ইন্টারনেটে প্রবেশ করলে আমরা এখন সহজেই বাংলা দেখি। ফেসবুকে বাংলায় স্ট্যাটাস দেখা যায় অহরহ। বাংলা ব্লগ ও সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট তো আছেই, ই-মেইল আদান-প্রদানেও অনেকে বাংলা ব্যবহার করেন। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে বাংলায় খোঁজ করলে এখন যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলোও বাংলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে; ফলে সেখানেও বাংলা দেখা যাচ্ছে। গুগলে যেমন বাংলায় আলাদাভাবে রয়েছে google.com.bd একইভাবে ফেসবুকেও বাংলায় ভাষান্তরের কাজ চলছে; চাইলে যে কেউ বাংলায় স্ট্যাটাস, নোট লেখার বাইরেও ফেসবুকের অপশনগুলো বাংলায় পেতে পারেন। এ ছাড়া তথ্যের জন্য রয়েছে বাংলা উইকিপিডিয়া। ওয়ার্ডপ্রেস, ব্লগস্পটসহ অন্যান্য ওয়েবসাইটেও বাংলার আলাদা অপশন রয়েছে।
অথচ একসময় অনেকের কাছেই এটা ছিল স্বপ্নের মতো। পাঁচ-ছয় বছর আগেও আমরা ভাবতে পারিনি ইন্টারনেটে এ রকম বাংলার জয়জয়কার অবস্থা দেখব। তখন ইন্টারনেট মানেই মনে হতো ইংরেজি কিছু। ইংরেজি জানা ছাড়া যেন ইন্টারনেট ব্যবহারই করা যাবে না। কোনো তথ্য দরকার হলে ইংরেজি ছাড়া উপায় নেই। যারা ইংরেজি জানতেন না তাদের জন্য এসব তথ্য চোখ থেকেও অন্ধের মতো। অথচ এখন অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ইন্টারনেটে বাংলায় সার্চ দিলেই যে আমাদের মাতৃভাষায় অনেক তথ্য পাওয়া যায় সে কথা আগেও বলেছি।
ইন্টারনেটে বাংলার বিপ্লব একদিনে সাধিত হয়নি। ধীরে ধীরে নানা সেক্টরের মানুষের অবদানে বাংলা এ পর্যায়ে আছে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ব্লগের কথা অবশ্যই বলতে হবে। ২০০৬ সাল থেকেই সামহোয়ার ইন ব্লগের মাধ্যমে বাংলা ব্লগের জনপ্রিয়তা শুরু হয়। পাবলিক ব্লগগুলোতে সবাই বাংলাতে লেখেন, মন্তব্য করেন। এগুলোই ইন্টারনেটে বাংলাকে সমৃদ্ধ করে। ইন্টারনেটে বাংলার প্রসারে ইউনিকোড এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। অভ্র ফন্টের কথা বলতেই হবে। বাংলা সংবাদপত্র ইন্টরনেটে আগে সুতন্বি ফন্টে ছিল, পরে এগুলো ইউনিকোডে পরিবর্তন হয়। ফলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মতামত ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটে বাংলা সমৃদ্ধ হচ্ছে। অনলাইন সংবাদপত্র এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। এখন যেমন বাংলায় অনেক অনলাইন পত্রিকা রয়েছে, তেমনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্লগের সংখ্যাও কম নয়। এগুলোতে ব্যক্তি তার পছন্দের নানা বিষয় নিয়ে লেখেন; বাংলায় প্রচুর তথ্যও পাওয়া যায় এসব সাইটে। আর বাংলা উইকিপিডিয়ার মতো বিভিন্ন সাইটে বাংলায় নানা নিবন্ধ প্রকাশ করে অনেকেই বাংলায় সমৃদ্ধকরণে ভূমিকা রাখছেন। এই লেখা পর্যন্ত বাংলা উইকিপিডিয়ার মোট নিবন্ধ সংখ্যা ২৮,২৫৮।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক ওয়েবসাইটই বাংলায় হয়েছে। এভাবে ওয়েবসাইট বাংলায় হলে কিংবা ইংরেজি-বাংলা উভয় ভাষায় থাকলে সেটা যেমন সেবাগ্রহণকারীর জন্য সুবিধা হয়, তেমনি ইন্টারনেটে বাংলার প্রসারেও ভূমিকা রাখে।
ইন্টারনেটে বাংলা দেখার ও পড়ার অনুভূতি ভাষা প্রকাশ করার মতো নয়। যে বাংলায় আমরা কথা বলি, ভাব প্রকাশ করি, লিখি, পড়ি_ সে বাংলা ফন্ট ইন্টারনেটে দেখতেই যেন মনটা ভরে যায়। আজ বিভিন্ন জায়গায় যেমন বাংলা প্রসারিত হচ্ছে, একই সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সবখানে। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা যেখানে অন্য ভাষাভাষীদের মধ্যে হয়তো অনেক সময় অসহায় মনে করেন সেখানে ইন্টারনেটের এক ক্লিকেই বাংলা পেতে পারেন এবং পড়ে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারেন। ইন্টারনেটে তো কেবল আমরা বাংলাই দেখি না, বাংলার মুখও দেখি; দেখি বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
- ছবি- ইন্টারনেট