির সংস্কারক এবং বর্তমান ম্যাসেচুসেটস এর সিনেটর। খুব বেশিদিন আগে নয় ইউটিউবের এক ভিডিউতে মিস্টার ওয়ারেন এর ট্যাক্স সংক্রান্ত এক বক্তব্য ধনিক শ্রেণীর জন্য ছিলো ভাইরাসের মতো। তার বক্তব্য খুব বেশি র্যাডিক্যাল ছিলো তা নয়Ñ সেটা অলিভার ওয়েন্ডেল হোলমসের বিখ্যাত “ট্যাক্স হলো তা যা আমরা সভ্য সমাজের জন্য পরিশোধ করি” এ বক্তব্যের চেয়েও খুব বেশি আধুনিক কিছু নয়।
কিন্তু তার এ বক্তব্য সম্পদশালীদের জন্য রক্ষাকবচ হয়নি, মিস্টার ওয়ারেনের কথা ভাবা যাক, তিনি হলেন লিয়ন ট্রটস্কীর দ্বিতীয় প্রজন্ম। জর্জ উইল ঘোষণা করলেন তার একটা ‘সম্মিলিত এজেন্ডা’ রয়েছে, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন “ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতাবাদ হলো অলিক কল্পনা।” আর রুশ লিমবাগ তার জবাবে বলেন “একটি পরজীবি যে তার ধারককে অস্বীকার করে, ধারককে ধ্বংস করার ইচ্ছা তখনই সম্ভব যখন সে জীবনকে এর বাইরে ধারণ করতে পারবে।”
এখানে হচ্ছেটা কী? উত্তরটা ওয়াল স্ট্রীটের, দুনিয়ার রথি-মহারথিরা তা অনুধাবন করছে, কঠিনভাইে করছে, তাদের অবস্থান কতটা সমর্থণযোগ্য। তারা জন গ্যাল্ট কিংবা এমনকি স্টিভ জবসও নয়। তারা সাধারণ মানুষ যারা জটিল এক অর্থনেতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে, যারা আমেরিকার জনগনের মত লাভবান হওয়ার চেয়েও দুরে, যারা আমাদের জীবনকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, ফল হলো তাদের মতো এক কোটি নাগরিকের জীবনকে ধ্বংস করা।
এখনও তাদের কোনো মূল্য দিতে হয়নি। তাদের প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত কিছু হিসেবের অজুহাতে করদাতাদের দ্বারা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা গোপনে এবং প্রকাশ্যে ফেডারেল গ্যারান্টির দ্বারা লাভবান হয়ে আসছে, তারা এখনও মাথার খেলায় মত্ত, তবে তারা এ খেলায় জয়ী,করদাতারা সেটা হারিয়েছে। তারা ট্যাক্স এর ফাঁকফোকর থেকে লাভবান হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে যাদের কোটি কোটি ডলার রয়েছে তাদেরকে মধ্যবিত্ত পরিবারের চেয়েও কম ট্যাক্স দিতে হয়।
এই বিশেষ অবস্থা খুব নিবিড় পরীক্ষণ ছাড়া সম্ভব নয়, যেহেতু তারা এটা দেখছে সুতরাং এর নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। যারাই স্পষ্টত: বিষয়টা তুলে ধরছে তাদেরকে শান্তভাবে নেয়ার কিছু নেই, তবে মঞ্চ থেকেই এটা পরিচালনা করা উচিত। বস্তুত, সমালোচনার ধারা অধিক যুক্তযুক্ত এবং পরিমিত হওয়া উচিত, আর তাড়াহুড়া ক্ষতির কারণ, এক্ষেত্রে এলিজাবেথ ওয়ারেন প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
সুতরাং সত্যিকারার্থে করা এখানে আমেরিকান নয়? আন্দোলনকারিরতো নয়ই, বরং তারা যারা তাদের কথা শুনতে চেষ্টা করছে। না, আসলে সত্যিকার গোঁড়া হলো আমেরিকার ক্ষমতাবানগোষ্ঠি, যারা তাদের সম্পদের প্রশ্নে যেকোনো সমালোচনা দমন করতে চায়।
পল ক্রুগম্যান: নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ
- নিউইয়র্ক টাইমসের ৯ অক্টোবর অনলাইন ভার্সন ১০ অক্টোবর ২০১১ প্রিন্ট ভার্সনে প্রকাশিত লেখা
- অনুবাদ- মাহফুজুর রহমান মানিক