Mahfuzur Rahman Manik
'মানুষমারা' বদলে 'মানুষগড়া'
আগস্ট 10, 2020

মানুষ গড়া যে বিদ্যালয়ের কাজ, তার নাম মানুষ মারা হয় কীভাবে! বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কেবল নির্দিষ্ট সিলেবাস সম্পন্ন করতেই যায় না, একই সঙ্গে জীবন গড়ার শিক্ষা নিতেও যায়। সেখানে একটি বিদ্যালয়ের নাম 'মানুষমারা' হওয়া বিস্ময়করই বটে। সেটি নিয়ে সমালোচনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই অবশেষে নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার 'মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'-এর নাম এ বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে দিয়েছে 'মানুষগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'। এভাবে নাম পরিবর্তন কিংবা নাম সংশোধনের বিষয়টি নতুন নয়। মানুষ, স্থান, স্থাপনা কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা পারিপার্শ্বিক নানা কারণেই পরিবর্তন হয়ে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রকম প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কিছু স্থানের নাম নিয়ে সমালোচনা আমরা দেখেছি। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শ্রুতিমধুর ও সুশোভন নয় এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন কেবল 'মানুষগড়া' দিয়েই শুরু হয়নি, এর আগেও নেত্রকোনার 'ছেছড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'-এর নাম বদলে 'শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' হয়। ফলে নাম পরিবর্তনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ প্রজ্ঞাপন নতুন বিষয় নয়। তবে আগে হয়তো এ রকম কয়েকটি বিদ্যালয়ের পরিবর্তন হয়েছে; এবার সেটি ব্যাপকভাবে করার চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে শ্রুতিকটু ও অশোভন এ দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। আমরা দেখেছি, নরসিংদীর বেলাব উপজেলার 'কুকুরমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' ও রাঙামাটির 'চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছে; আবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার 'দুধ খাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের' নাম নিয়েও ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। এমন আরও নানা উদ্ভট নামের বিদ্যালয় সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে আছে। যেগুলো সত্যিই শ্রুতিকটু ও অশোভন; কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই আমরা সেটি বুঝতে পারি। তার পরও এখন যেহেতু ব্যাপক মাত্রায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে সাবধান ও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। নাম সাধারণত ব্যক্তি, স্থান বা ইতিহাস কেন্দ্র করে করা হয় বলে এমন যেন না হয়- কোনো বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হয়। আবার যেহেতু সংশ্নিষ্টদেরই বিকল্প নাম পাঠানোর কথা বলা হয়েছে; খেয়াল রাখতে হবে নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাপক অবদান রেখেছেন বা বিশিষ্ট কারও নাম বা স্থানের নাম কিংবা ঐতিহ্য বিচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব বিতর্ক এড়ানোই শ্রেয়।
কোনো কিছুর নাম পরিবর্তন করলে সাইনবোর্ড, নথিপত্রসহ সব জায়গায়ই তা পরিবর্তন করতে হয়। এখানে খরচেরও ব্যাপার থাকে। যথাসম্ভব কম ব্যয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মধ্যেই কল্যাণ। আগে যে ক'টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলো যেমন সহজেই করা গেছে, এখনও সে প্রক্রিয়াই অবলম্বন করা দরকার। এটি যেন অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামই নয় দেশের অনেক স্থান এমনকি উপজেলার নাম নিয়েও অভিযোগ রয়েছে, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই শ্রুতিকটু ও অশোভন। সেসব নিয়েও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ উদ্যোগের ফলে সেগুলো আবার নতুন করে সামনে এসেছে। সেসব নিয়েও ভাবা যেতে পারে।

বলাবাহুল্য নামেই সবকিছু নয়। একসময় আমরা 'পঁচা' সাবানের বিজ্ঞাপনে দেখেছি, 'নামে নয় গুণে পরিচয়'। আবার অনেক নাম আছে বাস্তবের সঙ্গে তার মিলও নেই। যেমন 'ঢাকা' শহর কার্যত একটি খোলা নগরী। তার পরও কিছু নাম একেবারেই এড়ানো যায় না। আর সেগুলো যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নাম হয় তা মেনে নেওয়া যায় না। সুযোগ পেলে নাম নিয়ে নাক সিটকানোর কাজ অনেকেই করতে ছাড়েন না। তাতে সংশ্নিষ্টরা বিব্রত হয় বৈকি! সে জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে স্বাগত জানাতেই হবে। এ ভালো উদ্যোগ যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, সেটিই প্রত্যাশা।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।