Mahfuzur Rahman Manik
ট্রাম্পের নোবেল আবদার
সেপ্টেম্বর 27, 2019

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার নিয়ে যা বলেছেন, তাকে কেবল আবদারই বলা যায় না বরং নোবেল না পাওয়ায় তিনি একে প্রশ্নবিদ্ধও করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, নোবেল পুরস্কার পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠু হলে অনেক কিছুতেই তিনি নোবেল পেতেন। তিনি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামাকে কেন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো, তা তিনি নিজেও জানতেন না।

ট্রাম্প বিষয়টি কতটা সিরিয়াসলি বলেছেন, বোঝা মুশকিল। তবে ট্রাম্পের আচরণ আসলে এমনি। তিনি এমন কথা বলবেন, সেই কথায় লোকে হাসছে; অথচ তিনি কিন্তু হয়তো তার মনের কথাই বলে ফেলেছেন। ২০১৭ সালের শেষ দিকে একবার ট্রাম্প বলেছিলেন, তার আইকিউ রেক্স টিলারসন (তার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী) থেকে বেশি। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ারও আগে ২০১৩ সালে তিনি এক টুইটে বলেছিলেন, তার আইকিউ বারাক ওবামা ও জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকেও বেশি। আমরা জানি না, ট্রাম্পের আইকিউ বেশি কি-না। তবে কমন সেন্সের বিষয়টি বলাই বাহুল্য। অবশ্য কমন সেন্স বা কাণ্ডজ্ঞানের ব্যাপারটা ট্রাম্পের সঙ্গে কতটা যায়, সেটাই প্রশ্ন। যে বিষয়টিকে আমরা মনে করি, জনসমক্ষে বলা মানায় না, ট্রাম্প সেটা থোড়াই কেয়ার করেন। সেটাকে ট্রাম্পের স্টাইল না বলে রাজনীতি বলাই বোধহয় অধিক যুক্তিযুক্ত।

ট্রাম্প হয়তো চান লোকজন তার কথা নিয়ে মাতামাতি করুক। তিনি মানুষের আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন। থাকছেনও বটে। যেমন তার নোবেল সংক্রান্ত কথার সূত্র ধরে বিশ্বের প্রায় সব উল্লেখযোগ্য মাধ্যমে সংবাদ হয়েছে। মানুষের ব্যক্তিক আলোচনায়ও এসেছে বিষয়টি। যেমন ফেসবুকে এক কবি লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলে সাহিত্যে নোবেলটা আমিই পাব। আরেকজন লিখেছেন, যদি ট্রাম্প নোবেল পায়, তাহলে আমার দোষ কি?

ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি অনেক কিছুতেই নোবেল পান। কী কী বিষয়ে পান? নোবেল পুরস্কার যে ছয়টি বিষয়ে দেওয়া হয়। পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য কিংবা অর্থনীতি বিষয়ে তার বিশেষ কোনো অবদান আছে বলে আমরা জানি না। বাকি রইল কেবল শান্তি। আমরা জানি, থিওডর রুজভেল্ট, জিমি কার্টার ও উড্রো উইলসন, বারাক ওবামা অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট যারাই নোবেল পেয়েছেন, সবাই পেয়েছেন শান্তিতে। সে অর্থে ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার পেলে কেবল শান্তিতেই পেতে পারেন। কিন্তু শান্তি রক্ষায় তার অবদান কী। তাকে অনেকেই চেনেন যুদ্ধবাজ হিসেবে। ২০১৮ সালের শুরুতে নতুন বছরে একবার উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দেন যে, সবসময়ই পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম থাকে তার টেবিলে। প্রত্যুত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে যা লেখেন (বাংলা করলে দাঁড়ায়), "উত্তর কোরিয়ার নেতা একটু আগেই বলেছেন, 'সবসময় পারমাণবিক অস্ত্রের বাটন তার টেবিলে থাকে।' আমারও একটি পারমাণবিক বোতাম রয়েছে, যেটি তারটির চেয়েও বড় ও শক্তিশালী। আর বোতামটি কিন্তু যথার্থ অর্থেই কাজ করে!"

ট্রাম্পের এ টুইটই তার মনোভাব বলে দেয়। সত্যিকারার্থে ট্রাম্পের আচরণ অনেকেই নানাভাবে বিশ্নেষণ করেছেন। এমনকি ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখনই এ প্রশ্ন উঠছিল- প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ট্রাম্প মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত। ট্রাম্পের বিচিত্র কাণ্ডকারখানা, একগুঁয়েমি ও কথা বলার এমন এক ভঙ্গি মার্কিন রাজনীতিকেই বদলে দিয়েছে। এ বিষয়ে মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফ বই লিখেছেন, 'ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি :ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস'।

এখন দেখার বিষয় নোবেল কমিটি কী করে। তারা যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মানসিকতা পোষণ করে, তাকে নিশ্চয়ই নোবেলের জন্য মনোনীত করবে। সময়ই তা বলে দেবে।

ট্যাগঃ , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।