Mahfuzur Rahman Manik
শিক্ষকদের জন্য বিনিয়োগ উজ্জল ভবিষ্যত (5 October Samakal)
মার্চ 17, 2010

৫ অক্টোবর । বিশ্ব শিক্ষক দিবস । ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি । এ বছর ১৫ তম শিক্ষক দিবস এটি । দিবসটির ইতিহাস অবশ্য অনেক আগের । বিশ্বেও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠনের ক্রমাগত অনুরোধ ও দাবি। ইউনেস্কো ও আইএলওর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রচেষ্টা। এসব মিলেই ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলন। সম্মেলনে শিক্ষকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার ও মর্যাদাবিষয়ক ১৪৬ ধারা ও উপধারা বিশিষ্ট একটি সনদ প্রণীত হয়।

এ সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, জাতিসংঘের তখনকার ১৪৭ টি দেশের ২১০ টি শিক্ষক সংগঠন। যাদের প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল। শিক্ষক সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ত্রিশ লাখ। সংস্থাটির প্রচেষ্টায় ১৯৯৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, ততকালীন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ড· ফ্রেডারিক মেয়র ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের ঘোষণা দেন। সে অবধি পালিত হচ্ছে দিবসটি।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে প্রজন্ম (মানব সংকট) উত্তরণে শিক্ষকদেও ভূমিকাকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের প্রতিপাদ্য Build the future: Invest in teachers অর্থাৎ শিক্ষকদের জন্য বিনিয়োগ উজ্জল ভবিষ্যত।

শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষককে বলা যায় শিক্ষার মেরুদন্ড। এজন্য জাতির সংকট উত্তরণে সর্বাগ্রে ভূমিকা পালন করে থাকেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এ ভূমিকা মানব সম্পদ উন্নয়নে, দেশ প্রেমিক নাগরিক গড়তে আর প্রশিক্ষিত মানুষ তৈরিতে। এজন্যই উন্নত, কাংখিত আর বানচিত ভবিষ্যত গড়তে এবার প্রাধান্য দিয়েছে শিক্ষক বিনিয়োগে । শিক্ষক বিনিয়োগ বা শিক্ষকের জন্য বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগ যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে আবার শিক্ষক পালনে ও । মানে শিক্ষদের সম্মানী এবং জীবন ধারণ উপযোগি বেতন। বিশ্ব যখন শিক্ষকতায় বিনিয়েগে প্রস্তুত। আর শিক্ষকরাও প্রস্তুত উজ্জল ভবিষ্যৎ উপহার দিতে। বাংলাদেশের শিক্ষকরা তখন সংকটে। উদ্বিগ্ন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে। বেচে থাকার চিন্তাই তাদের মূখ্য।

আমাদের দেশে মোট শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা কত? এর সাম্প্রতিক কোন হিসাব নেই। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া অছে ২০০৫ সালের তথ্য। সে তথ্য মতে বাংলাদেশে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ, ৩ কোটি শিক্ষার্থী ও ৯ লক্ষ শিক্ষক রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকশত বেসরকারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং এনজিও পরিচালিত প্রায় ৫০ হাজার উপানুষ্ঠানিক প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্ক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।

বাংলাদেশে শিক্ষক বিনিয়োগের চিত্র কেমন। আমরা বাজেটের কথা ধরি, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবারের সরকারসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বার্ষিক বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যদিও বলাচলে এটি বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এক ভাগ করলে শিক্ষা অবকাঠামো, শিক্ষার্থী, গবেষণা ইত্যাদির পর শিক্ষকদের অংশ আর কীই থাকে।

আজ যারা শিক্ষকতায় আসেন তারা প্রথমত এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে অগ্রসর হন। ফলে মেধাবী, যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে স্বল্প আয়ের একটি পেশায় যাওয়ার প্রেষণা প্রথমেই ফুরিয়ে যায়। অনেকে বাধ্য হয়ে নিয়োজিত হলেও কাজে জব সেটসফেকশান আসেনা। কর্মে অতৃপ্তি নিয়ে শিক্ষকতা যিনি করবেন, তিনি কখনোই মানসম্মত শিক্ষক হতে পারেননা।

অবশ্য ব্যতিক্রম ও রয়েছে। অনেকে শিক্ষকতাকে নেন মহান পেশা হিসেবে। তিনি শিক্ষকতাকে নিছক চাকরী মনে করেননা। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার মহতি চেতনা ও উপলব্ধি থেকেই তিনি শিক্ষাদানের পবিত্র দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হন।
তবুও বাস্তবতা বলে কথা। একেতো শিক্ষকদের বেতন জীবন ধারণের জন্য আদৌ উপযোগি নয় তারওপর আবার নেই পদোন্নতি। শিক্ষকদেও মধ্যে অধিকাংশই বেসরকারি শিক্ষক। যাদের নেই পদোন্নতি,নেই চাকরির নিরাপত্তা নেই কোন প্রশিক্ষণ। আর আবাসিক ব্যবস্থাতো স্বপ্নাতীত। তারা পাননা কোন উৎসব ভাতাও। এভাবেই চলছে তাদেও দিন।

আবার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী মুখের দেখা মিললেও তাদের নেই কোন সামাজিক মর্যাদা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রী নিযে এখানে প্রবেশ করলেও মর্যাদায় তারা তৃতীয় স্থানীয়। ৩০/৩৫ বছর একই পদে চাকরী করে পদোন্নতিহিীন অবস্থায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অবসরে যান। অথচ তার সহপাঠী অন্য পেশায় একই যোগ্যতা নিয়ে পদোন্নতি নিয়ে মর্যাদার উচচাসনে সমাসীন হয়।

এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের কথা বলা যায়। যারা পান জাতীয় স্কেলের সর্বোচ্চ বেতন-২৪ হাজার ৫০০ টাকা। তাদেও অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত। অধ্যাপকটি যদি তিন সন্তানের জনক হন, সন্তানদেও শিক্ষিত করেন এবং ৪০ বছর চাকরীর পর অবসর নেন তা হলে তাদেও বেতন বাবদ ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় তা পারবেননা। তাকে ঋণ করতে হবে ৯৮ লাখ টাকা। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। শিক্ষকরা ফাকি দিচ্ছে ক্লাসে। ঝুকছেন টিউশনি আর কোচিংএ। বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষকরা যাচ্ছেন প্রাইভেটে। ব্যাহত হচেছ শিক্ষা কার্যক্রম। এসবের পেছনে কারণ একটাই বিনিয়োগ।

এজন্যে শিক্ষকদের জন্য বিনিয়োগ আবশ্যক। পাশাপাশি দক্ষ, যোগ্য, মেধাবীরা যাতে এখানে আসেন সে ব্যবস্থা করতে হবে।২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের স্বপ্ন। ২০১৪ সালের মধ্যে ১০০ ভাগ সাক্ষরতা আমাদেও লক্ষ্য। আর ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ(পিআরএসপি কৌশল মতে) আমাদের পরিকল্পনা। এসবই উজ্জল ভবিষ্যতের হাতছানিএগুলো বাস্তবায়নে বাড়াতে হবে শিক্ষকদেও জন্য বিনিয়োগ। আমাদের তবেই সার্থক হবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস।।।

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।