উৎসব অল্প সময়ের। আয়োজন অনেক দিনের। আর অপেক্ষার দৈর্ঘ্য আরও বেশি। এক উৎসব গেলে তার রেশ থাকে কিছুদিন। এরপর সবাই অপেক্ষা করে আরেকটার জন্য। কাছাকাছি এলে চলে তার প্রস্তুতি। উৎসব আয়োজনে সবাই পছন্দের পোশাক ক্রয় করে। ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত থাকেন গ্রাহকের চাহিদামতো জিনিসের জোগান দিতে। মানুষ নাড়ির টানে ঘরে ফেরে। এ সময় সবার মাঝে যেমন একটা উৎসব উৎসব ভাব থাকে, তেমনি থাকে প্রতিযোগিতাও। কে কত বেশি কিনবে; কে কত আগে বাড়ি যাবে; কার পোশাক কত দামি হবে ইত্যাদি নিয়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চলে প্রতিযোগিতা। অনেকে আবার নিজের পোশাকটি আগে থেকে অন্যদের দেখাতে চায় না। ঈদের দিন হয়তো চমকে দেবে এ আশায়।
আমাদের অন্যতম উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ছুটি পান। এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি ছুটি থাকলেও সরকারিভাবে তিন দিনের ছুটি থাকে। নগরের অনেক মানুষ ছুটি কাটাতে গ্রামে যায় প্রিয়জনের কাছে। এ সময়ও একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। আগে থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চের টিকিট সংগ্রহে দীর্ঘ লাইন আমরা দেখি। এ নিয়ে ভোগান্তির চিত্রও অবর্ণনীয়। আবার সংশ্লিষ্ট স্টেশনে গিয়ে যানবাহনে উঠতেও ঝামেলা পোহাতে হয়। কার আগে কে উঠবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাতে প্রয়োজন হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তবে এ প্রতিযোগিতার মধ্যে যতটা বিদ্বেষ আছে তার চেয়েও বেশি আছে ঘরে ফেরার আকুলতা। ট্রেন-বাসের ছাদে, লঞ্চের আনাচে-কানাচে বসে ঝুঁকি নিয়েও ফেরে মানুষ। এরপরও প্রত্যেকের মুখে ফোটে বিজয়ের হাসি।
উৎসবের প্রস্তুতি যেমন চলে অনেকদিন, তেমনি এর রেশও থাকে বহুদিন। তিন দিনের ছুটি হলেও এক সপ্তাহ পর্যন্ত নগরী অনেকটা ফাঁকা থাকে। চিরচেনা নগরী হয়ে ওঠে অন্যরকম। জ্যাম নেই, ট্রাফিক সিগন্যালে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয় না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অল্প সময়েই যাওয়া যায়। এদিকে মানুষও এ সময়টাতে এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। পুরনো পরিচিত অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। এভাবে উৎসবের আনন্দ আরেকটু বাড়িয়ে তোলে। এরপর আবার সবাই কর্মক্ষেত্রে চলে যায়। সব আগের মতো মনে হয়। উৎসবও অনেকটা হারিয়ে যায়।
উৎসব জীবনেরই অনুষঙ্গ। একঘেয়ে জীবনে মাঝে উৎসব এসে মানুষকে বিনোদিত করে। এর থেকে মানুষ তার কাজের প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংগ্রহ করে। আবার প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে উৎসবের অসিলায়ই সাক্ষাৎ ঘটে। এর মধ্যে হয়তো প্রতিযোগিতার বিষয় আছে। নিজেকে জাহির করার বিষয় আছে। তারপরও এর প্রেরণা অনন্য। তাছাড়া ঈদ উৎসবে ধনী-গরিব সবার আনন্দ নিশ্চিত করতে ধনীর তরফ থেকে দরিদ্রদের দানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক উৎসব গেলে সবাই আরেক উৎসবের জন্য অপেক্ষা করেন। কাঙ্ক্ষিত দিনটিকে ঘিরে অপেক্ষা হয়তো সারা বছরই থাকে। অনেকে বলেও রাখেন, আগামী উৎসবে এটা করবেন, ওটা করবেন। এই অপেক্ষার মধ্যেও একটা আনন্দ থাকে। এ কে তো আমরা উৎসবের রেশই বলতে পারি। ঈদুল ফিতর গেল ক'দিন আগে, সামনে আসছে ঈদুল আজহা। মাঝখানের অপেক্ষার সময়টাও সবার আনন্দেই কাটুক।
- সমকালে প্রকাশিত, ২৩ জুলাই ২০১৫
- ই-সমকাল থেকে দেখুন
- ছবি: অনলাইন