খালি কাগজের তেমন মূল্য নেই। বাজার থেকে সেটা কেউ দিস্তা দরে, বাউন্ডিং খাতা আকারে কিংবা সংখ্যা গুণে ক্রয় করেন। তার ওপর যখনই কিছু লেখা তখনই দামি হয়ে ওঠে। কাগজের তৈরি ব্যাংক চেকের কথা সবাই জানেন। সেটা হাজার কোটি টাকাও হতে পারে। তবে কখনও কখনও এর মূল্য নির্দিষ্ট অঙ্কে প্রকাশ করাও কঠিন। দশ বছর পড়াশোনার পর এসএসসি পরীা দিয়ে অর্জন করা সার্টিফিকেটও কার্যত একটা কাগজ। এর দাম হিসাব করা সম্ভব? এ রকম এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি অর্জনের পরও আপাতদৃষ্টিতে একটা কাগজই মানুষ অর্জন করে। যে কাগজ তার লেখার কারণে, কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির কারণে সার্টিফিকেট হয়ে যায়। এ সার্টিফিকেট ব্যক্তির জীবনের সম্পদ। এগুলোকে টাকার অঙ্কে মাপা কঠিন। ব্যক্তিকে মূল্যবান এই সার্টিফিকেটের এক কপিই দেওয়া হয়, যা দিয়ে তিনি হাজারো কাজ করতে পারেন। সে জন্য সার্টিফিকেটের ফটোকপি সব ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। যেহেতু সবসময়, সব জায়গায় সার্টিফিকেট বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ। কিংবা এর বহুবিধ ব্যবহারের ফলে কোথাও জমা দিতে হলে ফটোকপিই বাস্তবসম্মত। তবে শর্ত থাকে, এ সার্টিফিকেট অ্যাটেস্টেড বা সত্যায়িত হতে হবে। সাধারণত সরকারের নথিভুক্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারাই এ সত্যায়ন করতে পারেন। এর বাইরে গুরুত্বপহৃর্ণ মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের সত্যায়ন করার ক্ষমতা থাকে। যারা মূল সার্টিফিকেট দেখে তার ফটোকপি সত্যায়ন করেন। এ জন্য সার্টিফিকেটধারীকে তার কাছে যেতে হয়। এটা অনেকটা ঝামেলার কাজ বটে। অনেক সময় সত্যায়ন করতে পারে, এ রকম কর্মকর্তা পাওয়া কষ্টকর। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের জন্য সমস্যা বেশি। আবার অনেক সময় কর্মকর্তারা সকলের কাগজপত্র সত্যায়ন করতেও চান না। এ সমস্যার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘সেলফ অ্যাটেস্টেড’ পদ্ধতি চালু আছে। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি নিজের সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র নিজেই সত্যায়ন করেন। সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেটের ওপর যে কোনো অংশে ‘দিস ইজ দ্য ট্রু কপি অব দ্য অরিজিনাল’ বা ‘এটি মূল সার্টিফিকেটের অনুলিপি’ লিখে তার নিচে নিজের স্বাক্ষর করতে হয়। ২৭ অক্টোবর ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, সেখানে আইআইটি, আইআইএম ও সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এ রকম নিজেরাই নিজেদের সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে পারবেন। ভারতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউটস অব টেকনোলজি (আইআইটি) বা তথ্যপ্রযুক্তির উচ্চশিক্ষার বিশেষায়িত ইন্সটিটিউট রয়েছে ১৬টি। যারা ব্যাচেলর হতে পিএইচডি পর্যন্ত ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। আইআইটিতে সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতি রয়েছে। আর সেখানে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) বা ব্যবস্থাপনার উচ্চশিা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৩টি। এটি স্নাতকের পর স্নাতকোত্তর ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ভারতে গয়া ছাড়া প্রত্যেকটি প্রদেশেই রয়েছে। সেখানকার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সংখ্যা ৪১। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে এই সেলফ অ্যাটেস্টেড পদ্ধতি এ বছরের জানুয়ারি থেকেই চালু করেছে। তবে নিজের কাগজপত্র নিজে সত্যায়ন করলেও চূড়ান্ত ভর্তির ক্ষেত্রে মুল সার্টিফিকেট দেখাতে হবে শিক্ষার্থীকে। শিক্ষার্থীর সুবিধার কথা চিন্তা করে ভারতের এই উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। সার্টিফিকেটসহ কাগজপত্র সত্যায়ন করার বিড়ম্বনা কারও অজানা নয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য এটা বড় সমস্যাই বটে। এ বিড়ম্বনার জন্য এমনকি অনেককে অসদুপায় অবলম্বন করতেও দেখা যায়। অনেকের সিল, স্বার নকল করে সত্যায়নের চিত্রও বিচিত্র নয়। এর থেকে সেলফ অ্যাটেস্টেড উত্তম নয় কি?
- ছবি- ইন্টারনেট
আমাদের সরকারকে এই ধরনের গণমুখী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না। তাই, আমাদেরকে নিজেই অন্যের নামে সিল বানিয়ে অ্যাটেস্টেড করে যেতে হবে। এইটাই হবে আমাদের "সেলফ অ্যাটেস্টেড" 🙂