Mahfuzur Rahman Manik
'স্বার্থপর' দম্পতি
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে পরিকল্পনা প্রয়োজন

পৃথিবীতে সবাই একা আসে, একা যায়ও বটে; তারপরও কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে প্রত্যেকটি মানুষ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক কাজই মানুষ একাকী করতে পারে না। অন্যজনের সাহায্য লাগে এবং অপরের সাহায্যেও এগিয়ে যাওয়া লাগে। এভাবেই মানুষের মাঝে বন্ধন তৈরি হয় সমাজে-রাষ্ট্রে। একজন আরেকজনের সেবায় যত এগিয়ে যায়, তিনি ততই মহৎ উপাধি পান। পরোপকারী মানুষের কথাই কবি বলেছেন- 'সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।' এর বিপরীত চরিত্রের মানুষই স্বার্থপর। যারা কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। সমাজ-দেশ-দশের জন্য ভাবে না, কাজ করে না। স্বার্থপরের ইংরেজি সেলফিশ। বুধবার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান জাপানের এক খবর দিয়েছে। শিরোনাম- চাইল্ডলেস কাপলস আর 'সেলফিশ' সেইজ জাপানিজ পলিটিক্যাল চিফ অর্থাৎ জাপানের প্রবীণ রাজনৈতিক বলেছেন, সন্তানহীন দম্পতিরা 'স্বার্থপর'।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল তোশিহিরো নিকাই অবশ্য সেসব দম্পতিকে বলেছেন, যারা সন্তান নিতে ইচ্ছুক নয়। তিনি অধিক সন্তান নেওয়ার ওপর জোর দেন। বলা বাহুল্য, সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে জোর তৎপরতার কারণ হলো দেশটিতে জনসংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দেশটিতে গত বছর জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা ৯ লাখ ৪১ হাজার, যা ১৮৯৯ সাল থেকে তথ্য রেকর্ডে সর্বনিম্ন। বলা যায়, ১২ কোটি ৭০ লাখের অধিক জনসংখ্যার দেশ জাপানে এক বছরে শিশু জন্মেছে প্রায় সাড়ে নয় লাখ। ইন্টারনেট ঘেঁটে আমাদের গত বছরের তথ্যটি পাওয়া না গেলেও এ বছরের প্রথম দিনের তথ্য জানা গেছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল তথা ইউনিসেফ এক হিসাবে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি ৮৩৭০ জন শিশু জন্ম নিয়েছে। এ সংখ্যাকে আমলে নিলে গড়ে আমাদের ৩০ লাখের অধিক শিশু জন্মগ্রহণ করে। আমাদের জনসংখ্যা অবশ্য ১৬ কোটি ৬০ লাখের ঊর্ধ্বে।

আমাদের জনসংখ্যা আর জাপানের জনসংখ্যার চিত্র বিপরীত। পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে জাপানের জনসংখ্যা দশ লাখেরও বেশি কমে গেছে। সেখানে এর প্রভাব পড়ছে পুরো জাতির ওপর। কেননা, এতে বাড়ছে বৃদ্ধ মানুষের হার, কমে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২১০০-এর মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা আরও ৮৩ মিলিয়ন কমে যাবে এবং নাগরিকদের ৩৫ শতাংশেরই বয়স হবে ৬৫।

এমতাবস্থায় জাপানে কোনো দম্পতি সন্তান নিতে ইচ্ছুক না হলে তা স্বার্থপরতারই অংশ। এ জন্য সরকার জনসংখ্যা বাড়াতে পরিকল্পনা নিচ্ছে। যদিও সেখানকার বাস্তবতা ভিন্ন। জাপানে নারীরা একটু বেশি বয়সে বিবাহন্ধনে আবদ্ধ হন। অনেকে সন্তান নেওয়াকে ঝামেলা মনে করেন।

বিশ্বে যখন জনসংখ্যার বিস্ম্ফোরণ, সাড়ে সাতশ' কোটি জনসংখ্যার পৃথিবীতে যখন আমরা জনসংখ্যা কমাতে পরিকল্পনা করছি, তখন জাপনাসহ কিছু দেশ জনসংখ্যা বাড়াতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও সন্তান বেশি হলে রাষ্ট্রের তরফ থেকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন, তখন জনসংখ্যা নেওয়াই সমাজের উপকার। জনসংখ্যা যে সম্পদ তা তারা ভালো করেই বুঝছেন। ফলে আমাদের জনসংখ্যাকেও জনসম্পদে পরিণত করতে পরিকল্পনা প্রয়োজন। আমাদের তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একটি দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠুক, এতে দেশের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।

ট্যাগঃ , , , ,

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।