Mahfuzur Rahman Manik
উষ্ণতার এক ফালি হাসি
জানুয়ারী 18, 2021

রথ দেখা এবং কলা বেচা- দুটোরই ইচ্ছে ছিল আমাদের। মানে, একদিকে নিঝুম দ্বীপ দেখা, অন্যদিকে সেখানকার অসহায় শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা। চাইল্ড সেন্ট্রিক ক্রিয়েটিভ সেন্টার বা ফোরসি টিম শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশে যেমন চেষ্টা করছে, তেমনি মেডিকেল ক্যাম্পসহ এসব কাজের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছে। নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার আগেই টিম ফোরসি সেখানকার স্থানীয় শিশুদের মাঝে শীতের উষ্ণতা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বছরের শেষ দিনের গোধূলিতে লঞ্চটি যখন হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়, আমাদের মানসপটে তখন ভেসে ওঠে ইন্টারনেটে দেখা নিঝুম দ্বীপের মনোহর দৃশ্য আর মায়াময় কিছু শিশুর চেহারা।

নতুন বছরের প্রথম সকালে চোখ মেলেই দেখি হাতিয়া দ্বীপ। নদীর পাড়ে ভিড়েছে লঞ্চ। চারদিকে শতব্যস্ত মানুষ। আমরাও নেমে পড়লাম। সৌন্দর্যের দিক থেকে হাতিয়ার মাধুরীও কম নয়। নিঝুম দ্বীপে শিশুদের বস্ত্র দেওয়ার চাপ মাথায় নিয়েও আমরা যাওয়ার পথে হাতিয়ায় দুটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট দেখে ফেলি। প্রথমটি কমলার দিঘি। এখানে কেবল দিঘিই নেই, আছে মনোমুগ্ধকর সৈকত। কমলার দিঘিতে একই সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত আর সুন্দরবনের আমেজ পাওয়া যাবে। সেখান থেকে আমরা যাই নিমতলী সৈকতে। এরপর মোক্তারিয়া ঘাট পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত নিঝুম দ্বীপ।

আমরা বন্দরটিলায় একটি রিসোর্টে উঠলাম। সেখান থেকে বছরের প্রথম দিন সন্ধ্যা ৭টায় নামাবাজার। নামাবাজারে গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের সহায়তায় আমরা শীতবস্ত্রের কাঙ্ক্ষিত টিকিট বিতরণ করি। সবাইকে বলা হয় পরদিন সকাল ১০টায় নামাবাজারে বিতরণ করা হবে। পরদিন যথারীতি সকাল ১০টার আগেই আমরা দেখলাম শিশুরা একে একে আসছে। হাতে টিকিট। শীতবস্ত্র বিতরণে এলাকার দুস্থদের বাছাই করাসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কেফায়েত উল্লাহ, স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন ও হাতিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শামীম। টিম ফোরসির সদস্যরা ছাড়াও শীতবস্ত্র বিতরণের সময় সৌভাগ্যক্রমে আমরা হাতিয়ার শিল্পকলা একাডেমির খুদে শিল্পীদের পাই। যারা উপস্থিত থেকে ফোরসির পক্ষ থেকে শিশু, দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে।

আমাদের সামর্থ্য কিংবা শিশুর জন্য উপহার ছিল ক্ষুদ্র। একটা কম্বল পেয়েও শিশুদের মুখে যে অমলিন হাসি আমরা দেখেছি সেটাই ছিল আমাদের প্রাপ্তি। শীতবস্ত্র বিতরণের কাজ সম্পন্ন করে আমরা একদিকে মেঘনা নদী আর তিন দিকে বঙ্গোপসাগরে ঘিরে থাকা নিঝুম দ্বীপে ঘোরাঘুরি করি, যখন সৈকতের পাড়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য ধারণ করি, যখন অরণ্যে হারিয়ে যাই, যখন মাইলের পর মাইলজুড়ে কেওড়া বনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিত্রা হরিণের খোঁজ করি, তখন শিশুদের নির্মল হাসির কথাই ভাবি।

প্রায় ৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুম দ্বীপ আমাদের সোনার সম্পদ। এখানে সমুদ্র, নদী ও খালে জাল ফেললেই মাছ ওঠে। এখানে জমিগুলোতেও সোনালি শস্য ফলে। দ্বীপটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজালে এটি যেমন বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে, তেমনি এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করলেও এখানকার সবাই মানবসম্পদ হয়ে উঠতে পারে। শীতবস্ত্র পেয়ে উষ্ণতার একফালি হাসি নয়, বরং স্থানীয় শিশুদের জন্য সেটাই এনে দিতে পারে স্থায়ী হাসি।

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।