
নিরক্ষরতা মানুষের জীবনের প্রাত্যহিক জরুরি প্রয়োজন মেটানোর পথে বাধা হলেও সাক্ষরতা কার্যক্রম প্রকল্প ও দিবসে বন্দি হয়ে পড়েছে।
বিষয়টির চিন্তা আরও উস্কে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমানের সাম্প্রতিক এক ‘ফেসবুক স্ট্যাটাস’। আমার এ শিক্ষক যথার্থই লিখেছেন, ‘বিস্ময়কর ও বেদনাদায়ক হলেও সত্য, যে জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সৃষ্টি করেছে, সে জাতির কোটি কোটি মানুষ পড়তে ও লিখতে পারে না!’ এটা লজ্জারই বিষয়, যে বাংলা ভাষা আমাদের এত আবেগ-অনুভূতির জায়গা; দেশের অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ সে বাংলার আবেদন অনুধাবন করতে পারছে না। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের ভাষিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাধ্যম- পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে তারা বাংলা ব্যবহার করতে পারে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিষয়টি নিয়ে সব পর্যায়ে যে ধরনের সক্রিয়তার প্রয়োজন ছিল, তাও নেই। বাস্তবতা হলো, নিরক্ষরতা মানুষের জীবনের প্রাত্যহিক জরুরি প্রয়োজন মেটানোর পথে বাধা হলেও সাক্ষরতা কার্যক্রম প্রকল্প ও দিবসে বন্দি হয়ে পড়েছে।
ভাষার মাসে সাক্ষরতার আলোচনা বইমেলার কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর বইমেলায় বাংলা ভাষায় যে হাজার হাজার বই প্রকাশ হয়; নিরক্ষর মানুষ সে বইয়ের অক্ষরগুলোর কাছে যেন অসহায়। বাংলার জ্ঞানভান্ডারের এত রস থেকে তারা বঞ্চিত। লেখকদের চিন্তার প্রতিফলন যে বইয়ের মাধ্যমে ঘটে; যে বইগুলো জাতিকে পথ প্রদর্শন করে; যে বই আলোর ইশারা দেয়- যারা পড়তে পারে না, সেগুলো তাদের জন্য যেন অন্ধকার। জাতি হিসেবে এ ব্যর্থতা আমাদেরই। দেশের অধিকাংশ নাগরিক যেখানে সাক্ষর; সেখানে একটি অংশ এতদিন ধরে আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদেরই সদিচ্ছা এবং উদ্যোগের অভাবে! প্রতিদিন যে এত আয়োজন নিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশ হয়; সাপ্তাহিক, মাসিক, ষাণ্মাসিক তথা মেয়াদভিত্তিক যে সাময়িকী প্রকাশ হয়; যারা পড়তে জানে না- এগুলো তাদের জন্য নিরর্থক কাগজ। এমনকি ফেসবুক বা মুখবইও তাদের পড়ার সুযোগ কই! বাস্তব জগতের বাইরে ভার্চুয়াল জগৎ যে মানুষের আরেকটি বিশাল জগৎ হয়ে পড়েছে; সেখানেও সবাই নিজ নিজ ভাব প্রকাশ করছে; নিরক্ষরতা তাদের সেখানে প্রবেশের পথেও সবচেয়ে বড় বাধা।
দেশে ঠিক কত কোটি মানুষ এখনও সাক্ষর নয়- তার হিসাব পেতেও আমাদের সাক্ষরতা দিবসের দিকে তাকাতে হয়। কারণ প্রশাসনের তরফ থেকে বলা চলে, ওই একটি দিনেই এ তথ্য জানানো হয়। গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে আমরা দেখেছি, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সে হিসাবে এখনও দেশে অন্তত ৪ কোটি মানুষ নিরক্ষর। Continue reading