Mahfuzur Rahman Manik
করোনা: প্রযুক্তিনির্ভর সাংবাদিকতার কাল
নভেম্বর 1, 2020

সংবাদপ্রবাহ পানির প্রবাহের মতো। একে বাঁধ দিয়ে রাখা যায় না। সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা থেমে থাকেনি। যার সর্বশেষ নজির কোভিড-১৯। করোনাদুর্যোগের মধ্যেও যখন পৃথিবী থমকে ছিলো তখন সংবাদমাধ্যম ছিলো সচল। এবং এটা জরুরিও ছিলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে কলাম লেখক সুসি বোনিফেস লিখেছেন-১ ‘সাংবাদিকতা না থাকলে করোনায় প্রাণহানি আরও বেশি হতো। তার মতে, সাংবাদিকতা না থাকলে মজুদ চলতে পারে, এমনকি লুটও হতে পারে। পুলিশ তার নতুন ক্ষমতা নিয়ে আরও উদ্দীপনার সঙ্গে ভুল করে যেতে পারে। পত্রিকায় বা সন্ধ্যার খবরে ছবি ছাপা হবে না জেনে মানুষ আরও বেশি সমুদ্রের তীরে যাবে। ফলশ্রুতিতে আরও বেশি সংক্রমণ হবে এবং আরও বেশি মৃত্যু হবে।’ বস্তুত সংবামাধ্যম কেবল সংবাদই দেয় না বরং সমস্যার সমাধানেও ভূমিকা রাখছে। আমরা দেখেছি, বিশ্বের অন্যান্য দেশে তো বটেই বাংলাদেশেও করোনার সম্মুখযোদ্ধা যারা তাদের মধ্যে সাংবাদিকরা অন্যতম। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বৈশ্বিক এ দুর্যোগে করোনায় সংবাদমাধ্যমের কর্মতৎপরতার পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক ভূমিকা পালন করে ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তি। বলাবাহুল্য বর্তমান স্বাভাবিক সাংবাদিকতাই অনেকাংশে প্রযুক্তি নির্ভর। আর করোনা বাস্তবতায় সে প্রযুক্তি আরও বেশি অনিবার্য হয়ে ওঠে। প্রযুক্তির কল্যাণে করোনার পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কীভাবে সাংবাদিকতার অভিযোজন ঘটে এবং সংবাদমাধ্যমের ভবিষ্যতই বা কী ইত্যাদি এ প্রবন্ধের প্রয়াস।

ঘরে বসে অফিস
করোনার এ সময়ে সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে যুগান্তকারী বদল ঘটেছে- ঘরে থেকে অফিস করা। ধারণাটি হয়তো বিশ্বে নতুন নয় কিন্তু বাংলাদেশে এর বাস্তব রূপ আমরা এ সময় দেখেছি। দুর্যোগে আবদ্ধ ঘরে থাকা মানুষের জরুরি চাহিদার মধ্যে খবর অন্যতম। ঘরে বসে থাকলেও মানুষ খবর চায়, কোথায় কী হয়েছে সেটা জানতে চায়। সংবাদমাধ্যমও দেশ-বিদেশের সংবাদ প্রদান করে তার দায়িত্ব নিরলসভাবে পালন করেছে। এ সময়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের অধিকাংশই ঘরে থেকে অফিস করেছে। কেউ অফিসের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও সফটওয়্যারে কাজ করছেন কিংবা ই-মেইলসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে নির্দেশনা নিয়ে, কাজ সম্পন্ন করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রযুক্তির কল্যাণে বড় কোনো ঝামেলা ছাড়াই সুন্দরভাবে ঘরে চলেছে অফিস কার্যক্রম।
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমে কর্মীদের করোনা সতর্কতার জন্য এপ্রিল থেকে পদক্ষেপ নেয়। বিশ্বের অন্যন্য দেশ তার আগ থেকেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ‘দ্য জার্নালিস্টস চেঞ্জিং রোলস ডিউরিং দ্য করোনাভাইরাস আউটব্রেক’২ (করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাংবাদিকদের পরিবর্তিত ভূমিকা) শিরোনামের প্রতিবেদনে এসেছে, ১৩ মার্চ থেকেই পত্রিকাটির সকল সাংবাদিককে ঘরে বসে অফিস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও বড় বড় প্রায় সকল গণমাধ্যমের অধিকাংশ কর্মীই কাজ করেছেন ঘরে বসে। কোথাও শিফট অনুসারে ঘরে বসে কিংবা মাঝে মাঝে অফিসে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। কেউ আবার কিছু কর্মীকে অফিসে রেখে বাকীদের থেকে ঘরের সেবা গ্রহণ করেছে। বস্তুত প্রযুক্তির এ সময়ে এটি খুবই সম্ভব। সংবাদমাধ্যম বিশেষ করে সংবাদপত্রের কথা বললে অফিসের কাজ জরুরি সকল বিভাগের সমন্বয়ের জন্য। প্রযুক্তি এ সমন্বয়ের কাজ করছে। কেউ দূরে থাকলেও তাকে কাছে এনে দিচ্ছে। বাসায় ইন্টারনেট লাইনসহ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হলেই সংবাদপত্রের ডেস্কের কাজ করা সম্ভব। কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজন হলে মোবাইলে কিংবা অনলাইনে তা নেওয়া সম্ভব।
তবে কিছু কাজ রয়েছে যেটা ঘরে থেকে কাভার করা যায় না। সেক্ষেত্রেও করোনার সময় প্রযুক্তি তা ঝুকিমুক্তভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে। ডয়েচেভলে বাংলা বিভাগ এপ্রিলের শেষ দিকে ‘করোনায় সাংবাদিকতা’ ৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, টেলিভিশন সাংবাদিকদের কেউ কেউ বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে এখন লম্বা বুম ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ বাইরে দূরত্ব বজায় রেখে যাতে কারো মন্তব্য নেওয়া যায় সেজন্য বুমটা যথেষ্ট লম্বা করা হয়েছে।

