Mahfuzur Rahman Manik
'গায়েবি হাত'
অক্টোবর 10, 2016
কথিত ‌'গায়েবি হাতে'র নিচে ছড়িয়ে আছে টাকা
ছত্রাককে গায়েবি হাত বলে চালিয়েছে, এভাবেই ভন্ডরা সরলমনা মানুষকে বিভ্রান্ত করে

মানুষের জ্ঞান সীমিত। সসীম জ্ঞানে অসীম জগতের অনেক কিছুই মানুষের আয়ত্তের বাইরে। মানুষের সামর্থ্যও তথৈবচ। এক জীবনে একজন কী-ইবা হতে পারে। ছোটবেলায় যে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সে যদি তার স্বপ্ন বাস্তবেও পায়, হয়তো একজন ইঞ্জিনিয়ারই হবেন; ডাক্তার হতে তিনি পারছেন না। কিন্তু দিন শেষে যে তার ডাক্তার হওয়ার জন্য আক্ষেপ থাকবে না, তা বলা যায় না। রাস্তায় চলছেন, এক সড়কে জ্যাম দেখে হয়তো বিকল্প রাস্তায় যাচ্ছেন, কেউ না জানালে আপনার সামর্থ্য নেই যে, আপনার ছেড়ে আসা সড়কে আসলে কী হচ্ছে। ওই সড়ক তো দূরের বিষয়। এমনকি সামনে তাকিয়েছেন ঠিক আপনার পেছনে কী ঘটছে, তাও আপনার অজানা। হ্যাঁ, চার চোখ বলে কথা আছে। তবে সামনের দুই চোখ দেখার, আর পেছনের চোখ জ্ঞানের। জ্ঞানের সঙ্গে কাণ্ডজ্ঞান কথাটি জুতসই। মানুষের জ্ঞান যত সীমাবদ্ধই হোক না কেন, কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে সে অনেক কিছুই করতে পারে। সুনামগঞ্জের ছাতকের ঘটনাই দেখা যাক। রোববারের (৯ অক্টোবর) সমকাল যার শিরোনাম করেছে, 'গায়েবি হাত গুঁড়িয়ে দিল পুলিশ'। ছাতকের এক গ্রামে ঘরের মধ্যে গজিয়েছে বুনো ছত্রাক। দেখতে অনেকটা মানুষের হাতের মতো। তিন মাস আগে গজিয়ে ওঠা ছত্রাকটি যখন হাতের আকৃতি ধারণ করে, তখনি তাকে 'গায়েবি হাত' বলে প্রচার করা হয়।
স্বাভাবিকভাবেই এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ অনেকেই তা সরলমনে বিশ্বাস করে। এমনকি ওই 'গায়েবি হাতে'র ওপর মানুষ টাকা দান করতে শুরু করে। কে জানে হয়তো মানুষ ভেবেছে 'গায়েবি হাতে'র শক্তি আছে, টাকা দিলে তার মনের বাসনা পূর্ণ হবে। সমকালে প্রকাশিত ছবিতেই দেখা যাচ্ছে, তার পাশে টাকা ছড়িয়ে আছে।
এ খবরের সঙ্গে ভালো ব্যাপার হলো, প্রশাসন বিষয়টি জানতে পেরে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, কথিত হাতটি ভেঙে দেয় পুলিশ। প্রশাসনকে ধন্যবাদ, যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে এখানে ব্যবসা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এটাও ঠিক যে, অনেক জায়গায় মানুষকে বোকা বানিয়ে এ ধরনের নানা ব্যবসা চলছে। কেউ হয়তো বিষয়টি সত্য না মিথ্যা খতিয়ে দেখছে না। সরল বিশ্বাসে যে যা বলে, যা দেখায় তা-ই সত্য বলে ধরে নেন। ছাতকের বিষয়টি তো বলা চলে স্পষ্টই। ঘরের ভেতর হাত কীভাবে জন্ম নেবে? তার চেয়ে বড় কথা, ছত্রাকটি দেখেও কারও সন্দেহ হয়নি? কাণ্ডজ্ঞানের প্রশ্ন এখানেই।
এখানেই হয়তো মানুষের সীমাবদ্ধতা। সাধারণ বিষয়ও যখন জীবনে কেউ দেখেনি, শোনেনি তা সামনে এলে অস্বাভাবিক মনে হবে। অপরপক্ষে সুযোগ-সন্ধানীরাও হয়তো এ থেকে ফায়দা লোটার অপেক্ষায়ই থাকে। মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ব্যবসা করেন। দেখা গেল কোথাও হয়তো কেউ কখনও মারাই যায়নি। কিন্তু সুযোগ-সন্ধানীরা সেখানে কোনো 'গায়েবি' পীরের অস্তিত্ব হাজির করছে। দিনে দিনে তা হয়ে উঠছে বিশাল বাজার। মানুষ টাকা ঢালছে দেদারসে। যে যার মতো নিয়ত-মানত করছে।
ছাতকের ঘটনাটি হয়তো অনেকের চোখ খুলে দেওয়ার মতো হবে। প্রশাসনের জন্যও এটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। ভবিষ্যতেও এমন চোখ-কান খোলা রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আমাদের। আর সব জায়গায় সরলমনে বিশ্বাস নয়। বরং কাণ্ডজ্ঞান খাটিয়ে সামনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।