Mahfuzur Rahman Manik
নৌপথের গতিপথ
সেপ্টেম্বর 17, 2016
নৌপথে চলাচল যতটা আরামদায়ক, এ পথকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা ততটা বিস্তৃত নয়
নৌপথে চলাচল যতটা আরামদায়ক, এ পথকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা ততটা বিস্তৃত নয়

সড়কপথে বাসে কিংবা ট্রেনে চলাচলে নানা ঝক্কি-ঝামেলা। বাসে বা ব্যক্তিগত মোটরগাড়িতে যানজট বড় সমস্যা। আর '৯টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে' প্রশ্নটি এখনও প্রাসঙ্গিক। বিমানে চলাচলের সাধ থাকলেও, সাধ্য নেই অধিকাংশের। দেশের ভেতরে বিমানে তো নেহাত অল্প কয়েকটি গন্তব্যে যাওয়া যায়। এ পথে যানজট নেই বটে, তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা যশোরের ৪৫ ও ৩০ মিনিটের উড়ালের জন্য কপাল মন্দ হলে বিমানবন্দরে কাটাতে হতে পারে কয়েক ঘণ্টাও। এসবের একবারেই বালাই নেই নৌপথে। নদীপথে দূরযাত্রায় বিশেষত লঞ্চে যাদের যাতায়াত তারা জানেন এ ভ্রমণ কতটা আরামদায়ক। যানজটে পড়তে হয় না, কয়েক ঘণ্টা একই চেয়ারে বিরক্তি নিয়ে বসে থাকতে হয় না, খোলা বাতাস গায়ে মেখে পায়চারি করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেও যাওয়া যায়। সাধারণত ৯টার লঞ্চ ঠিক ৯টায়ই ছাড়ে এবং সঠিক সময়ে গন্তব্যে না পেঁৗছার আশঙ্কাও কম। ভ্রমণ ব্যয়ও একেবারে সাধারণের নাগালের মধ্যে। অবশ্য যাদের টাকা আছে, তারা চাইলে বেশি ব্যয়ে বিলাসবহুল কেবিনে একেবারে ঘরের আতিথেয়তায় যেতে পারেন। স্টেশনে স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার ব্যাপার তেমন নেই। জায়গা থাকলে শুয়েও যাওয়া যায়; ভিড় থাকলেও যে কোনো জায়গায় বসে যাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে বেদনাদায়ক লঞ্চ দুর্ঘটনা ছাড়া এ পথের যন্ত্রণা বেশি নেই।

দুর্ঘটনা তো সড়কপথে অনেক বেশি। তবে কথা হলো, নদীপথে লঞ্চে যাতায়াত মুখ্যত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের জন্যই।
প্রত্যেক ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ও বড় শহর থেকে গ্রামের বাড়ি যায়। তখন বাস-ট্রেনের টিকিট নিয়ে হাহাকার শোনা যায়। নৌপথে টিকিট বিড়ম্বনা সে তুলনায় ঈদের সময়ও কম, অন্য সময় তো কথাই নেই। লঞ্চের সময় জেনে ঢাকার সদরঘাট কিংবা অন্যান্য জায়গার লঞ্চঘাটে পেঁৗছলেই চলে। শহরের রাস্তার যানজটে দেরি হলে লঞ্চ মিস। লঞ্চ কারও জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করবে না। অনেক রুটে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লঞ্চ পাওয়া যায়। কর্মব্যস্ত দিন শেষে রাতে লঞ্চে ঘুমিয়ে যাওয়ারও সুযোগ বিস্তর।
দিন যত যাচ্ছে লঞ্চের আকার-আয়তন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে সুযোগ-সুবিধাও। গত রমজান ঈদের আগে জুন মাসের শেষ দিকে দেশের সর্ববৃহৎ নৌযান সুন্দরবন-১০ উদ্বোধন হয়। বরিশালগামী এ লঞ্চসহ সে সময় নতুন চারটি বিলাসবহুল লঞ্চ চালু হয়। ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, মংলা বন্দর, কাউখালী, হাতিয়া, দৌলতখাঁ, বোরহান উদ্দিন, সুরেশ্বরসহ ৪০টির বেশি রুটে লঞ্চ চলে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একতলা, দোতলা, তিনতলা, এমনকি চারতলা পর্যন্ত রয়েছে লঞ্চ, রকেট, স্টিমার প্রভৃতি নৌযান।

নৌপথ যেন তার গতিপথ না হারায়
নৌপথ যেন তার গতিপথ না হারায়

নৌপথে চলাচল যতটা আরামদায়ক, নৌপথকে কেন্দ্র করে আমাদের পরিকল্পনা ততটা বিস্তৃত নয়। ঈদুল আজহার আগেও বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ চার দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে কয়েক দিন কার্যত অচল থাকে দেশের নৌ চলাচল ব্যবস্থা। দিন দিন কমছে নৌপথের দৈর্ঘ্য। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৯৭৬ সালের ২৪ হাজার কি.মি. নৌপথ এখন হয়েছে ৬ হাজার কি.মি.। ৪০ বছরে নদীমাতৃক দেশে ১৮ হাজার কি.মি. নৌপথ কমা বিস্ময়কর। কালক্রমে নদী ভরাট হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে, সে খাত দখল হচ্ছে এবং নাব্য কমে যাওয়াই মূল সমস্যা। শুধু যাত্রী নয়, পণ্য পরিবহনে একটু সময় বেশি লাগলেও নদীপথ ব্যবহার অনেক ব্যয়সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। সহজতর ভ্রমণ ও পরিবহনের জন্য নৌপথের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নদী খনন, রক্ষণাবেক্ষণ, নাব্য ঠিক রাখা, নদীবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আমাদের নিত্যকার আরামদায়ক চলাচলের মাধ্যম এ নৌপথ যেন তার গতিপথ না হারায়, এটাই কাম্য।

 

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।