বাসা যখন স্টুডিও
করোনার মধ্যে সাংবাদিকগণ বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিকদের একেকটা স্টুডিও কিংবা নিউজরুম হিসেবে কাজ করেছে। আমরা দেখেছি, টিভি টকশো যারা পরিচালনা করেন ঘর বসেই অতিথিদের সংযুক্ত করছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমলেও কিংবা মিডিয়া হাউজ খুলে দিলেও এখনও কোনো কোনো চ্যানেলে এটি চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে দ্য ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া (ইনমা) ‘দ্য পটেনশল ইম্প্যাক্ট অব ওয়ার্ক-ফ্রম -হোম অন নিউজরুমস’ (নিউজরুমের ওপর ঘরে থেকে কাজের প্রভাব ) শিরোনামে একটি গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৪। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র তুলে ধরা হলেও আমাদের জন্যও প্রাসঙ্গিক। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে থেকে কাজ কার্যকর। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজের গুণগত মান আরও ভালো হয়।
করোনার সময়ে কেবল সংবামাধ্যমের স্টুডিও-ই নয়, আমরা দেখেছি ঘরে অসংখ্য স্টুডিও গড়ে উঠেছে। টিভি চ্যানেলের মত অনলাইনের মাধ্যমে স্ট্রিম ইয়ার্ড, জুম ইত্যাদি ব্যবহার করে ফেসবুক ও স্যোশাল মিডিয়ায় লাইভ টকশো, আলোচনা অনুষ্ঠান চলছে। সে ট্রেন্ড আমরা এখনো দেখছি। এর ভালো বা মন্দ ভিন্ন আলোচনা কিন্তু মানুষ একটি প্লাটফর্ম পেয়েছি। টিভি-চ্যানেলে না হোক অন্তত নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বিকল্প মাধ্যমে তৈরি করে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মত না হোক অন্তত নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছে। একইসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে, করোনাবাস্তবতায় যখন মানুষ আবদ্ধ, যখন বাইরের সামাজিক সকল অনুষ্ঠান বন্ধ তখন অনলাইনে ভার্চুয়ালিই মানুষ তার বিকল্প তৈরি করে নিয়েছে। নানা বিষয়ে সভা-সেমিনার তো বটেই, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্সের মত আয়োজন অনলাইনে হচ্ছে।
করোনাভাইরাস যেমন ঘরকে মিডিয়া হাউসের বিকল্প হিসেবে তৈরি করেছে একইসঙ্গে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের পথও খুলে দিয়েছে। আগে টিভি টকশো আয়োজনের ক্ষেত্রে অতিথিদের অফিসে আসা-যাওয়ার সময় লাগতো, যানবহন লাগতো আর অনলাইনে হওয়াতে সহজেই উপস্থাপক বাসা বসে সবাইকে একত্রিত করছেন। অতিথিগণও বাসা থেকে এমনকি দেশে বাইরে থেকেও যুক্ত হচ্ছেন। পৃথিবীকে একটি গ্রামের মত, গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দাদের একত্রিত করেছে প্রযুক্তি। এখানে প্রযুক্তি থাকলে হাজার হাজার মাইল দূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেউ আপনার সামনে হাজির হচ্ছে, আবার প্রযুক্তিহীন পাশের ফ্ল্যাটেরজনও যেন অনেক দূরে। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকগণ সে সুযোগকেই করোনার সময়ে কাজে লাগিয়েছে।

