Mahfuzur Rahman Manik
একাত্তরের যুদ্ধশিশু
ডিসেম্বর 17, 2018

যুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যতম ছিল নারী নির্যাতন। এর ফলে জন্ম নেয় যুদ্ধশিশু। আমাদের মহান বিজয় দিবসে শহীদদের সঙ্গে বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদেরও স্মরণ করি। কারণ যুদ্ধশিশু নিজেরাই মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য দলিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধশিশুদের নিয়ে আলোচনা কমই দেখা যায়। এমনকি যারা এ নিয়ে গবেষণা করেছেন, তারাও যুদ্ধশিশুর সংখ্যা, অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে সরকারি তথ্য-উপাত্ত যথেষ্ট পাননি। ফলে তাদের স্বীকৃতির ব্যাপারটিও জোরালোভাবে সামনে আসেনি। উল্টো যেটা ঘটেছে, অনেক সময় যুদ্ধশিশুরা বিদেশ থেকে আমাদের দেশে ঘুরে যায়; যেন তারা 'অপরিচিত'।

১৩ ডিসেম্বর সমকালে 'যুদ্ধশিশুদের কে দেবে স্বীকৃতি' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর আগের দিন জাতীয় জাদুঘরে এ-সংক্রান্ত আলোচনা সভায় বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। সভায় আলোচকরা যথার্থই বলেছেন, যুদ্ধশিশু বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। সুতরাং তাদের স্বীকৃতি দেওয়াসহ তারা কে কোথায় রয়েছেন, তা জানা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক যুদ্ধশিশুকেই দেশের বাইরে দত্তক দেওয়া হয়। যুদ্ধশিশু ঠিক কতজন ছিল, তা নিয়ে সঠিক তথ্য নেই। তবে উইকিপিডিয়ায় এ সংখ্যা ১০ হাজারের কথা এসেছে। বাংলাদেশের যুদ্ধশিশুদের দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম এগিয়ে আসে কানাডা। মাদার তেরেসা ও তার মিশনারিজ অব চ্যারিটির সহকর্মীদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দুটি কানাডীয় সংগঠন দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। এভাবে বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে।

বলাবাহুল্য, একাত্তর সালের যুদ্ধশিশু এখন কিন্তু শিশু নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বয়সও ৪৭ বছর। তাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে নানাভাবে হয়তো প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন দেশে থাকলেও তাদের মূল কিন্তু বাংলাদেশেই। তাদের অনেকেই নিশ্চয় নিজের 'মা'কে চেনে না। দেশে এলে জননী বা বসতভিটার দেখা পাওয়ারও কথা নয়। সেটা তাদের জন্য বেদনার বিষয়ই বটে।তবে তাদের জন্য বলা প্রয়োজন- গোটা দেশই তাদের। দেশের যে কোনো ঘরকেই তারা নিজেদের ঘর ভাবতে পারে। আর আমরাও তাদের জন্য এগিয়ে আসতে পারি। যেমনটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিত নারীদের 'বীরাঙ্গনা' উপাধি দিয়ে নিজ বাড়িকে তাদের 'ঠিকানা' বলে জানিয়েছিলেন। এখন তাদের স্বীকৃতি থাকলে, প্রত্যেকের পরিচয় প্রশাসনের কাছে থাকলে তাদের ঠিকানাগত সমস্যা হতো নিশ্চয়ই।

তবে আমরা বলি, সে যুদ্ধশিশুরা এখন যেহেতু ছোট নয়, তারা নিজেরাই সংগঠিত হতে পারে। কোন কোন দেশে তাদের মধ্যে কারা আছে, তা বের করা হয়তো কঠিন নয়। তারা সংগঠিত হলে, তাদের বিশেষ সংগঠন থাকলে নিজেদের মধ্যে যেমন যোগাযোগ-পরিচয় ঘটবে, একই সঙ্গে স্বীকৃতির জন্যও তারা সরকারের কাছে দাবি জানাতে পারবে। এ ব্যাপারে অন্যরাও এগিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধকালে বা পরে যুদ্ধশিশুদের বিষয় প্রশাসনিকভাবে দেখেছেন। কিংবা পরবর্তী সময়ে তাদের নিয়ে গবেষণা করেছেন।

যুদ্ধশিশু নিয়ে বই লিখেছেন কয়েকজন। অনেকেই গবেষণা করেছেন, কাজ করেছেন তাদের নিয়ে। এখন তারা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি পেলে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে তাদের সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধশিশুদের নিজেদের সংগঠন থাকলে এ কাজ সহজ হবে।

ট্যাগঃ , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119