Mahfuzur Rahman Manik
রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেমন চলছে
মার্চ 17, 2010

দেশে বর্তমানে ১১ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে অবশ্য ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যার দিক থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই প্রথম। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮২ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৈন্যদশা সম্পর্কে আমরা জানি। শ্রেণী কক্ষ সমস্যা, স্থান সমস্যা, শিক্ষক সমস্যা, উপকরণ সমস্যা ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা ভালো হবে বলেই আমাদের ধারণা ছিল। কিছুদিন আগে (১৪.১১.০৯) একাডেমিক এসাইনমেন্টের কাজে ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আমরা কয়েকজন বন্ধু যাই। শিক্ষক সাক্ষাৎকার আর শ্রেণীকক্ষ পর্যবেক্ষণ ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। শিক্ষক সাক্ষাৎকার নেব, কিন্তু সাক্ষাৎকার দেয়ার মতো তাদের সময় কোথায়। একটার পর একটা ক্লাস নিতে তারা ব্যস্ত। শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করি, সপ্তাহে কয়টি ক্লাস নেন? উত্তর ছিল, ‘সপ্তাহে কেন, জিজ্ঞেস করুন দিনে কয়টি ক্লাস নেই। দিনে আমাদের নির্দিষ্ট পাঁচটি ক্লাস তো নিতে হয়ই, অনেক সময় অতিরিক্ত আরও ২-১টিও নিতে হয়। সপ্তাহে গড়ে ৩৫টি ক্লাস তো নিতে হয়ই।’
প্রধান শিক্ষকরা আরও বেশি ব্যস্ত। নাজিরাবাজার ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে যে প্রধান শিক্ষক আছেন, তিনি মোট তিনটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অর্থাৎ একসঙ্গে তাকে তিনটি বিদ্যালয় দেখাশোনা করতে হয়। রাজধানীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাঠের কথা না বললেও শ্রেণীকক্ষের বিষয়টি আসবেই। একদিকে ঢাকার প্রাইভেট স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা আলিশান ভবনে ক্লাস করছে, অন্যদিকে একই শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে জীর্ণশীর্ণ দালানে। শ্রেণীর সাইজও দেখার মতো, গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। আর সেখানকার শিক্ষার্থীদের অবস্থা (সামাজিক মান) জিজ্ঞেস করতেই এক শিক্ষক করুণ কণ্ঠে জানালেন, ‘ভাই এখানে যারা পড়ে তাদের সামাজিক মান বলতে কিছু নেই। তাদের নিু-মধ্যবিত্ত বললে ভুল হবে কিনা জানি না, তবে আমি কয়েকজনের বাসায় গিয়েছি, ছোট্ট খুপড়ির মধ্যে কোনরকমে থাকে। পড়ার জায়গা তো নেই-ই, স্কুলটাই তাদের একমাত্র স্থান। সকাল ৭টায় স্কুলে আসতে হলে তো অধিকাংশ শিক্ষার্থীই খেয়ে আসতে পারবে না।’
এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনও রাজধানীতে বাস করার উপযোগী নয়। এ কারণেই শিক্ষক স্বল্পতা। শিক্ষকরা ভালো পাস করে এখানে এসে কয়েক মাস চাকরি করেই ভালো কোথাও চলে যান। বেতনকাঠামো আর বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি না থাকায় সবাই নতুন চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে শিক্ষক স্বল্পতা এখানে লেগেই আছে। তবে ভালো বিষয়টি হল, এখানকার শিক্ষকরা মোটামুটি সবাই অনার্সধারী, অনেকেই আছেন মাস্টার্স, অধিকাংশই বিএড করা। সিএনএড তো সবার আছেই। তবে ন্যায্য সম্মানী না পাওয়ায় তারা ভালো কিছু দেয়ার প্রেরণা হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

যুগান্তর ৩ ডিসেম্বর ২০০৯
http://jugantor.info/enews/issue/2009/12/03/news0652.php

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।