অনলাইন ব্রিফিং
আগে যেসব সংবাদ সংগ্রহের জন্য কিংবা যেসব সাংবাদিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সাংবাদিকদের স্পটে যাওয়া লাগতো করোনাভাইরাসের মধ্যে ‘অনলাইন ব্রিফিং’ এর কারণে সংবাদিকরা অনলাইনেই সে সংবাদ পেয়ে যান। দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে জরুরি সংবাদ ছিলো করোনার আপডেট। আমরা দেখেছি ৮ মার্চ প্রথম করোনারোগী শনাক্তের দিন থেকেই এ অনলাইন সংবাদ ব্রিফিং শুরু হয়। করোনাভাইরাস নিয়ে প্রথম ব্রিফিং আয়োজন করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ব্রিফিং করতেন। এরপরে তাঁর পরিবর্তে মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা (প্রশাসন) নিয়মিত ব্রিফিং শুরু করেন। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থের সংখ্যা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের অনলাইন ব্রিফিং ছিলো দেশের করোনাসংক্রান্ত তথ্যের বলাচলে একমাত্র উৎস। প্রতিদিন দুপুর আড়াইটার ওই সংবাদসম্মেলনের জন্য সাংবাদিকরা তো বটেই সাধারণ মানুষও অপেক্ষা করতেন। অবশেষে পাচ মাস পর ১১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই অনলাইন ব্রিফিং বন্ধ করে দেয় সরকার।
করোনসংক্রান্ত অনলাইন প্রেসবি্িরফং এর পাশাপাশি আমরা দেখেছি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সকল সংবাদসম্মেলনই অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা দেখেছি এ বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দেশ যখন কার্যত ‘লকডাউনে’ তখন দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব এবং উত্তরণে সরকারের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রায় সবগুলো বক্তৃতাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেল থেকেও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। জঙ্গিবিরোধী অভিযান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‌্যাবকে সরাসরি সম্প্রচার করতে দেখা গেছে। সেখান থেকেও সাংবাদিকরা তথ্য নিতে পারে। সেটা ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে। এমনকি বিরোধীদল বিএনপিরও অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অনলাইন সংবাদ সম্মেলনও আমরা দেখেছি মে মাসের গোড়ার দিকে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ও ন্যামের সভাপতি ইলহাম আলিয়েভের সভাপতিত্বে অনলাইন শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ন্যামের সদস্য দেশগুলোর অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও অংশ নেন। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও অংশ নেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন সংবাদের উৎস
করোনাকালে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সংবাদের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তবে অস্বীকার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন সংবাদ পাওয়া গেছে তেমনি পাওয়া গেছে অনেক গুজবও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে মানুষের হাতে কাছে এখন অনেক তথ্য। এর মধ্যে কোনটি গুজব আর কোনটি সত্য - এটি নিণয় করা অনেকেরই সম্ভব হয় না। মার্চ মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গুজব ছড়ায় যে থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না। একজন পীরের বরাত দিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে এই গুজব ছড়ায়। ফলে হাজার-হাজার মানুষ থানকুনি পাতা সংগ্রহ করতে নেমে যায়। বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু মহামারির সাথে পরিচিত নয়, সেজন্য নানা রকম ভয় এবং উদ্বেগ থেকেই এমন তথ্য ছড়ায়। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই গত আড়াই মাসে ৯০ টি ভাইরাল খবর যাচাই করে তারা দেখ গেছে সেগুলো সত্য নয়।
এটা কেবল বাংলাদেশেই নয় বিশ্বজুড়েই আমরা দেখেছি। চলতি বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে করোনাভাইরাস নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ৭০ লাখ পোস্ট সরানোর কথা ফেসবুক। যেখানে করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং করোনার ভুয়া চিকিৎসাবিষয়ক পোস্ট রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ষষ্ঠ কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস এনফোর্সমেন্ট রিপোর্টের অংশ হিসেবে এই ডেটা প্রকাশ করেছে ফেসবুক ৫। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সংবাদের উৎস হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে ভুয়া খবর কিংবা গুজবও মেইনস্ট্রিম সংবাদমাধ্যমের খবর হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে সেটা হয়েছেও। আমরা দেখেছি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে যথেষ্ট ভুয়া সংবাদ প্রচার হয়েছে।

