
নতুন বই পড়ার স্বাদ আলাদা বটে, কিন্তু বই কখনও পুরনো হয় কি-না তা নিশ্চয় আলোচনার বিষয়। হয়তো বইটি সেকেন্ড-হ্যান্ড, কেউ বাজার থেকে নতুন কিনে পড়া শেষে আবার বিক্রি করেছে। হতে পারে বইটি জীর্ণ-শীর্ণ, শত বছর আগের বই লাইব্রেরিতে রাখা আছে; হয়তো বইটি দেখতে পুরনো; পুরাতন বই হিসেবে কম দামে দোকানি বিক্রি করছে। কিন্তু বইটি তো পুরনো নয়, যতক্ষণ না আপনি পড়ছেন। কিংবা অনেক আগে পড়েছেন, ভুলে গেছেন; আবার পড়ূন, নিশ্চয় নতুনের স্বাদ পাবেন। অথবা কিছু পুরাতন বই বারবার পড়ছেন, বারবার নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করছেন; তাতেও যেন আপনার তৃষ্ণা মেটে না। সুতরাং তা পুরনো হয় কী করে! ফলে খুব সম্ভবত বইয়ের মতো সেকেন্ড-হ্যান্ড ও পুরাতন আর কোনো কিছুর এমন বাজার নেই। আলজাজিরা অনলাইনে ৯ জানুয়ারি 'ইন্ডিয়া :ফর দ্য লাভ অব সেকেন্ড-হ্যান্ড বুকস' নামে একটি ফিচার প্রকাশ করে। 'ভারতে সেকেন্ড-হ্যান্ড বইয়ের জন্য ভালোবাসা'র ফিচারটি যে আমাদের জন্যও প্রাসঙ্গিক। আজকালকার স্কুল শিক্ষার্থীরা হয়তো বছরের প্রথমেই নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রজন্ম কিংবা তারও আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ রকম সব নতুন বই পাওয়ার ঘটনা ছিল বিরল। নতুন-পুরাতন বই দিয়েই শুরু হতো নতুন বছরের পড়াশোনা। অনেকে পুরনো বই অত্যন্ত যত্ন করে আলাদা কাভার লাগিয়ে পড়ত। দেখতে হোক না পুরাতন, আমার কাছে যে তা খুবই নতুন। শিক্ষা স্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে এ পুরনো বই পড়া স্বাভাবিক বিষয়। একই বিষয়ের হয়তো কয়েকটি বই থাকে; সবার পক্ষে সব বই কেনা সম্ভব হয় না। তখন কাছের বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে কিংবা বড় ভাইয়ের ব্যবহৃত বই পড়তে হয়। আবার লাইব্রেরিতেও তো সব বই সে অর্থে নতুন থাকে না। পুরনো এমনকি অনেক সময় লাইব্রেরির পোকায় খাওয়া বই-ই তখন ভরসা। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বাইরে অন্যান্য বই পড়তেও পুরাতনই বেশি পড়া হয়। আলজাজিরার আলোচ্য ফিচারটি বলা চলে একটি বইমেলাকে কেন্দ্র করে। ভারতের অল্প্রব্দপ্রদেশে বিজয়া ওয়াড়া বুক ফেস্টিভ্যালে রয়েছে সেকেন্ড-হ্যান্ড বইয়ের স্টল। সেখানে বিরল বইও রয়েছে। যেমন বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের অন্যতম এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা কয়েক বছর ধরে প্রিন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অনলাইন ভার্সন রয়েছে। সে ব্রিটানিকাও রয়েছে পুরনো বইয়ের স্টলে। আমাদের বইমেলায় সে অর্থে পুরনো বইয়ের স্টল দেখা যায় না। তবে আমাদের নীলক্ষেত রয়েছে। নীলক্ষেত বলা চলে পুরনো বইয়ের স্বর্গ। সেখানে পুরনো বইয়ের দোকান রয়েছে অনেক। রয়েছে পুরনো ম্যাগাজিন, বিখ্যাত পত্রিকার পুরনো সংখ্যাসহ নানা অসাধারণ সংগ্রহ।

নীলক্ষেতে রাস্তার পাশে ও মাটিতে পুরাতন বই বিক্রি করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ থেকে টিএসএসি পর্যন্ত রাস্তায় তা দেখা যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই মেলে এসব জায়গায়। এক শ্রেণির ক্রেতা রয়েছে, যারা এ রকম কম দামে পুরনো বই পাওয়ার সুযোগ খোঁজেন ও কেনেন। অনলাইনের এ সময়ে বইও যখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে তখনও প্রিন্টেড বইয়ের কদর যে অক্ষুণ্নম্ন রয়েছে; পুরনো বই বিক্রিই তার উদাহরণ। অবশ্য সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলায়। হয়তো অনেকে অনলাইনে বই খোঁজেন, পড়েন। ইন্টারনেটে নানা আয়োজনের ডামাডোলে মুদ্রিত বই পড়া কিছুটা কমছে। তারপরও বই বই-ই। কেউ পুরনো বই বিক্রি করলেও তা চির নতুন। ওমর খৈয়ামই তো বলেছেন_ বই অনন্ত-যৌবনা।
দারুন লিখছেন ভাই। এরকম লেখা আরো দেখতে চাই।