ভারতবর্ষের প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের অভিশংসন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে লেখক ও দার্শনিক এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে কথা বলা কঠিন আর চুপ থাকা অসম্ভব।’ আর আসামের ক্ষেত্রে এটা এমন নয় যে, ঘটেছে বরং অবধারিতভাবেই ঘটানো হয়েছে। কিংবা ঘটানোর প্রক্রিয়ায় ছিল। গত দশকে যেটা ঘটে গেছে, তাকে আমাদের চারদিকের অবস্থার আলোকে বোঝা দরকার। বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের আসামের নাগরিক নিবন্ধন বা এনআরসি ও তার রাজনীতির দিকে তাকাতে হবে।
আসামে আজ যা ঘটছে, তা বুঝতে ২০১৭ বা ২০১৮ সালের ঘটনাপ্রবাহ থেকে শুরু করলে হবে না, এ ক্ষেত্রে ১৯৮৩ সালের রক্তাক্ত সন্ত্রাসী ঘটনার কথা বলতে হবে, অথচ ওই ঘটনা কেউই স্মরণ করতে চান না।
যা হোক, ১৯৪৬ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আসামের রাজনীতিতে যখন কংগ্রেস প্রভাবশালী ছিল, তখন কংগ্রেসের বাঙালি সেটলারদের মধ্যে এক বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যারা সেখানে বিশ শতকের গোড়ার দিকে এসেছিল। এখন যে অভিবাসনের কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে নতুন বিষয় নয়, সেটাও প্রায় শত বছর আগের বিষয়। সে সময় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়া হয়, তাদের থাকার জন্য ভূমি দেওয়া হয় এবং এর ফলে তারা কংগ্রেসকে ভোট দেয়। এর বিপরীতে জনপ্রিয় মত হলো, এগুলো রাজনৈতিক বা ক্যাডার বাহিনী দ্বারা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং রাজস্ব কর্মকর্তারা অভিবাসীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
আমাদের সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে অবশ্য জীবনধারণ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত আসামের দাঙ্গায় যাদের পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছেন, তারা কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাননি। তবে যারা পাঁচ হাজার করে ভারতীয় রুপি পেয়েছেন, তা ছিল সেসব মানুষের জন্য অপমানস্বরূপ, যারা তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের হারায়। তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করা হয়, এমনকি সেসব মানুষ বৃদ্ধ বয়সে এসেও আদালতে মামলা চালাচ্ছে।