প্রিন্টের চেয়েও অনলাইনের কদর
করোনোর সময়ে আমরা দেখেছি ছাপা সংবাদপত্রের চেয়েও অনলাইনের কদর বেড়েছে কয়েক গুণ। শুরুর দিকে খবরের কাগজের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় বলে গুজব ওঠে। যদিও খবরের কাগজের মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, প্যাকেটজাত কোন পণ্যের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। আর যেহেতু খবরের কাগজ পুরোপুরি যান্ত্রিকভাবে উৎপাদিত হয়ে প্যাকেটজাত হয় এবং প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে খোলা হয়, তাই খবরের কাগজ থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সিইও ই জে উইলকিনসন এ বিষয়ে একটি ব্লগ পোস্ট করেছেন। তিনি বলছেন, ‘বিশ্বের কোথাও এখন পর্যন্ত সংবাদপত্র, চিঠি বা অন্য কোন কাগজের মাধ্যমে এই ভয়াবহ ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তারপরও এ সময় প্রায় সকল সংবাদপত্রেরই সার্কুলেশনে ব্যাপক ধস নামে। অন্যান্য দেশেও একই চিত্র স্পষ্ট। বিবিসি তার এক প্রতিবেদনে ইংল্যান্ডের কথাও বলেছে ৬। দেশে প্রায় সবাই সীমিত কলেবরে পত্রিকা প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র মালিকদের একটি সংগঠন নোয়াবকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাঠক ধরে রাখার প্রয়াস চালাতে দেখা গেছে। এ সময় অনলাইনের ওপর মানুষের ঝোঁক আগের চেয়ে বেড়েছে। সবার হাতেই এখন মোবাইল, মোবাইলেই খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকারও এখন অনলাইন ভার্সন পাওয়া যায়। অনলাইন গণমাধ্যমগুলো যেহেতু তাৎক্ষণিক নিউজটা দিতে পারছে সেজন্য পাঠাকেরাও অনলাইনের দিকেই ঝুঁকছে। অনলাইনে দেখা গেছে, একটা খবর বারবার শেয়ার হচ্ছে এবং দ্রুত সেটি লাখো মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে।
অনলাইনের এ যুগে প্রযুক্তি-নির্ভর সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। আজ যেখানে মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন। মানুষ যেমন খবরটি পড়তে চায় তেমনি তা শুনতে চায়। আর একসঙ্গে শোনা ও দেখার ব্যবস্থা হলে তো কথাই নেই। এজন্য আমরা দেখছি প্রত্যেকটি সংবাদমাধ্যমই অডিও-ভিজুয়াল এর দিকে নজর দিচ্ছে। সংবাদপত্রের ছোট্ট কলেবরে অনেক কিছুই দেওয়া যায় না। সেটিই অনলাইণ সংস্করণে বিস্তারিত দেখা যায়। সংবাদপত্রের পাঠক নিশ্চয়ই থাকবে। যারা সকালটা ঝকঝকে পত্রিকার ঘ্রাণে আর ধোয়া ওড়ানো চায়ে পার করতে চান। যারা পত্রিকা পাতা থেকেই খবরের বিশ্লেষণ পড়তে চান। পড়ার অভ্যাসে সংবাদপত্রই তার কাছে অনন্য। তবে বাস্তবতা অনেক কিছু বদলে দেয়। করোনা যেমন বদলে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের প্রচলিত ধরন-ধারণ।

  1. https://www.mirror.co.uk/news/politics/without-journalism-coronavirus-would-kill-21846297
  2. https://www.nytimes.com/2020/04/03/reader-center/the-journalists-changing-roles-during-the-coronavirus-outbreak.html
  3. https://www.dw.com/bn/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE/g-53179404
  4. https://www.inma.org/report-detail.cfm?pubid=211
  5. https://www.reuters.com/article/us-facebook-content-idUSKCN25727M
  6. https://www.bbc.com/news/entertainment-arts-52299925

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ- পিআইবির গণমাধ্যম সাময়িকী নিরীক্ষার ২৩২তম সংখ্যায় প্রকাশিত

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।