Mahfuzur Rahman Manik
মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াই
ডিসেম্বর 10, 2018

মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক ও নির্বিঘ্ন জীবনযাপন আমাদের অধিকার। এটাই মানবাধিকার। মানবাধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা যেমন আমাদের সংবিধান দিয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও নানা উদ্যোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার বিষয়টি আসবে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যেই ১৯৪৮ সালে তৎকালীন বিশ্বনেতৃবৃন্দ মানবাধিকারের অসাধারণ এ দলিল রচনা করেন। আজ বিশ্বব্যাপী তারই ৭০ বছর পালিত হচ্ছে। মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘ এ বছর সমতা, ন্যায় ও মানব মর্যাদার পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্বে প্রতিনিয়ত নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দেশেও মানবাধিকার পরিস্থিতি তথৈবচ। আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তার ওয়েবসাইটে সংবাদপত্রের হিসাব অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে। তাতে ২০১৭ সালে দেখা যাচ্ছে, হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৪১৩। এর বাইরে আলাদা করে শিশুহত্যা ২৩১। এ ছাড়া ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতার মাধ্যমে (সংখ্যাটি যথাক্রমে ৬০৫, ২৯৯, ৫৪০) মানবাধিকার যেমন লঙ্ঘিত হয়েছে, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শাস্তি, গুম, নিখোঁজ, অপহরণ, শ্রমিক মৃত্যু ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যাও স্পষ্টভাবে (যথাক্রমে ১৯৮, ১৫৪, ২২, ৫১, ২৩৩, ১৬৫ ও ১৪০) এসেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা একেকটা শিউরে ওঠার মতো। সংখ্যা যা-ই হোক, আমরা মনে করি, প্রতিটি ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেভাবে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা ভয়ঙ্কর। আর এখানে শুধু সংবাদমাধ্যমে যা এসেছে তা-ই দেখানো হয়েছে। এর বাইরেও যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আবার আমরা যদি মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা দেখি, তাতে আরও অনেক বিষয় যোগ হবে, যেখানে মানবাধিকার ঠিকভাবে রক্ষা হচ্ছে না। যেমন শিক্ষার অধিকার এখনও সবার জন্য নিশ্চিত হয়নি; মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে রয়েছে নানা বাধা; ধর্ম ও বর্ণের কারণে বৈষম্যও রয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয়-সামাজিক নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য, চিকিৎসাসেবাও সবার জন্য নিশ্চিত হয়নি।

বিশ্বব্যাপী দেখলে, যুদ্ধাক্রান্ত বিভিন্ন দেশে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এক সিরিয়ার যুদ্ধেই কয়েক বছরে নিহতের সংখ্যা পাঁচ লাখ। আজ রোহিঙ্গারা নিজ দেশেই পরবাসী। জীবন বাঁচাতে তাদের বিপুল অধিকাংশের আশ্রয় এখন আমাদের দেশে। ফিলিস্তিনে মানুষ মারা যাচ্ছে, ইসরায়েল মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে প্রতিনিয়ত। ইয়েমেনে হামলায় বেসামরিক মানুষের হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে অপুষ্টিতে ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হবে- এ আশঙ্কা সেভ দ্য চিলড্রেনের। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ৭৩ বছরে বিশ্বব্যাপী খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উঠে এসেছে। তাতে বলা হচ্ছে, যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে তিন কোটি মানুষ হত্যা করেছে দেশটি।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করছি। দিবসটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের ঘোষণার কথা। এসব বিষয় যদি সব রাষ্ট্র আমলে নিয়ে তার নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হতো, তাতে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটত। আমাদের দেশেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও নানা ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমাদের নির্বাচন সন্নিকটে। আমরা চাই ভবিষ্যতে যাতে সব নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা হয়, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সেদিকে নজর রাখবেন। নির্বাচনের পরপর সংখ্যালঘু ও বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর নির্যাতনের মতো খারাপ ঘটনার নজির আমরা দেখতে চাই না। মানবাধিকারের পক্ষে আমরা দাঁড়াই, ব্যক্তিগতভাবে অন্যের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হই।

সমকাল সম্পাদকীয় বিভাগে প্রকাশিত, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮
ই-সমকাল হতে দেখুন
ছবি: অনলাইন

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119

Warning: First parameter must either be an object or the name of an existing class in /home/mahfuzma/public_html/wp-content/plugins/bit-form/includes/Admin/Form/Helpers.php on line 119